আমেরিকার কানসাস প্রদেশে গণভোটে দেখা গেল ভোটদাতাদের প্রায় ৬০ শতাংশই গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। অনেক দূর দেশে ঘটলেও ব্যাপারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ: গত জুনের শেষে দেশের সুপ্রিম কোর্ট যেখানে ১৯৭৩ সালের যুগান্তকারী ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায়সূত্রে দেওয়া গর্ভপাতের অধিকারকে ফিরিয়ে নিয়েছে, নাগরিকেরা যে সেখানে স্পষ্টতই অন্য রকম ভাবছেন— এই ঘটনার একটি সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য আছে। কানসাস একটি রিপাবলিকানপন্থী ও রিপাবলিকান-শাসিত প্রদেশ, নীতিগত ভাবেই গর্ভপাতের অধিকারের বিরোধী, এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তার নিজস্ব রক্ষণশীলতার পালে বাতাস পাওয়ায় গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে কঠোরতর আইন আনার আগে প্রদেশ-শাসকেরা গণভোট করে একটু জনস্বর বাজিয়ে নিতে চাইছিলেন— দেখা যাচ্ছে উল্টে তাঁরাই এখন বিব্রত। বিশেষজ্ঞদের মত, সামনেই আরও অনেকগুলি প্রদেশে একই রকম গণভোটে, তদুপরি আগামী নভেম্বরে দেশে মিড-টার্ম নির্বাচনেও কানসাসের এই জনরায় ছায়া ফেলবে।
তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক উত্তেজনা ও লাভক্ষতির ফিরিস্তির ও-পারে এই ঘটনা গণতন্ত্রের এক বৃহত্তর ধারণাকে স্পষ্ট করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ খুব গুরুত্বপূর্ণ, যে কোনও দেশেই সুপ্রিম কোর্ট তার সর্বোচ্চ ধারক-বাহক। প্রশাসন, আইন ও বিচারব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রধান এই তিনটি বিভাগের মধ্যেও বিচারব্যবস্থার এক বিশেষ গুরুত্ব আছে, এবং সেই হিসাবে সুপ্রিম কোর্টই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান— এই মূল ধারণাটিকে স্বতঃসিদ্ধের মতো মেনে নিয়েও বলা যায়, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রতিটি প্রদেশের এই যে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব সংবিধান পরিবর্তন, সংশোধন ও অনুমোদনের ক্ষমতা, গণতন্ত্রে তার অপরিমেয় গুরুত্ব বোঝা গেল কানসাসের সাম্প্রতিক ঘটনায়। খোদ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও তথাকথিত এক রক্ষণশীল প্রদেশ একটি বিষয়কে জনমত পরীক্ষার যন্ত্রে ফেলে বুঝে নিতে চাইছে, এ আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উৎকর্ষেরই প্রমাণ। যে কোনও বড় দেশের বৃহৎ ও বিচিত্র বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর গুরুত্ব বিরাট। রাজনীতি ধর্ম জাতিগোষ্ঠী জনসংখ্যা সমাজ-মানসিকতা ইত্যাদি যেখানে বিচিত্র ও বহুধাবিভক্ত, সেখানে একটা একচ্ছত্র আইন বা রায় কতটা প্রযোজ্য বা যুক্তিযুক্ত, গভীর সন্দেহ আছে। কানসাসের জনমত দেখিয়ে দিল, বিরাট বড় দেশটিতে রিপাবলিকান-অধ্যুষিত একটি প্রদেশেরও সংখ্যাগরিষ্ঠের জনমত সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের রিপাবলিকান-ভাবাপন্ন নির্দেশের বিপ্রতীপ হয়ে দাঁড়াল। গণতন্ত্রে মতদান তো শুধু দলীয় কার্যক্রম নয়, বিষয়-ভিত্তিক মতামত দানেরও উৎকৃষ্ট পরিসর, সুস্থ স্বাস্থ্যকর শাসনব্যবস্থার লক্ষণ। আমেরিকা যে এই গণতান্ত্রিক সুস্থতা সব সময় দেখাতে পেরেছে তা একেবারেই নয়; কিন্তু এমন একটি দৃষ্টান্তও যদি কোনও গণতান্ত্রিক দেশ তুলে ধরতে পারে, অন্ধ দলতন্ত্রের অনুসারী না হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা অধিকারের প্রশ্নে নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিসর তৈরি করতে পারে, তার গুরুত্ব অপরিসীম। গণতান্ত্রিক দেশগুলি যত বেশি এই গুরুত্ব বুঝতে পারবে, ততই তাদের নাগরিকের মঙ্গল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy