Advertisement
E-Paper

অশনিসঙ্কেত

ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কটের মাঝে এক নতুন বিপদের সম্মুখীন প্যালেস্টাইনি শিশুরা— পোলিয়ো। গত অগস্টে গাজ়ায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের কথা ঘোষিত হয়, গত আড়াই দশকে যা প্রথম।

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:২১
Share
Save

আজ এগারো মাস যাবৎ, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় প্রাণটুকু বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চলছে, এবং সেই লড়াইয়ে সমানেই হারছে মানুষ। এই ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কটের মাঝে এক নতুন বিপদের সম্মুখীন প্যালেস্টাইনি শিশুরা— পোলিয়ো। গত অগস্টে গাজ়ায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের কথা ঘোষিত হয়, গত আড়াই দশকে যা প্রথম। এর সাম্প্রতিক শিকার একটি দশ মাসের শিশু। সম্পূর্ণ পঙ্গু হয়ে গিয়েছে সে। উদ্বেগের আরও কারণ— ১৯৯৯ সালে গাজ়া থেকে পোলিয়ো সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত জুলাইয়ে এই অঞ্চলের বর্জ্য জল পরীক্ষার সময়ে এই জীবাণুর খোঁজ মেলে। পোলিয়োর কারণে পঙ্গু হয়ে পড়ার পাশাপাশি মৃত্যু হয় বটে, তবে অনেক সময়েই আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে এর কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। সেই কারণেই এর প্রাদুর্ভাবের মাত্রার যথাযথ নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত পরীক্ষানিরীক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে। এই মুহূর্তে গাজ়া-য় তা প্রায় অসম্ভব, যে-হেতু স্বাস্থ্যপরিষেবা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র আশঙ্কা, এর ফলে গাজ়ার হাজার হাজার অরক্ষিত শিশুর আক্রান্ত হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

রোগের পুনরুত্থান ঠেকাতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই অঞ্চলে পোলিয়ো টিকাকরণের প্রক্রিয়া চালু করেছে। মধ্য গাজ়ায় প্রক্রিয়াটি চালু হয়ে আগামী দিনে দক্ষিণ এবং উত্তর অংশেও যাওয়ার কথা, সেখানে যে কোনও প্রকারের সহায়তা ও চলাচল এ-যাবৎ সীমিত করে রেখেছে ইজ়রায়েল। বস্তুত, আগামী চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু’দফায় গাজ়ায় দশ বছরের নীচের অন্তত ছ’লক্ষ চল্লিশ হাজার শিশুকে এই টিকা দিতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল যে, প্রথম দফা কোনও ক্রমে সম্পূর্ণ করা গেলেও দ্বিতীয় দফার সুযোগ মিলবে কি না, আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। অন্য দিকে, জ্বালানির অপ্রতুলতার কারণে টিকাগুলিকে জেনারেটরের সাহায্যে ঠান্ডা রাখার যন্ত্রে মজুত করাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে। তবে, পোলিয়োর প্রাদুর্ভাবই একমাত্র স্বাস্থ্যসঙ্কট নয়, যুদ্ধের জেরে বহু ঘরছাড়া প্যালেস্টাইনিদের আশ্রয় এখন জনাকীর্ণ অস্থায়ী ক্যাম্প, যেখানে ন্যূনতম দৈনিক সুযোগসুবিধাগুলিও অপ্রতুল। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হেপাটাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া-র মতো সংক্রামক রোগ। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হচ্ছে বহু দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষেরও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ-হেন পদক্ষেপ ইজ়রায়েলের পরিকল্পিত গণহত্যারই প্রতিফলন, যেখানে উদ্দেশ্য জীবনধারণের পক্ষে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। লক্ষণীয়, গত এগারো মাসে ৩৬টির মধ্যে ৩২টি হাসপাতালই হয় চরম ক্ষতিগ্রস্ত, নয়তো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। হত বহু স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে গাজ়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন। এর সঙ্গে ইজ়রায়েলি সেনা পর্যায়ক্রমে আঘাত হেনেছে জল ও নিকাশির উপরেও, যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের জনস্বাস্থ্যে। ফলত, যুদ্ধে নিহত হওয়া ছাড়াও এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সংক্রামক রোগে। এই নজিরবিহীন অমানবিকতা ইজ়রায়েল তুলে ধরছে বাকি বিশ্বের সামনে। স্বভূমে উদ্বাস্তু মানুষগুলির ধুঁকতে থাকা জীবনটুকুই সম্বল— যুদ্ধের পাশাপাশি সেটুকুও কেড়ে নিচ্ছে রোগজীবাণু। এর শেষ কোথায়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Polio Israel-Hamas Conflict gaza

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}