Advertisement
E-Paper

অবনমন

পুলিশ, জেল পরিচালনা, বিচার পরিষেবা ও আইনি সহায়তা এই চারটি মাপকাঠিতেই পশ্চিমবঙ্গের নিদারুণ দুরবস্থার চিত্রটি সমীক্ষায় স্পষ্ট।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫১
Share
Save

অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। সাম্প্রতিক কাজকর্মে সাধারণ মানুষের মধ্যে জমছিল ক্ষোভও। সে সবই যে অকারণ, অযৌক্তিক নয়, পুলিশ-ব্যবস্থায় গোটা দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে একেবারে শেষ স্থানে পশ্চিমবঙ্গের নেমে যাওয়া তা প্রমাণ করে দিল। সম্প্রতি টাটা ট্রাস্টের উদ্যোগে দেশের ১৮টি মাঝারি ও বড় রাজ্যকে নিয়ে তৈরি ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২৫’-এ ধরা পড়েছে এই অবনমন। এর সঙ্গেই উঠে এসেছে আরও কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিসংখ্যান। যেমন— সিভিক পুলিশের সংখ্যাবৃদ্ধির হারের নিরিখে সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। অথচ, এই রাজ্যেই পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদের প্রায় ৪১ শতাংশ খালি পড়ে রয়েছে। এই ক্ষেত্রটিতেও পশ্চিমবঙ্গই প্রথম। পুলিশ, জেল পরিচালনা, বিচার পরিষেবা ও আইনি সহায়তা এই চারটি মাপকাঠিতেই পশ্চিমবঙ্গের নিদারুণ দুরবস্থার চিত্রটি সমীক্ষায় স্পষ্ট। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, প্রশাসন সেই বিষয়ে কী ভাবছে, তার একটি ছবি ধরা পড়ে কোনও রাজ্যের পুলিশ-ব্যবস্থার দিকে নজর রাখলে। সে দিক থেকে বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে।

উদ্বেগের বীজটি কোথায় লুকিয়ে, এ রাজ্যের পুলিশের সাম্প্রতিক কাজকর্মেই তা প্রমাণিত। সেখানে তাদের বহু রূপ। কখনও হেনস্থাকারীর, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ চুঁচুড়া থানা। নাবালিকা কন্যাকে উত্ত্যক্ত করেছিল দুষ্কৃতীরা। তার অভিযোগ জানাতে মা-মেয়ে থানায় এলে তাঁদের সারা রাত থানায় আটকে প্রশ্ন করা হয়, অতঃপর অভিযোগ দায়ের না করেই পাঠানো হয় মহিলা-থানায়। কখনও পুলিশ অসহায়, প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। অভয়া পরবর্তী কালে দেশজোড়া প্রতিবাদের দিনে যখন দুষ্কৃতী তাণ্ডবে তছনছ হয় প্রতিবাদের ধাত্রীভূমি আর জি কর চত্বর, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরিবর্তে আতঙ্কে লুকিয়ে পড়ে পুলিশ। আবার কখনও আশ্চর্য নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ ওঠে, মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেও তারা প্রথম পর্যায়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা করেনি। তাদেরই নিষ্ক্রিয়তায় ঘরছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ, ঘটেছে প্রাণহানি। কখনও আবার অতি-সক্রিয়তা নজর কাড়ে। প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিককে বিনা প্ররোচনায় প্রহার করে পুলিশ আটক করে, বিক্ষোভরত সদ্য চাকরিহারা শিক্ষককে লাথি মারে।

স্পষ্টতই, এ রাজ্যে পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে শেখেনি। প্রশাসনিক নির্দেশ পালন করা পুলিশের কাজ নিশ্চয়, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতি পদক্ষেপে তারা যদি নিজ কর্তব্যের প্রাথমিক পাঠটুকু ভুলে ক্ষমতাসীনের মুখাপেক্ষী থাকে, তবে বলতে হয় বৃহত্তর প্রশাসন চায় তাদের ‘দলদাস’ রূপটিই। প্রশাসনেরই নকশায়, দলদাসত্বের নতুন নতুন নজির সৃষ্টি করে পুলিশ। আর ঠিক এই কারণেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের দূরত্বটি ক্রমশ চওড়া হয়। কেবল ফুটবল খেলে, বাজার সরকার হয়ে সেই দূরত্বে প্রলেপ দেওয়া যায় না। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে রাজ্যের অতিরিক্ত সিভিক পুলিশ, যাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই, ফলত নেই পেশার প্রতি দায়বদ্ধতাও। আছে শুধুমাত্র অকৃত্রিম দলীয় আনুগত্য। এই সমগ্র ব্যবস্থাই কোনও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পক্ষে সুখবর নয়। মাননীয়া পুলিশমন্ত্রী এ বিষয়ে ভাবিত বলে মনে করারও কোনও হেতু নেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Police Law and Order

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy