Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mulayam Singh Yadav

নতুন তন্ত্রের নেতা

১৯৮৯ সালে কংগ্রেসকে সরিয়ে মুলায়ম সিংহ যাদব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজ অবধি আর কখনও কংগ্রেস সেখানে পা ফেলতেই পারেনি, ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনা কম।

মুলায়ম সিংহ যাদব।

মুলায়ম সিংহ যাদব।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:১০
Share: Save:

পঞ্চান্ন বছর কম সময় নয়। কিঞ্চিদধিক এই অর্ধশতকে মুলায়ম সিংহ যাদবের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের, তথা উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় অববাহিকার রাজনীতি এক পথ পরিক্রমা করেছে— ঐতিহাসিক ও অ-সামান্য পরিক্রমা। রাজনীতিক ও নেতা হিসাবে মুলায়ম সিংহ যাদব কত নম্বর পাবেন সে হিসাবের বাইরে গোড়াতেই মেনে নেওয়া দরকার, ভারতীয় রাজনীতির চরিত্রে যে বিপুল, গভীর ও বহুবিস্তৃত পরিবর্তন ঘটেছিল উনিশশো নব্বইয়ের দশকের সূচনায়, তার হাল ধরে থেকেছিলেন কয়েক জন প্রধান ব্যক্তিত্ব— সদ্যপ্রয়াত সমাজবাদী পার্টি নেতৃবর তাঁদের অন্যতম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের হাত ধরে মণ্ডল কমিশন সংস্কারযজ্ঞ শুরু হলেও সেই রথ উত্তরপ্রদেশে সাফল্যের সঙ্গে চালনা করে জাতভিত্তিক রাজনীতির নতুন অঙ্কে বহু দশকব্যাপী কংগ্রেস শাসনকে ধরাশায়ী করে দেন রামমনোহর লোহিয়ার শিষ্য, সমাজবাদ-দীক্ষিত, ‘ওবিসি’ নেতারূপে বিকশিত মুলায়ম সিংহ যাদব। বাস্তবিক, ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসকে সরিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজ অবধি আর কখনও কংগ্রেস সেখানে পা ফেলতেই পারেনি, ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনা কম।

আইডেন্টিটি পলিটিকস বা সত্তা-রাজনীতির এ-হেন বিকাশ ও ভারতীয় গণতন্ত্রের নয়া অভিমুখ নিয়ে অতঃপর রাজনৈতিক, ব্যবহারিক, তাত্ত্বিক— বহু চর্চা হয়েছে। ভারতীয় গণতন্ত্র সম্পূর্ণ নতুন এক মডেল তুলে ধরেছে বিশ্বপৃথিবীর সামনে। সেই মডেলের এক দিক যদি হয় ক্ষমতায়ন, অন্য দিকটি ক্ষুদ্রস্বার্থপোষণ। মুলায়ম সিংহ যাদবের নেতৃত্বে এই দুই দিকই বিশেষ ভাবে পরিপুষ্ট হয়েছে। এক দিকে মুসলমান ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায় ক্ষমতায়িত করতে পেরেছে তাঁর সমাজবাদী দল, এবং বেশ বড় সময় ধরে সংখ্যালঘু ও নিম্নবর্ণের রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে উচ্চবর্ণের আধিপত্যদুর্গে অনপনেয় ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গেই, সঙ্কীর্ণ স্বার্থপোষ‌ণ, গোষ্ঠীভিত্তিক আর্থিক ও সামাজিক দুর্নীতির ছড়াছড়ি দেখা গিয়েছে তাঁরই নেতৃত্বকালে। মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি এবং কাঁসিরাম-মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির বিরুদ্ধে আজ যে আবার উচ্চবর্ণ হিন্দুত্ববাদী প্রতাপ উল্টেপাল্টে দিয়েছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্রটিকে, তার পিছনে মুলায়ম সিংহের দলগত দায় বিরাট, ব্যক্তিগত দায়ও কম নয়। দশকাধিক কাল ধরে প্রবাহিত সেই দুর্নীতিধারা ভারতীয় সমাজের বহু ক্ষতি সাধিত করেছে। আজকের বিজেপির সংখ্যাগুরুবাদের রমরমার পিছনে তাই মুলায়মদের মতো নেতার ভূমিকা কম করে দেখা সম্ভব নয়। উনিশশো নব্বইয়ের দশকে তিনি ও তাঁরা যে মুদ্রায় বিজেপির উত্থানকে আটকেছিলেন, সেই একই মুদ্রার বিপরীত দিকটি দিয়ে বিজেপির অসহিষ্ণু হিন্দুত্ববাদকেও তাঁরা আহ্বান করে এনেছেন। সমালোচকরা বলতেই পারেন, সেই কুখ্যাত রথযাত্রা পর্বে মুলায়ম সিংহ প্রশাসন কর্তৃক করসেবক নিধন কিন্তু আজকের যোগী আদিত্যনাথের মহোত্থানেরই আহ্বায়ক। ওই প্রতিশোধ ও আতিশয্যের রাজনীতির ফল হয়েছিল মারাত্মক, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পর্বতসম দুর্নীতি ও দুরাচার।

কংগ্রেসকেই মুলায়ম সিংহ যাদব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কালে বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্ট তৈরির একাধিক প্রয়াসে তাঁর পুত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকেই বার বার চেয়েছেন কংগ্রেস হাইকমান্ড, অদূর ভবিষ্যতেও চাইবেন বলে মনে হয়। এর মধ্যে একটা বিরাট রাজনৈতিক সাফল্য আছে। ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির ধারাপাতে তাঁর দলের প্রাসঙ্গিকতা সহজে বিলীন হবে না। আর এই ভাবেই গোবলয়-রাজনীতি বহন করে যাবে তাঁর কৌশলী রাজনীতির উত্তরাধিকার, যেখানে অনেক অঘটন সত্ত্বেও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নটিকে কেন্দ্রে না রেখে পার পাবে না গণতান্ত্রিক ভোটযুদ্ধের কার্যক্রম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy