ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হইতে শুরু করিয়া সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের নানা প্রতিনিধি প্রবল পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনিতেছেন। একটি উচ্চ আদালত মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের প্রতি অবহেলার দায়ে তীব্র এবং রূঢ় ভাষায় কঠোর তিরস্কার করিতেছে। দীর্ঘ দিন যিনি প্রাতিষ্ঠানিক কৌঁসুলির কাজ করিয়া আসিতেছেন তিনি ‘এখন আর মূল্যবোধের সহিত মিলাইতে পারিতেছি না’ বলিয়া পদত্যাগ করিতেছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রবলপ্রতাপান্বিত কর্তারা নির্ঘাত ভাবিতেছেন: এ বড় সুখের সময় নয়। অনেক দিন ধরিয়াই এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ। তবে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সেই অভিযোগ এক ভিন্ন মাত্রা অর্জন করিয়াছে। প্রশ্ন উঠিয়াছে: গণতন্ত্রের স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করিবার ভার যাহার হাতে, সেই নির্বাচন কমিশন কি কেন্দ্রীয় সরকারের তথা শাসক দলের স্বার্থরক্ষী হিসাবেই কাজ করিতেছে? পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রশ্ন যে বিপুল আকার ধারণ করিল তাহার ছায়া এখনও ঘনঘোর।
মনে রাখিতে হইবে, নির্বাচন কমিশনের গঠন ও ভূমিকার ভিতরেই তাহার কর্তব্যচ্যুতির আশঙ্কা নিহিত আছে। এক দিকে নির্বাচনের সময় কমিশনের হাতে বিপুল প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকে, এবং অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের কাজটি দুঃসাধ্য। ইহার কোনওটিই অকারণ বা অযৌক্তিক নহে। নির্বাচনের আয়োজন ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের হাতে ছাড়িয়া দিলে পক্ষপাতিত্ব এবং অনাচারের আশঙ্কা প্রবল হইয়া উঠিতে পারে, এই কারণেই কমিশনের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকা দরকার। অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষা লইয়াই এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ক্রমশ বাড়ানো হইয়াছে। তেমনই আবার, কমিশনের পরিচালকদের স্বপদে বহাল থাকিবার যথেষ্ট নিরাপত্তা যদি না থাকে, শাসকের মর্জির উপর যদি তাঁহাদের কাজের মেয়াদ নির্ভর করে, তাহা হইলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিবার সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইতে পারে। কিন্তু সমস্যাও দেখা দেয় এইখানেই। পদের নিরাপত্তা এবং ক্ষমতার মাত্রা, দুইই ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা বাড়াইয়া দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই একাধিক বার প্রশ্ন উঠিয়াছে, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করিবার ব্যবস্থাটির সংশোধন আবশ্যক কি না। বস্তুত, তিন দশক আগে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যা এক হইতে বাড়াইয়া তিন করিবার পিছনে এই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুক্তিকেই বড় করিয়া দেখানো হইয়াছিল, বলা হইয়াছিল এক জন আধিকারিকের হাতে এত বেশি ক্ষমতা থাকিলে স্বৈরাচারের সম্ভাবনা বাড়ে।
কিন্তু এখন যে অভিযোগ প্রবল, তাহা নির্বাচন কমিশনের চালকদের নিজস্ব স্বৈরাচারের অভিযোগ নহে, কেন্দ্রীয় সরকারের শাসকদের অঙ্গুলিহেলনে চলিবার অভিযোগ। এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠিতে পারে, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করিবার পূর্ণ অধিকার যদি সরকারের হাতে থাকে, তাহা হইলে অনুগত জনদের কমিশনের চালকের আসনে বসাইবার সম্ভাবনা বাড়িয়া যায় না কি? বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চালকরা আনুগত্যের প্রতিমূর্তি কি না, তাহা তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের চালকরা স্পষ্টতই সেই আনুগত্য আদায় করিতে ব্যগ্র। এই কারণেই নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগের বিষয়ে নূতন করিয়া ভাবা দরকার। প্রসঙ্গত, কমিশনার মনোনয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিপত্য রদ করিয়া সরকার, বিরোধী দল এবং সুপ্রিম কোর্টের সমবেত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাঁহাদের নিয়োগের প্রস্তাব এক কালে শোনা গিয়াছিল। ইহাও লক্ষণীয় যে, সেই সংশোধনের অন্যতম প্রধান প্রস্তাবক ছিলেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। নরেন্দ্র মোদী অবশ্য এই প্রশ্নেও তাঁহার ‘গুরু’র কথা শুনিতে চাহিবেন বলিয়া কোনও ভরসা নাই। তিনি দুইটি মন্ত্র জানেন: আধিপত্য এবং আনুগত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy