প্রতীকী ছবি।
জাতীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক পরিচালিত একটি সমীক্ষার ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হইয়াছে। ভারতীয় নারী-পুরুষ প্রত্যহ গড়ে কতটা সময় নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করিয়া থাকেন এবং সবেতন ও বেতন-বহির্ভূত কাজেই বা তাঁহাদের অংশগ্রহণের হার কী রূপ, তাহার হিসাব কষাই ছিল এই সমীক্ষার প্রাথমিক উদ্দেশ্য। ভারতে ইতিপূর্বে এই ধরনের সমীক্ষা হয় নাই। সুতরাং ইহার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব যথেষ্ট। সমীক্ষায় প্রকাশ, ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র ৩৮.২ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত। অর্থাৎ, তাঁহারা শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেন। এবং প্রতি দিন গড়ে নিজ কর্মক্ষেত্রে ৪২৯ মিনিট (৭ ঘণ্টা ৯ মিনিট) সময় ব্যয় করিয়া থাকেন। কিন্তু ইহা নিতান্তই গড় হিসাব। ইহার মধ্যে এক গভীর লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান, অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের ন্যায়। কর্মক্ষেত্রে নিযুক্তদের মধ্যে মহিলাদের হার মাত্র ১৮.৪ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৭.৩ শতাংশ, অর্থাৎ তিনগুণেরও অধিক। এবং যেখানে পুরুষরা নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতি দিন গড়ে ৭ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট সময় কাটাইতে পারেন, সেখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে তাহা মাত্র ৫ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট।
সবেতন কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপস্থিতি কম কেন? উত্তরটি সমীক্ষার ফলে স্পষ্ট। স্বগৃহে রন্ধন, ঘর পরিষ্কার এবং নানাবিধ আনুষঙ্গিক গৃহকর্মে মেয়েদের অংশগ্রহণের হার ৮১.২ শতাংশ। পুরুষদের তুলনায় তিনগুণেরও অধিক। শিশু এবং বয়স্কদের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও চিত্রটি অনুরূপ। এই কার্যের জন্য মেয়েরা কোনও বেতন পান না, অথচ দিনের বেশির ভাগ সময় ইহাতেই অতিবাহিত হয়। ইহাকে তাঁহাদের কর্তব্য বলিয়াই গণ্য করা হয়, যে কর্তব্য পালনের জন্য কর্মক্ষেত্রে তাঁহার সময় হ্রাস পায়। এখনও অনেক পরিবারে ধরিয়া লওয়া হয়, মেয়েদের প্রাথমিক দায়িত্ব সংসার পরিচর্যা এবং সন্তানপালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, গৃহের বাহিরে গিয়া অর্থ উপার্জন নহে। তীব্র অনটনের মুখে পড়িয়া তাঁহাদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান করিতে হইলেও, যে মুহূর্তে পরিবারের পুরুষটির রোজগার বৃদ্ধি পায়, মেয়েরা পুনরায় গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতে বাধ্য হন।
এই বৎসরের আর্থিক সমীক্ষাতেও প্রকাশ পাইয়াছে, ভারতে ১৫ হইতে ৫৯ বৎসর বয়সি নারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও অধিক সম্পূর্ণ ভাবে গৃহকর্মে নিয়োজিত, সবেতন কর্মক্ষেত্রে যুক্ত নহেন। এবং ২০১১-১২ সালের তুলনায় এই বৎসর মেয়েদের শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার বেশ কিছুটা হ্রাসও পাইয়াছে। অথচ, পরিসংখ্যান বলিতেছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষায় মেয়েদের যোগদান পূর্বের তুলনায় বহু বৃদ্ধি পাইয়াছে। সমস্যা হইল, স্বাধীনতার এত বৎসর পরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরির এমন পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হয় নাই, যাহাতে মেয়েদের যোগদান সম্ভবপর হইতে পারে। সমস্যা আরও আছে। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের কাজ করিবার উপযুক্ত পরিবেশ, সময়ের নমনীয়তা এবং নিরাপত্তার এখনও যথেষ্ট অভাব। বৈষম্য প্রকট বেতন দানের ক্ষেত্রেও। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গৃহ ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখিতে পারা তাঁহাদের পক্ষে সম্ভব হইয়া উঠে না। এই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করিতে না পারিলে কর্মক্ষেত্র হইতে মেয়েদের দূরত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাইবে। দেশের অর্থনীতির পক্ষে ইহা সুসংবাদ নহে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy