Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Eco Friendly

দূষণের বাজার

আমেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে প্রথম প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হইয়াছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ১০:০৭
Share: Save:

ভারতীয় কৃষিতে নিঃশব্দে একটি বিপ্লব আসিবার প্রাথমিক সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে। একটি ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা হইতেছে, যেখানে কৃষকরা তাঁহাদের উদ্বৃত্ত কার্বন ক্রেডিট বিক্রয় করিতে পারিবেন। অর্থাৎ, পরিবেশবান্ধব কৃষির মাধ্যমে তাঁহারা যদি স্বাভাবিক স্তরের তুলনায় কম গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন করেন, অথবা এমন ব্যবস্থা করেন যাহাতে পরিবেশে থাকা গ্রিনহাউস গ্যাস শোষিত হয়, তবে কৃষকরা কার্বন ক্রেডিট অর্জন করিবেন। তাত্ত্বিক ভাবে, সেই পরিবেশবান্ধব কৃষির বিভিন্ন পথ আছে। জলবায়ু অনুসারে ফসল উৎপাদন, নিখুঁত পরিমাণে নাইট্রোজেন প্রয়োগ, অপ্রয়োজনে মাটি না খোঁড়া, ফাঁকা জমিতে বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি। যে সব সংস্থার উৎপাদন ব্যবস্থা কার্বন-নিবিড়, তাহারা কৃষকদের নিকট হইতে এই ক্রেডিট ক্রয় করিবে। ফলে, এক দিকে পরিবেশে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকিবে; অন্য দিকে, পরিবেশবান্ধব কৃষির পথে হাঁটিবার জন্য কৃষকরাও আর্থিক ভাবে পুরস্কৃত হইবেন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু দেশে এই ব্যবস্থা হইয়াছে। এই বাজারব্যবস্থাটি লইয়া আলোচনাও বিস্তর হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে দুইটি প্রশ্ন আছে। এক, এই বাজারের কেন্দ্রে যে নজরদারির প্রয়োজনীয়তা, তাহা কি আদৌ সম্ভব? এবং দুই, কার্বন বাণিজ্যের তুলনায় কার্বন কর কি একটি স্বচ্ছতর ও গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত অস্ত্র নহে?

আমেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক দেশে প্রথম প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হইয়াছে। সম্পূর্ণ সদুত্তর মিলিয়াছে, বলিলে অনৃতভাষণ হইবে। এই ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হইল, এই ব্যবস্থাটিকে কার্যকর করিবার জন্য বিপুল নজরদারির কাঠামো প্রয়োজন। কৃষকের সহিত যদি কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের চুক্তি হয়, পরিভাষায় যাহাকে বলে অ্যাবেটিং, তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাব রাখিতে হইবে যে, অন্যতর পদ্ধতিতে চাষ করা হইলে কত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসৃত হইত। অন্য দিকে, যদি চুক্তি হয় পরিবেশে থাকা কার্বন শোষণের ব্যবস্থা করিবার, পরিভাষায় যাহাকে বলে সিকোয়েস্টারিং, তবে দেখিতে হইবে, যে কার্বন শোষিত হইতেছে, তাহা যেন কোনও ক্রমেই বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়া না আসে। এমনকি বৃক্ষরোপণের মতো আপাত-সরল প্রক্রিয়াও এক জটিল নজরদারি পরিস্থিতির সৃষ্টি করিতে পারে। অতীতে এক খ্যাতনামা ব্যান্ড তাহাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাইতে দক্ষিণ ভারতের এক অঞ্চলে দশ হাজার আম গাছ লাগাইয়াছিল। কিন্তু, কিছু দিনের মধ্যেই সেই গাছের অর্ধেক মরিয়া গেল, এবং প্রয়াসটিও অংশত জলে গেল। বাজারটি কতখানি জটিল, তাহা বুঝিবার জন্য একটি অন্য উদাহরণও দেওয়া যায়— কিছু কাল পূর্বে এক আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা কৃষিক্ষেত্র হইতে কয়েক কোটি কার্বন ক্রেডিট কিনিতে মনস্থ করিয়াছিল। শেষ অবধি দুই লক্ষ ক্রেডিট কিনিয়াই তাহাদের ক্ষান্ত দিতে হইল।

বৃহত্তর তর্কটি হইল, কার্বন ট্রেডিংয়ের তুলনায় কার্বন ট্যাক্স কি স্বচ্ছতর এবং সহজতর পন্থা নহে? দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রতিটি সংস্থা তাহাদের উৎপাদনের হিসাবে কার্বন নিঃসরণের জন্য কর প্রদান করে। সেই ব্যয়ের হিসাব মাথায় রাখিয়াই সংস্থা উৎপাদনের পরিমাণ স্থির করে। এই ক্ষেত্রে নজরদারির কাজটিও সহজ— করবাবদ আদায় করা অর্থকে পরিবেশের কাজে ব্যবহার করাও সহজ। এবং, সংস্থাগুলিরও প্রণোদনা থাকে সবুজতর প্রযুক্তির পথে হাঁটিবার। সেই লক্ষ্যে বিনিয়োগ হইতে পারে, এবং তাহার ইতিবাচক অতিক্রিয়ার মাপটি নেহাত ছোট নহে। স্পষ্ট ভাবে বলা প্রয়োজন যে, কিছুই না করিবার তুলনায় কার্বন ট্রেডিংয়ের বাজার তৈরি করা ভাল। কিন্তু, তাহাই শ্রেষ্ঠ বিকল্প কি না, সেই তর্কটি চালাইয়া যাইতে হইবে। প্রক্রিয়াটি যে ভারতে শুরু হইতেছে, তাহার তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Eco Friendly Farmers Carbon Credit Score
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy