গোটা দুনিয়া যখন মন্দার আশঙ্কায় দিন গুনছে, তখন ফার্স্ট অ্যাডভান্স এস্টিমেটস জানাচ্ছে যে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি। তা হলে কি ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে? গোটা দুনিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে ভারতের অবস্থা, অন্তত আপাত ভাবে, বেশ ভাল, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আপাত ভাবে, কারণ বৃদ্ধির হার অনুপাতমাত্র— গত বছরের তুলনায় এ বছর আয় কতখানি বাড়ল। কোভিডের ধাক্কায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ৭ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল; সেই অতি নিম্ন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৭ শতাংশ। এ বছর যদি সত্যিই ৭ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটে, তা হলেও সেই হিসাবটি দাঁড়ায় কোথায়? প্রাক্-কোভিড শেষ অর্থবর্ষ ২০১৯-২০’তে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ১০০ টাকা হলে এ বছরের ৭ শতাংশ বৃদ্ধির পরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০৮ টাকার সামান্য বেশি। অর্থাৎ, কোভিড হানা না দিলে ২০২০-২১ সালে ভারত যেখানে দাঁড়াত, দু’বছর পরে সেখানে পৌঁছনো গিয়েছে।
কিন্তু, তার পরেও বলতে হয় যে, অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা ভাল। করবাবদ আদায়ের পরিমাণ নেহাত কম নয়। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণও লক্ষ্যসীমায় রয়েছে। কিন্তু, চিন্তার কারণও বিলক্ষণ রয়েছে। প্রথমত, মূল্যস্ফীতির হার না বাড়িয়ে আর্থিক বৃদ্ধি সম্ভব, অর্থমন্ত্রীকে এমন রাস্তার সন্ধান করতে হবে। যদিও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কঠোর মুদ্রা নীতি মূল্যস্ফীতির হারকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির চাপ কখন কোন দিকে বাঁক নেয়, বলা মুশকিল। দ্বিতীয় সমস্যা হল, এ বছর যদিও রাজকোষ ঘাটতির হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু আগামী অর্থবর্ষে আয়বৃদ্ধির হার নিম্নগামী হলে রাজকোষ ঘাটতিও বাড়বে। ফলে, এই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীর হাতে রাজকোষ-পরিসর যতখানি, আগামী বছর তা না থাকারই সম্ভাবনা। তৃতীয় আশঙ্কা হল, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় জোর নেই। কোভিডের কারণে চাকরি হারানো, আয় কমা, আর্থিক অসাম্য ইত্যাদি সেই সমস্যাকে বাড়িয়েছে। চতুর্থ আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থা উদ্বেগজনক। চালু খাতে ঘাটতির পরিমাণ বিপুল ভাবে বাড়ছে।
আশঙ্কার বৃহত্তম কারণ: কার্যত এই বাজেটের পরেই ভারতে শুরু হয়ে যাবে নির্বাচনের মরসুম। কর্নাটক-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, বিজেপির কাছে যার গুরুত্ব বিপুল। তার পর লোকসভা। ফলে, অর্থমন্ত্রীর হাতে যে ‘ফিসক্যাল স্পেস’-টুকু রয়েছে, তা দিয়ে ভোটের মন্দিরে ভেট চড়ানো হবে, এমন আশঙ্কা আছেই। এখানেই বিচক্ষণতার প্রশ্ন। ভোটারের মন জেতার খেলায় না নেমে অর্থমন্ত্রী যদি এক দিকে কল্যাণ অর্থনীতির খাতে, এবং অন্য দিকে মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যয়বরাদ্দ করার চেষ্টা করেন, তা ভারতের পক্ষে লাভজনক হতে পারে। এই মুহূর্তে ভারতের হাতে যে আপেক্ষিক সুবিধা রয়েছে, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার না করলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে বিশেষ সময় লাগবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy