ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষতম ব্যক্তির আকস্মিক প্রাণহানির ঘটনা সমগ্র রাষ্ট্রের জন্যই একটি বড় ধাক্কা। জেনারেল বিপিন রাওয়ত কেবল বাহিনীর সর্বোচ্চ পদটিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস)। অর্থাৎ দেশের সামরিক বিভাগের শীর্ষ সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বহন ও উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করিতেন তিনি। হেলিকপ্টার ভাঙিয়া পড়িয়া আরও এগারো জনের সহিত সস্ত্রীক তাঁহার নিধন বলিয়া দেয় যে, অভাবনীয় রকমের কোনও দুর্ঘটনার মধ্যে পড়িয়াছিল তাঁহাদের বায়ুযানটি। দুর্ঘটনা ঘটিল কেন, কী ভাবে, ইত্যাদি এখনও স্পষ্ট নহে। তথ্য যদিও বলিতেছে, অসামরিক বিমান অপেক্ষা সামরিক বিমান কিংবা হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনার সংখ্যা এই দেশে অধিক, তবে ইহাও সাধারণ বুদ্ধির কথা যে, এহেন এক জন শীর্ষব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা হইয়াছিল। বর্তমানে বায়ুসেনার যতগুলি হেলিকপ্টার আছে, তাহার মধ্যে সর্বাধিক বিশ্বস্তগুলিই ব্যবহৃত হইতেছিল। সাধারণত পরিবেশজনিত যে সকল কারণে কপ্টার-দুর্ঘটনা ঘটে, এক্ষেত্রে তেমন কোনও পরিস্থিতি ছিল কি না, তাহাও অস্পষ্ট। এ দিকে রাজধানীতে সংসদ অধিবেশন চলা সত্ত্বেও কেন এত বিলম্বে তাঁহার মৃত্যুসংবাদ সরকারি ভাবে জানানো হইল, প্রশ্ন সে বিষয়েও।
গোটা ঘটনায় দেশবাসী আপাতত গভীর ধন্দের মধ্যে। ইহা কি দুর্ঘটনা মাত্র, না কি অন্য কোনও গভীরতর ঘটনা— ইত্যাকার জল্পনা চতুর্দিকে। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা লইয়া এহেন জল্পনা-কল্পনা কূজন-গুঞ্জন একেবারেই বাঞ্ছনীয় নহে। এই অনিশ্চিতি ও অস্পষ্টতার দ্রুত নিরসন প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই এই ভয়ঙ্কর ঘটনার তদন্তে বিলম্ব বা গাফিলতি করিবে না। তবু নাগরিক সমাজের দিক হইতে দাবি রহিল— বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রশ্নাকুল দেশবাসীর কথা মাথায় রাখিয়া বুঝিয়া চূড়ান্ত সতর্কতা ও বিশেষ সক্রিয়তার সহিত তদন্ত হউক। এবং, সমধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবি— তদন্তের রিপোর্ট, অন্তত অংশত, প্রকাশ করা হউক। স্বচ্ছতা এক্ষেত্রে একটি অতি প্রয়োজনীয় শর্ত। সম্প্রতি নানা সঙ্কটের সময়ে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে সেনা-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্য করা হয় নাই। কিছু ক্ষেত্রে তাহা নিশ্চয়ই সঙ্গত ও বাঞ্ছিত। তবে জেনারেল রাওয়তের প্রাণহানি একটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র। আশা থাকিল, দেশের সরকার তদুপযোগী পদক্ষেপ করিবে।
তদন্তের সহিত আরও একটি বড় কাজ রহিয়া গেল। জেনারেল রাওয়তকে দিয়া যে সংস্কার শুরু হইয়াছিল, তাহা যাহাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, দেখিতে হইবে। নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনী, তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ঘটাইয়া এক অভিন্ন থিয়েটার কম্যান্ডের মধ্যে আনিবার প্রক্রিয়াটি সিডিএস-এর মাধ্যমে শুরু হইয়াছিল। এই কাজটির শীর্ষপদেই তিনি ছিলেন। নানা প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক অতীতে তাঁহার সহকর্মীরা কাজটিকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিধা দিয়াছিলেন। চরিত্রগত ভাবে রক্ষণশীলতায় বিশ্বাসী সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও পরিবর্তন ঘটানো সহজ নহে। সে দিক হইতে জেনারেল রাওয়তের মতো কর্মঠ সাহসিক ব্যক্তিই এই কাজের যোগ্য ছিলেন। তাঁহার উত্তরাধিকারীকে এখন একটি বড় শূন্যস্থান পূর্ণ করিতে হইবে। তবে, অনেক ক্ষেত্রেই অবশ্য তাঁহার ‘অতিরিক্ত’ সাহসিকতা, তাঁহার ‘স্পষ্ট’বাদিতা তীব্র সমালোচনার লক্ষ্য হইয়াছিল। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, চিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যখন সরকারি ভাবে প্রায় কোনও তথ্য পাওয়া যাইতেছিল না, জেনারেল রাওয়তই বারংবার নানা প্রকাশ্য মন্তব্যের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত বিতর্কের ঝড় তুলিতেছিলেন। তাঁহার বিতর্কিত কর্মময় জীবনের এমন আকস্মিক অবসান অতীব দুর্ভাগ্যজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy