দীপাবলির সকালে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া বোমা বিস্ফোরণের কারণে এক মর্মান্তিক মৃত্যুর সাক্ষী রইল। বিস্ফোরণের কারণ অবশ্য রাজনৈতিক হিংসা নয়, নয় দুষ্কৃতী তাণ্ডবও। রেললাইনের পাশে রাস্তার ধারে পড়ে ছিল বোমা। তাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে প্রবল বিস্ফোরণে প্রাণ গেল এক শিশুর। গুরুতর আহত তার সঙ্গীও। জায়গাটি যুদ্ধক্ষেত্র নয়। তা সত্ত্বেও কোনও সভ্য দেশে এমন রাস্তার পাশে, রেললাইনের ধারে বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায় কি? ভাটপাড়ায় যে সেই ‘অনন্যসাধারণ’ ঘটনা দেখা গেল, তার কারণ হিসাবে স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় বাড়তে থাকা দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপ। প্রাথমিক অনুমান, কালীপুজোর রাতেই রেললাইনের ধারে ওই বোমা রেখে দেওয়া হয়েছিল। পরে বম্ব স্কোয়াডের তল্লাশিতে উদ্ধার হয় তাজা বোমাও। কতখানি বেপরোয়া হলে মানুষের জীবন নিয়ে এমন খেলা করার অধিকার পাওয়া যায়? এতে শুধুমাত্র যে জনসাধারণের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ল তা নয়, বেআব্রু হল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির দিকটিও।
এমন ঘটনা নতুন নয়। রাজনৈতিক হানাহানি বা দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের সূত্রে এখানে বোমাবাজি বা গুলি চলার খবর প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে। রাজ্যের নানা প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে এমন নৈরাজ্যের চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এবং এই নৈরাজ্য কমানোর পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলি তাতে পরোক্ষ প্রশ্রয় জুগিয়ে থাকে। নির্বাচনের আগে এবং পরের পর্বগুলি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। সেই সময় দুর্বৃত্তায়নকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণ যায় নিরীহ মানুষেরও। এবং এই ধরনের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনও প্রায়শই নীরব থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে শাসক দলের ঘনিষ্ঠতার কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করতেও ইচ্ছাকৃত দেরি হয়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। পূর্বতন শাসক দলের জমানার শেষের দিক থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে দলদাসত্বের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। বর্তমান শাসক দলের আমলে সেই অভ্যাস বজায় আছে তো বটেই, উপরন্তু ক্ষেত্রবিশেষে দৃষ্টিকটু রকম ভাবে প্রকট হয়েছে। এই ধরনের নিষ্ক্রিয়তা দুর্বৃত্তদের আরও সাহস জোগায়। ফলে কিছু কাল অন্তরই রাজ্যের নানা স্থানে আবার বেপরোয়া কাজকর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটে। পুরুষ, নারী, এমনকি শিশুও যার বলি হয়। ঘটনার অভিঘাত তীব্র হলে কিছু কাল তা নিয়ে হইচই চলে, কিন্তু তাতে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা কমে না।
উদ্বেগের বিষয় এটাই যে, এমন নৈরাজ্যের সংস্কৃতিতে এখন রাজ্যবাসীও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। ফলে একটি শিশুর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে যে আলোড়ন রাজ্য রাজনীতি এবং সাধারণের মধ্যেও ওঠা উচিত ছিল, তা ওঠেনি। শিশুটির মৃত্যুর দায় কি প্রশাসনের উপরেও বর্তায় না? যে প্রশাসনকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছে রাজ্যবাসী, তারাই এই দুর্বৃত্তায়ন রুখতে ব্যর্থ হয়েছে— এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? অবিলম্বে বোমা প্রস্তুতের গোপন আস্তানাগুলি চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ করা হোক। এমন নৈরাজ্যের কারণে আগামী দিনে যাতে একটি প্রাণও নষ্ট না হয়, প্রশাসন তা নিশ্চিত করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy