Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Sustainable Development Goals

অধরা

যে নেতারা বিশ্বমঞ্চে একত্রে বসে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছেন, তাঁরাই স্বদেশে ফিরে বৈষম্যে ক্রমাগত ধুঁয়ো দিলে আর কী বা করার থাকে!

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩১
Share: Save:

আটটি বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেননি। কবি নন, এ কথা বলছেন খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি-জেনারেল। ‘কেউ’ অর্থাৎ বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানেরা, এই সময়ের বিশ্বনেতারা। ২০১৫ সালে একত্রে বসে মোট সতেরোটি ক্ষেত্রের ১৪০টি নির্দিষ্ট বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন এঁরা নিজেরাই, ঠিক হয়েছিল পরবর্তী পনেরো বছরে অর্থাৎ ২০৩০-এর মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছবেন তাঁরা। এই লক্ষ্যগুলিকে একত্রে বলা হয়েছিল সাসটেনেব্‌ল ডেভলপমেন্ট গোল বা সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য। বিশ্বকে ক্ষুধামুক্ত করা, অসাম্য কমিয়ে আনা, বিশ্বের প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুলশিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গসাম্যে পৌঁছনো, পৃথিবীবাসী যেন পরিষ্কার জল, উন্নত স্যানিটেশন, যথাসাধ্য সাশ্রয়ী প্রযুক্তি-পরিষেবা পায় সে দিকে নজর দেওয়া, এবং অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মহাবিপদের মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করা। সম্প্রতি, ২০২৩-এ প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশ্বের নিয়ন্তারা ডাহা ফেল। এই মুহূর্তে পৃথিবী যে ভাবে ‘এগোচ্ছে’ তাতে ২০৩০-এ সাতান্ন কোটিরও বেশি মানুষের জীবন কাটবে চরম দারিদ্রে, প্রায় সাড়ে আট কোটি শিশু স্কুলের দরজা অবধি পৌঁছবে না। আর লিঙ্গসাম্য? সে আসতে এখনও আনুমানিক ২৮৬ বছর!

কেন পৃথিবীর এই দুরবস্থা, রাষ্ট্রনেতাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে কেন এই দুস্তর ফারাক? প্রধান কারণটি প্রাকৃতিক— কোভিড অতিমারি শুধু স্মরণকালের মধ্যেই নয়, ইতিহাসেরও সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য-বিপর্যয় হয়ে গোটা বিশ্বের সমাজ-অর্থনীতি নাড়িয়ে দিয়েছে। স্রেফ বেঁচে থাকাটুকু যখন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, জীবনযাপনের মানোন্নয়ন নিয়ে ভাবনা সেখানে বিলাসিতা। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে স্পষ্ট, গত তিন দশকে বিশ্বে বৈষম্য দূর করার কাজ যত এগিয়েছিল, করোনায় তা জোর ধাক্কা খেয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলি। কিন্তু এ তো একটিমাত্র কারণ, বাকিগুলি মানবসৃষ্ট তথা রাজনৈতিক নেতাদের তৈরি— যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, নানা দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের বদল, বিপজ্জনক ভাবে এক দিকে ঝুঁকে থাকা রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি। এই সব কিছুই থাবা বসিয়েছে বিশ্ববাসী সাধারণের জীবনে; যুদ্ধ ও মানবাধিকার ভঙ্গের জেরে আজ ঘরছাড়া এগারো কোটি মানুষ, খাদ্যপণ্যের দাম এত বেড়েছে যে, না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছে গত ২০০৫ সালের পরে সর্বোচ্চ বিন্দুতে।

যে নেতারা বিশ্বমঞ্চে একত্রে বসে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছেন, তাঁরাই স্বদেশে ফিরে বৈষম্যে ক্রমাগত ধুঁয়ো দিলে আর কী বা করার থাকে! রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, রাষ্ট্রনেতাদের ঠিক করা ১৪০টি লক্ষ্যের মাত্র ১৫% আছে ঠিক পথে, অর্ধেকেরও বেশি অবস্থা মোটামুটি থেকে বেশ খারাপ; ৩০% লক্ষ্য কোনও অগ্রগতির চিহ্নমাত্র দেখেনি— এর মধ্যেই আছে দারিদ্র, ক্ষুধা, জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলি। আগামী সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বিশ্বের নেতাদের এই ‘রিপোর্ট কার্ড’ সামনে রেখে কথা হবে নিশ্চয়ই, কিন্তু বিশ্বের বিপদঘণ্টা যে এরই মধ্যে নাগাড়ে বেজে চলেছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এখনও সাতটি বছর সামনে, তাঁরা কিছুমাত্র কথা রাখলে একটু হলেও আলো আসবে। তা না হলে একুশ শতকের বিশ্ব ডুবে যাবে সভ্যতার ঘোরতর সঙ্কটে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE