Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Amazon

সুরক্ষার দায়

তাহারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করিবে। কিন্তু বিপুল অঙ্কের এই জরিমানা যে বার্তাটি বিশ্বের নিকট পাঠাইল, তাহার মূল্য কম নহে

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ০৫:১৬
Share: Save:

জরিমানা হইল অ্যামাজ়নের। টাকার অঙ্কটি সামান্য নহে, ৬৫৮৭ কোটি টাকা। তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করিবার এমনই কঠোর শাস্তি ধার্য করিয়াছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তথ্যসুরক্ষা কর্তৃপক্ষ, লুক্সেমবার্গে অবস্থিত ‘সিএনপিডি’। ২০১৮ সালে তথ্যসুরক্ষা বিধি (জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন) বলবৎ হইবার পরে এযাবৎ এই জরিমানাই সর্বাধিক। ইউরোপের তথ্যসুরক্ষা বিধি অনুসারে, কোনও বাণিজ্যিক সংস্থার বার্ষিক আয়ের চার শতাংশ অবধি জরিমানা করা যাইতে পারে। এই কঠোরতার অর্থ, তথ্যসুরক্ষা বিধি লঙ্ঘনকে গুরুতর অপরাধ বলিয়া গণ্য করা হইতেছে। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি দাবি করিয়া থাকে যে, তাহারা উপভোক্তাদের তথ্য ব্যবহার করে কেবল পরিষেবা আরও উন্নত করিবার জন্য। অন্য কোনও উদ্দেশ্যে তথ্য ব্যবহার হইতে তাহারা স্বেচ্ছায় বিরত থাকে। কিন্তু বার বার এই অভিযোগ উঠিয়াছে যে, ওই সংস্থাগুলি ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাকে নানা ভাবে নস্যাৎ করিয়াছে; কখনও বা তৃতীয় কোনও সংস্থাকে তথ্য বিক্রয় করিয়াছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করিয়া ‘কেমব্রিজ-অ্যানালিটিকা’ নামে একটি সংস্থা আমেরিকার নির্বাচনে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন বাড়াইবার চেষ্টা করিয়াছিল। তবে বাণিজ্যিক কারণেই তথ্যের অপব্যবহার অধিক হইয়া থাকে— উপভোক্তাদের অনলাইন ক্রয়বিক্রয়ের তথ্য অন্যায় ভাবে ব্যবহার করিয়া বাজারের প্রতিযোগিতায় অসাম্য তৈরি করিবার অভিযোগ নানা সংস্থার বিরুদ্ধে উঠিয়াছে বার বার। তিন বৎসর পূর্বে এক ফরাসি অসরকারি সংস্থা অ্যামাজ়নের বিরুদ্ধে এমনই কোনও বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করিয়াছিল।

অ্যামাজ়ন অবশ্য অভিযোগ মানে নাই। তাহারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করিবে। কিন্তু বিপুল অঙ্কের এই জরিমানা যে বার্তাটি বিশ্বের নিকট পাঠাইল, তাহার মূল্য কম নহে। যে কোনও ব্যক্তির বা সংস্থার তথ্যের উপর একান্ত অধিকার তাহারই। দ্বিতীয় কোনও সংস্থা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে তাহা ব্যবহার করিতে পারে। চুক্তির শর্তগুলি অলঙ্ঘনীয়। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যতীত অপর কোনও কাজে সেই তথ্যের ব্যবহার কঠোর শাস্তির যোগ্য। সমস্যা এই যে, অনলাইন পরিষেবার উপভোক্তারা অধিকাংশই চুক্তির শর্তগুলি বিশদে না পড়িয়া সম্মতি দান করেন। তাঁহাদের পক্ষে দীর্ঘ ও জটিল নথি পড়িবার ও বুঝিবার কাজটি কঠিন— সেই সময়ও সকলের নাই। ইহার সুযোগ লইতেছে অনেক বাণিজ্যিক সংস্থা। তৎসহ, সম্পূর্ণ অনৈতিক ভাবে চুক্তি-বহির্ভূত নানা কাজও করিতেছে। বিশেষত, অতিবৃহৎ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি তাহাদের অর্থ ও প্রভাবের শক্তিতে জাতীয় স্তরের বহু নিয়ম অগ্রাহ্য করিতেছে। কেবল উপভোক্তার সতর্কতা যথেষ্ট নহে, প্রয়োজন আইন, এবং তাহার কঠোর প্রয়োগ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাহাই করিতেছে।

ভারতে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়াছে, যাহার অংশ তথ্যের গোপনীয়তা। ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ লোকসভায় পেশ হইয়াছে, কিন্তু আইন পাশ হয় নাই। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। নানা সরকারি পরিষেবায় আধার আবশ্যক হওয়ায় ডিজিটাল মাধ্যমের উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়িতেছে। অথচ, এই বিপুল সংগৃহীত তথ্যের অপব্যবহার প্রতিরোধের কোনও শক্তিশালী অস্ত্র নাগরিকের হাতে নাই। উন্নত দেশগুলিতে যে অপরাধ ঘটিতেছে, ভারতে তাহাও ঘটিতেছে। পাঁচ লক্ষ ভারতীয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হইতে তথ্য চুরি করিয়াছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। যথাযথ আইন না থাকিলে অপরাধ প্রতিহত করা যাইবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Amazon European union
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy