Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Central Government

নাগরিকতার নামে

এই যে সাম্প্রতিক নির্দেশ, তার ভিত্তিটি হল ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিধি। সেই বিধি এমনিতেও প্রযোজ্য ছিল দেশ জুড়ে। তবে কিনা, এই সংবাদের মধ্যে একটি বিশেষ এবং নতুন দিক আছে।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪২
Share: Save:

রাজনীতির একটি বড় হাতিয়ার— মানুষ কী প্রত্যক্ষ করছে, অন্তত প্রত্যক্ষ করছে বলে ভাবছে, তার উপর প্রভাব বিস্তার করা। বাস্তবের থেকে বাস্তবের ধারণা বা পারসেপশন হয়তো এই জন্য রাজনীতিতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের একটি বিশেষ কারণ এই জনসাধারণের পারসেপশন-কে নিয়ে খেলা করায় শাসক দল অত্যন্ত দক্ষ। মানুষকে কী ভাবে বিজেপির লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করা যায়, তার স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে তারা সিদ্ধহস্ত। সম্প্রতি গুজরাতে নির্বাচন-ধূমের মধ্যে নাগরিকত্ব নিয়ে যে হইচই তোলা হল, তা আবার বিজেপির এই স্ট্র্যাটেজি-কর্তাদের ‘দক্ষতা’ প্রমাণ করে। নাগরিকত্বের অধিকার গত কয়েক বছর ধরেই হিন্দুত্ববাদী সমাজের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা গিয়েছে। বোঝানো গিয়েছে যে, অবাঞ্ছিত গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়কে নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বাদ দেওয়ার পদ্ধতি এবং আরও অনেক হিন্দুকে সেই অধিকারে অন্বিত করার পদ্ধতি নিয়ে বিজেপি সরকার আত্যন্তিক রকম আগ্রহী। বিষয়টি অতি জটিল, কিন্তু জটিলতার মীমাংসা না করেও বিষয়টিকে নিয়ে শোরগোল তোলা যায়, এবং সেই শোরগোলের ভিত্তিতে নির্বাচনে বিজেপির ইষ্টলাভের পথ খুলে দেওয়া যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে গুজরাতের মেহসানা আর আনন্দ এই দুই জেলায় জেলাশাসককে নাগরিকত্ব অর্পণের অধিকার প্রদান করেছে— সেই ঘটনাকে এই প্রেক্ষাপটেই বিবেচনা করা দরকার।

কেননা, প্রথমত, এত শোরগোল কিছুটা অকারণ। এর আগেও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, অন্যত্র, অন্য পরিস্থিতিতে। দ্বিতীয়ত, এ বার যে নির্দেশিকা তার সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের অতিবিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (২০১৯) অর্থাৎ সিএএ-র কোনও যোগ নেই। সেই আইন এখনও প্রয়োগ করার জায়গায় আসেনি নানা পদ্ধতিগত জটিলতায়। এই যে সাম্প্রতিক নির্দেশ, তার ভিত্তিটি হল ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিধি। সেই বিধি এমনিতেও প্রযোজ্য ছিল দেশ জুড়ে। তবে কিনা, এই সংবাদের মধ্যে একটি বিশেষ এবং নতুন দিক আছে। অন্তত মুখের কথায় এই বার বলা হচ্ছে, অন্য দেশ থেকে আগত সব ক’টি ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে— মুসলমানদের ছাড়া। অথচ, ১৯৫৫ সালের আইনে কিন্তু মুসলমানদের বাদ রাখার কোনও শর্ত বা প্রস্তাব ছিল না— বাস্তবিক সে আইন ছিল ধর্ম বিষয়ে ‘নিরপেক্ষ’, অর্থাৎ নিঃশর্ত। চালু আইনের এই নতুন ব্যাখ্যাই বলে দেয়, কেন গুজরাত নির্বাচনের আগে এ কাজ বিজেপিকে করতে হচ্ছে। ভোট-বৈতরণি পার হওয়ার জন্য হিন্দুত্ববাদী সমাজকে, এবং তার বিশেষ রক্ষণশীল অংশটিকে খুশি করার পথ এটাই— সাব্যস্ত হয়েছে।

রাজনীতিই বিষয়টির সূত্রে সিএএ প্রসঙ্গ নতুন করে তুলছে। রাজনীতিই স্থির করেছে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে এই সুযোগে আবার সিএএ ধুয়ো তুলতে হবে। সুতরাং রাজ্যের বিরোধী নেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী গত সপ্তাহে ঘোষণা করে দিলেন যে, দেশে সিএএ আইন প্রয়োগ শুরু হয়েছে, এবং পশ্চিমবঙ্গেও সত্বর সে কাজ শুরু হবে। এমনিতেই এ রাজ্যে মতুয়া গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে যদি সিএএ কার্যকর না হয় বিজেপিকে তার মূল্য চোকাতে হবে। শুভবোধসম্পন্ন নাগরিক জানেন, সিএএ কেবল অধিকারহীন মানুষকে নাগরিকত্বে অন্বিত করার বন্দোবস্ত নয়, বহু মানুষকে বিশেষত মুসলমানদের নাগরিকত্বের অধিকারহীন করারও পথ। সুতরাং, এই সব রাজনৈতিক স্থান ও অবস্থান আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ প্রবল ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে, সন্দেহ নেই। আপাতত গুজরাত ভোট সেই সিএএ-কুনাট্যের প্রথম অধ্যায়টি মঞ্চস্থ করে দিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy