Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Biodiversity

নিশ্চিন্ত আশ্রয়

সেখানে জলাশয়, গাছপালা, জলজ প্রাণী, নানা ধরনের পাখি নিয়েই বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যাপন চলে। আবাসনটি যে অঞ্চলে গড়ে উঠেছে, সেখানে প্রকল্প শুরুর আগে থেকেই দু’টি জলাশয় ছিল।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৩
Share: Save:

খাস মহানগরের বুকে জীববৈচিত্রের এক টুকরো স্বর্গ। কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে সবুজই যখন দ্রুত বিলীন হওয়ার পথে, তখন জীববৈচিত্রের কথা কেমন যেন অলীক বোধ হয়। কিন্তু সব যে এখনও ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়নি, ট্যাংরা অঞ্চলের এক আবাসন চত্বরই তার প্রমাণ। সেখানে জলাশয়, গাছপালা, জলজ প্রাণী, নানা ধরনের পাখি নিয়েই বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যাপন চলে। আবাসনটি যে অঞ্চলে গড়ে উঠেছে, সেখানে প্রকল্প শুরুর আগে থেকেই দু’টি জলাশয় ছিল। আট হাজার স্কোয়্যার ফুটেরও অধিক অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সেই জলাশয়। শীতকালে বহু পরিযায়ী পাখির ঠিকানা হয় এই জলাশয়। এই অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মাছের চারাকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে পাখিরা, সাপেরাও। জলাশয়ের মাছদের খাদ্য জোগান আবাসনের বাসিন্দারাও। নিয়মিত চোখ রাখেন কোনও নতুন পাখি বা প্রাণী তাঁদের এই একান্নবর্তী পরিবারের অতিথি হয়ে এল কি না। ফলে অনুকূল পরিবেশে নিশ্চিন্তে বাঁচে বাসিন্দারা।

জমিহাঙরদের এই বাড়বাড়ন্তের কালে নিশ্চিত ভাবেই এ এক উল্টো চিত্র। বিশেষত কংক্রিটের মাঝে কোনও জলাশয় থাকলে অচিরেই তা দখল হয়ে যাওয়ার রেওয়াজটি এ শহরে বহু পুরাতন। জমানা বদলেও সে স্বভাব বদলায়নি। এই ভাবে খাস কলকাতায় এবং তার আশেপাশে হারিয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার পুকুর। বিপন্ন হয়ে পড়েছে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। জলাশয় বাঁচাতে আদালতের নির্দেশ, খোদ মেয়রের জলাশয় রক্ষার নানাবিধ প্রতিশ্রুতি— কাজে আসেনি কিছুই। বরং স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সকলের নাকের ডগাতেই জলাশয়ে দিনের পর দিন ফেলা হয়েছে আবর্জনা, কখনও লরি করে মাটি। জলাশয়টি ভরাট হয়ে এলে তা দখল করে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ-হেন সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে আইন মেনে সাজা হয়েছে কত জনের? পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখল হয়ে যাওয়া জলাশয়ের খবর মিললে দ্রুত পদক্ষেপ করে তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাতে কিছু জলাশয় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও যে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পুকুর চুরির চক্র কাজ করছে, তাতে প্রত্যেকটি জলাশয়ের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ আদৌ সম্ভব নয়। বিশেষত, ঘুঘুর বাসাটি যেখানে খোদ প্রশাসনের একাংশের মধ্যে থেকেই কাজ করে চলেছে। এই চেনা ছক যে ট্যাংরার ওই অঞ্চলটিতে খাটেনি, তা আশা জাগায়। আশা, শুভবুদ্ধির এখনও সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটেনি।

তবে সেই শুভবুদ্ধি যে সর্বদা কাজ করবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। অভিজ্ঞতা বলে, এ-হেন জীববৈচিত্রপূর্ণ অঞ্চলে জমি মাফিয়াদের পাশাপাশি আমোদপ্রেমীদের অত্যাচারও কিছু কম চলে না। অচিরেই এমন সব জায়গা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়, এবং আদি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ হতে হয়। কলকাতার নিকটবর্তী পরিযায়ী পাখিদের বেশ কিছু পছন্দের চারণক্ষেত্রের সেই হাল হয়েছে। এই অঞ্চলটিরও যেন সেই অবস্থা না হয়, তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিকদেরও। যে আগ্রহ নিয়ে তাঁরা নতুন অতিথিদের খোঁজ রাখেন, সেই একই আগ্রহ যেন পরিলক্ষিত হয় তাদের রক্ষার ক্ষেত্রেও। তাঁদের এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ অন্যদেরও যেন উদ্বুদ্ধ করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে বইকি।

অন্য বিষয়গুলি:

Biodiversity Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE