—প্রতীকী চিত্র।
কেন পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি দফায় লোকসভা ভোট করাতে হয়, কেন এ রাজ্যেই মোতায়েন করতে হয় সর্বাধিক সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী, সে প্রশ্নের উত্তর পশ্চিমবঙ্গই দিল। আরও এক বার। পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএ আধিকারিকদের উপরে যে আক্রমণ হল, তা ন্যক্কারজনক। ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলার উপায় নেই। সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্তে যাওয়া কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের ঠিক একই রকম আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। স্পষ্টতই, এই আক্রমণ একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক কৌশল। যে ভঙ্গিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও এই নৈরাজ্যকে সমর্থন করেছেন, তাও নিন্দনীয়। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করছে। অভিযোগটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তা তো নয়— দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং ঝাড়খণ্ডের ইস্তফা প্রদানকারী মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অন্যান্য বিরোধীশাসিত রাজ্যেও কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘অপ’-ব্যবহার নিয়ে বহুবিধ প্রশ্ন উঠেছে। ওঠারই কথা। কিন্তু, লক্ষণীয়, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই এমন আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। ফলে এই রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আবারও রাজ্যের কলঙ্কের কারণ হল। সবচেয়ে আশ্চর্য এই যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এমন রণং দেহি অবস্থান যে রাজ্যের সঙ্গে এখানকার শাসকপক্ষের ভাবমূর্তিটিও কলঙ্কিত করছে, এই সামান্য কথাটি নেত্রী ও নেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। না কি, পরিস্থিতি এমনই বেলাগাম যে, এই উদ্ভ্রান্ত হিংস্রতাকে সমর্থন না জুগিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের গত্যন্তর নেই?
শুধু রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃত্ব নয়, নিন্দনীয় ভূমিকা পুলিশ-প্রশাসনেরও। ভূপতিনগরের ঘটনার পর কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। জেলার পুলিশকর্তা গতে বাঁধা উত্তর দিয়েছেন যে, তদন্ত চলছে, এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশের যে ৩৬ মাসে বছর, রাজ্যবাসীকে সে কথা আর বলে দিতে হয় না। কিন্তু, পুলিশকর্তাদের দায়বদ্ধতা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়, ভারতের সংবিধানের প্রতি, রাজ্যের নাগরিকের প্রতি। রাজনৈতিক রং বিচার করে তদন্ত করার কু-অভ্যাসটি রাজ্য পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতাকে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কেন এই রাজ্যের পুলিশকে ভরসা করা যায় না, তা পুলিশই বারংবার প্রমাণ করে চলেছে। গত কয়েক দশক ধরে লাগাতার এই ‘রাজনৈতিক’ নৈরাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে এমন অতলে নিয়ে গিয়েছে যে হিংসার মাপকাঠিতে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান শীর্ষে।
প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী বাহিনী কেন্দ্রীয় শাসকপক্ষের অঙ্গুলি নির্দেশে বিরোধীপক্ষকে হয়রান করছে, এমন অভিযোগ থাকলে বিরোধী রাজনীতির ঠিক কী করণীয়? মুখ্যমন্ত্রী অতিপরিচিত অসংস্কৃত ভঙ্গিতে জানতে চেয়েছেন, তখনও কি ‘হাতে শাঁখা-বালা পরে’ বসে থাকতে হবে? উত্তরটি তাঁরই মাথায় আসা উচিত ছিল। রাজনৈতিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে রাজনীতির ভাষাতেই, হিংস্রতার অস্ত্রে নয়। এখনও বিরোধী দলগুলির বাক্স্বাধীনতা মোটের উপর বজায় আছে। মিটিং-মিছিল, অবস্থান বিক্ষোভের পথ বন্ধ হয়নি, আদালতের দরজাও খোলা। অর্থাৎ, গণতন্ত্রে প্রতিবাদের যে পথগুলি থাকে, তাঁর দলের সামনেও সেগুলি আছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা অন্যায় করলে যেমন আদলতের দ্বারস্থ হওয়া যায়, তেমনই এই নির্বাচনী মরসুুমে তা জনতার আদালতেও পেশ করা সম্ভব। অন্যান্য রাজ্যে রাজনীতি সে পথেই হাঁটছে। পশ্চিমবঙ্গেই কেন হিংসা একমাত্র পথ হয়ে উঠল, সে প্রশ্নের উত্তরসন্ধানে শাসকদের গভীর আত্মসমীক্ষা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের আদর্শ থেকে নিজেরাই এতখানি বিচ্যুত হলে অন্যের দিকে আর আঙুল তোলা যায় কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy