Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Jobs

তথ্যের কাজ

নিয়োগ বাড়াইবার, শ্রমিকের সুরক্ষা ও কল্যাণের নীতি করিবার মতো তথ্য কি রাষ্ট্রের হাতে নাই? বিবিধ সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্য-পরিসংখ্যান বেকারত্ব ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্রটি বহু পূর্বেই স্পষ্ট করিয়াছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৪
Share: Save:

কাজ নাই, কাজ নাই। দেশবাসীর প্রতি নিশ্বাসে যেন এই হতাশা ও ক্ষোভ বাহির হইতেছে। হয়তো সেই ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করিতেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করিয়াছে, ‘জাতীয় নিয়োগ নীতি’ তৈরি হইবে। নির্মাণ হইবে শ্রমিক কল্যাণ ও সুরক্ষার নীতি। সেই উদ্দেশ্যে কেন্দ্র জাতীয় সমীক্ষা শুরু করিয়াছে নিয়োগের পাঁচটি ক্ষেত্রে। তাহার একটি পরিযায়ী শ্রমিক। আইনে তাহাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ থাকিলেও, কাজে তাহা হয় নাই। বিলম্বে হইলেও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তথ্য মিলিবে, ইহা আশার কথা। তেমনই, গৃহপরিচারকের কাজে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিযুক্ত থাকিলেও ক্ষেত্রটি উপেক্ষিত। অতিমারিতে পরিযায়ী শ্রমিকের ন্যায় গৃহপরিচারিকারাও অধিকাংশ কাজ হারাইয়াছেন, বকেয়া বেতন পান নাই। অবশেষে গৃহপরিচারকের নিয়োগক্ষেত্র, যাহা ভারতে নারীশ্রমিকের এক বৃহৎ অংশের জীবিকার্জনের উপায়, আসিয়াছে কেন্দ্রের সমীক্ষার অধীনে। সমীক্ষার তৃতীয় ক্ষেত্রটি হইল পরিবহণ, যাহা ভারতের অংসগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একটি প্রধান নিয়োগস্থল। চতুর্থটি পেশাদার (প্রফেশনাল) কর্মীদের দ্বারা নিযুক্ত শ্রমিক-নিয়োগের ক্ষেত্র। পঞ্চমটি বিভিন্ন শিল্প ও সংস্থায় নিয়োগচিত্রের ত্রৈমাসিক সমীক্ষা। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী আশ্বাস দিয়াছেন, এই পাঁচটি সমীক্ষার ফলাফল সাত-আট মাসের মধ্যে ঘোষিত হইবে।

কিন্তু আশ্বাসে পৌঁছাইবার পূর্বেই সংশয় জন্মায়। নিয়োগ ও বেকারত্বের পরিস্থিতি বুঝিতে নিয়মিত সমীক্ষা কি ইতিপূর্বে হয় নাই? ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার প্রভাব ভারতের নিয়োগক্ষেত্রে কত দূর পড়িয়াছে, বুঝিতে ত্রৈমাসিক সমীক্ষা শুরু হয়। শ্রম মন্ত্রকের অধীনস্থ লেবার বুরো ২০০৯-২০১৪ অবধি আটটি পৃথক ক্ষেত্রের (বস্ত্র ও পোশাক, ধাতু, রত্ন ও গহনা, গাড়ি, পরিবহণ, তথ্যপ্রযুক্তি, চর্ম এবং তাঁত) নিয়োগচিত্র প্রতি বৎসর প্রকাশ করিয়াছে। কেন তাহা বন্ধ করিয়াছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার? ২০১৭-১৮ সালে কর্মনিযুক্তি ও বেকারত্বের উপর জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (যাহাতে বেকারত্বের ব্যাপকতা ধরা পড়িয়াছিল) প্রকাশে কেন্দ্র অনাবশ্যক বিলম্ব করিয়াছে, তাহার পরিসংখ্যানে সন্দেহ প্রকাশও করিয়াছে। প্রতি বৎসর বাজেটের পূর্বে প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষাতেও শ্রম ও নিয়োগ বিষয়ে তথ্য-পরিসংখ্যানের বিশদ আলোচনা নাই। এমনকি এই বৎসর— যখন কাজের সঙ্কট সকল মাত্রা ছাড়াইয়াছে— তাহা গুরুত্ব পায় নাই। বরং সরকারি নিয়োগের হ্রাস-বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ বন্ধ করিয়াছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আজ নিয়োগ ও বেকারত্ব লইয়া তথ্যসংগ্রহে কেন্দ্রের এমন আগ্রহ দেখিয়া আশা জাগিতে পারে, আস্থা এখনও নহে।

সংশয় আরও রহিয়াছে। নিয়োগ বাড়াইবার, শ্রমিকের সুরক্ষা ও কল্যাণের নীতি করিবার মতো তথ্য কি রাষ্ট্রের হাতে নাই? বিবিধ সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্য-পরিসংখ্যান বেকারত্ব ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্রটি বহু পূর্বেই স্পষ্ট করিয়াছে। বিশেষত মেয়েদের কর্মহীনতা যে গত কয়েক দশকের হারকে ছাড়াইয়া গিয়াছে, তাহাতে সন্দেহের অবকাশ নাই। কিন্তু প্রতিকারের সকল পরামর্শই সরকার উপেক্ষা করিয়াছে। উপরন্তু নূতন শ্রম আইন শ্রমিকের সকল প্রকার নিরাপত্তার বিধি শিথিল করিয়াছে। শ্রমিকের দুর্ভোগের তথ্য তাহাদের কাজে লাগিবে তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Jobs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy