এই প্রথম বিদেশ থেকে নিয়মিত কয়লা আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক ই-দরপত্র চাইল কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল)। প্রথম দফায় আমদানির লক্ষ্য ২৪.১৬ লক্ষ টন। এবং আগামী ১৩ মাসে আরও ১.২ কোটি টন কয়লা আমদানি করতে বলা হয়েছে সিআইএল-কে। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম চড়া, ফলে দেশের বহু উৎপাদক সংস্থাই এত দিন আমদানি করা কয়লা ব্যবহারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল না। এ দিকে দেশের বাজারেও কয়লার যথেষ্ট জোগান না থাকায় ব্যাহত হচ্ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। সে ঘাটতি পূরণ করতে কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথটিই বেছেছে, যাতে তারা স্বচ্ছন্দ— জানিয়েছে, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড যে কয়লা আমদানি করবে, রাজ্য সরকারের অধীনস্থ এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা যদি তা নির্দিষ্ট হারে ব্যবহার না করে, তবে তাদের দেশীয় কয়লার জোগানও কমিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলির সামনে বিদেশি কয়লা ব্যবহার না করার কোনও রাস্তা রাখেনি কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গিয়েছে যে, এই আমদানি করা কয়লা কেনার জন্য রাজ্যগুলিকেই টাকা দিতে হবে। আমদানি করবে কেন্দ্রীয় সরকার, অথচ তার দাম জোগাবে রাজ্যগুলি, এবং সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির অমত পোষণ করার কোনও পথ খোলা রাখা হবে না— এই নীতিগত অবস্থানটির সর্বাঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অভিজ্ঞান রয়েছে।
কয়লা ঘাটতির সমস্যাটিকে অস্বীকার করতেই অভ্যস্ত ছিল কেন্দ্র। যেমন গত বছর অক্টোবরেই যখন ঘাটতি দেখা দেয়, তখন কেন্দ্রীয় সরকার উৎপাদন কমতির কারণ হিসেবে সে বছর বর্ষার সময় গুজরাত, পঞ্জাব, রাজস্থান, দিল্লি এবং তামিলনাড়ুর খনিজ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির কথা বলে। এ বছর এপ্রিলে যখন আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ভয়ঙ্কর ঘাটতির কারণে বহু রাজ্য বিদ্যুৎ ছাঁটাইয়ের কবলে পড়ে, তখন তড়িঘড়ি নানা জায়গার যাত্রিবাহী ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে মালগাড়ির সাহায্যে কেন্দ্রগুলিতে কয়লা পাঠানো হয়। এখনকার সঙ্কটের পিছনেও প্রশাসন তিনটি কারণের কথা বলেছে— এক, কোভিড-উত্তর সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে; দুই, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কয়লার আমদানি ব্যাহত হয়েছে; এবং তিন, প্রবল গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কথাগুলি মিথ্যা নয়, কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার কারণগুলি আগে থেকে আঁচ করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। অন্য দিকে, যুদ্ধের কারণে ব্যাহত আমদানির ফলে সৃষ্টি হওয়া সঙ্কট আমদানি বাড়িয়েই কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তারও ব্যাখ্যা সরকার দেয়নি।
শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখনও বহুলাংশে জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে নির্ভরশীল ভারত। অন্য দিকে, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ভারত, তা পূরণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌর, বায়ু, জল, পারমাণবিক শক্তির মতো বিকল্প শক্তি উৎপাদনের উপরে জোর দিতে হবে। সেই সূত্রে পরিকাঠামো, গবেষণা এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে হবে অবিলম্বে। হাতে সময় কম। ফলে রাজনীতির খেলা ভুলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে। বর্তমান সঙ্কটকে নতুন ভবিষ্যতের পথে হাঁটার সুযোগ হিসেবে দেখাই বিধেয়।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy