Advertisement
E-Paper

অরণ্যের অধিকার

অরণ্যনিবাসী জনজাতিদের কল্যাণের প্রতি মোদী সরকারের এই উদাসীনতা আকস্মিক নয়। ২০১৯ সালের দু’টি ঘটনা কেন্দ্রের মনোভাব স্পষ্ট করেছিল।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৪:৪৯
Share
Save

কয়েকশো শব্দের একটি বিজ্ঞপ্তি। তাতেই আদিবাসীদের হাত থেকে অরণ্যের অধিকার হৃত হওয়ার উপক্রম। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অতঃপর তাঁদের গ্রামসভার অনুমোদন না নিয়েই ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ বন ধ্বংস করতে পারবে শিল্প সংস্থা। সেই ছাড়পত্র দিতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার, অরণ্যবাসীর অধিকার সুরক্ষার দায় যার উপর ন্যস্ত করেছে দেশ। অরণ্যের অধিকার আইন (২০০৬) জঙ্গলের জমি, এবং বিধিসম্মত ভাবে আহরিত অরণ্যসম্পদের অধিকার দেয় সেই সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে, যাঁরা অরণ্যবাসী, জীবিকার জন্য অরণ্য-নির্ভর। এই আইনকে আরও পোক্ত করতে ২০০৯ সালের একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যে, যত ক্ষণ না অরণ্যবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, অরণ্যের জমি অন্য কোনও কাজের জন্য ব্যবহার করার ছাড়পত্র কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে না। সরকারের নয়া বিজ্ঞপ্তির ফলে অরণ্যবাসী মানুষদের মতামত নেওয়ার প্রাক্-শর্ত উঠে গেল। কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেলেই অরণ্য ছেদন করতে পারবে শিল্প সংস্থা। সরকারের পক্ষে যুক্তি, এই ‘সংস্কার’-এর ফলে অরণ্যবাসীর অধিকার সংক্রান্ত আইনবিধির প্রয়োগ আরও ‘সহজ’ হবে। কিন্তু কাদের কাজ সহজ হবে, কাকে বিপন্ন করবে এই আইনের শিথিলতা, সে সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তার কারণ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে অরণ্য-সংক্রান্ত আইন-বিধি সংস্কারের উদ্যোগ বার বারই এসেছে এক তরফা ভাবে। সংসদে আলোচনা হয়নি, পরিবেশ ও বন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে প্রস্তাব পেশ হয়নি, আদিবাসীদের সংগঠন বা বন সংরক্ষণের সঙ্গে সংযুক্ত নাগরিক সংগঠনগুলির বক্তব্য শোনার চেষ্টাও হয়নি।

স্বভাবতই সন্দেহ জেগেছে যে, সরকার গণতন্ত্রের নিয়ম রক্ষার তুলনায় কিছু বৃহৎ শিল্প সংস্থার স্বার্থরক্ষায় বেশি আগ্রহী। বিরোধীদের আপত্তির উত্তরে কেন্দ্র বলেছে, অরণ্যভূমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠার ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র, আর অরণ্যবাসীর অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা দেখবে রাজ্য সরকার। দায় এড়ানোর এই চেষ্টা কত দূর নির্লজ্জ, কতখানি অপরিণামদর্শী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা কার্যত চোরকে চুরি করতে বলে নিধিরাম সর্দারকে ঘর সামলাতে বলার নামান্তর। পুলিশ-আদালতে রাজ্যের সময়-অর্থ নষ্ট হবে, আদিবাসীদের ঘরছাড়া, বেরোজগার হতে হবে।

অরণ্যনিবাসী জনজাতিদের কল্যাণের প্রতি মোদী সরকারের এই উদাসীনতা আকস্মিক নয়। ২০১৯ সালের দু’টি ঘটনা কেন্দ্রের মনোভাব স্পষ্ট করেছিল। প্রথমটি হল দশ লক্ষাধিক আদিবাসী পরিবারের উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনার সম্মুখে কেন্দ্রের নীরবতা। অরণ্যের অধিকার আইন অনুসারে, বৈধ বসবাসকারী বলে সরকারি অনুমোদন পায়নি যে সব পরিবার, তাদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে, কিন্তু কেন্দ্র ছিল অবিচল। দ্বিতীয়টি হল ভারতীয় অরণ্য আইন (১৯২৭) সংশোধনে কেন্দ্রের উদ্যোগ। ওই খসড়া আইন বন দফতরের আধিকারিকদের বনের যে কোনও এলাকায় প্রবেশ, তল্লাশি, জোরপূর্বক অরণ্যবাসীদের উচ্ছেদ, এমনকি আইনভঙ্গকারীর প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা দেয়। প্রবল বিরোধিতার মুখে শেষ অবধি সরকার সংশোধনী থেকে সরে আসে, কিন্তু অরণ্যের অধিকারকে শিথিল করার চেষ্টা চলছেই। এ বছরই জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন দফতর একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলে যে, কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া এক হেক্টর পর্যন্ত অরণ্যের জমিতে আবাসন তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে। কী সেই ব্যতিক্রম, কেন বন কেটে আবাসন বানাতে আইন শিথিল করা দরকার, উত্তর মেলেনি। গণতন্ত্রের এই গভীর ঘাটতি ভারতের সমগ্র নাগরিক সমাজকে বিপন্ন করছে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের বিপদ সর্বাধিক।

forest Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।