Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রশ্নটি রাজনৈতিক 

মূল্যস্ফীতির সমস্যাটি অতিপরিচিত।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩১
Share: Save:

রাজনীতির কারবারিরা অর্থনীতির থোড়াই তোয়াক্কা করেন— এই ধ্রুবসত্যের একটি মোক্ষম ব্যতিক্রম আছে। তাহার নাম মূল্যস্ফীতি। পরোক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ কমিয়া গেলে, অথবা বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়িলে সাধারণ মানুষ টেরও পান না, কিন্তু মূল্যস্ফীতির আঁচ তাঁহাদের গায়ে সরাসরি লাগে। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাস বলিতেছে, মূল্যস্ফীতি যত বার ক্ষমতাসীন দলকে ভুগাইয়াছে, তেমনটা আর কোনও প্রশ্ন নহে। সেই হিসাবে নরেন্দ্র মোদীদের গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা— ডিসেম্বর মাসের হিসাবে ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার সাত শতাংশের গণ্ডি টপকাইয়া গেল। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তীব্রতর। অর্থাৎ, থলি হাতে বাজারে গেলেই মানুষ প্রতি দিন বুঝিতেছেন, অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল নাই। এখানেই একটি প্রহেলিকা তৈরি হইয়াছে— সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির কথা জানা যাইতেছে, বাজারে গেলেই তাহা টেরও পাওয়া যাইতেছে, কিন্তু রাজনৈতিক পরিসরে মূল্যস্ফীতি লইয়া সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তেমন ভাবে চোখে পড়িতেছে না। কেহ বলিতেই পারেন, নাগরিকত্ব আইন লইয়া দেশজোড়া বিক্ষোভ রাজনৈতিক পরিসরটি দখল করিয়া আছে। সেই কারণেই মূল্যস্ফীতি লইয়া পৃথক বিক্ষোভ তেমন নাই।

দেশের নাগরিকত্ব খোয়াইবার আশঙ্কার সহিত মূল্যস্ফীতির সমস্যার একটি চরিত্রগত ফারাক আছে— নাসিম নিকোলাস তালেবের ভাষা ধার করিলে বলিতে হয়, প্রথমটি ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট, অর্থাৎ এমন ঘটনা, যাহা পূর্বে কল্পনাও করা যায় নাই। মূল্যস্ফীতির সমস্যাটি অতিপরিচিত। ফলে, নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে নাগরিকের ক্ষোভ যে ভঙ্গিতে প্রকাশিত হইতে পারে, মূল্যস্ফীতি একটি চূড়ান্ত সীমায়— হাইপার-ইনফ্লেশন’এর পর্যায়ে— না পৌঁছাইলে তাহা সম্ভব নহে। বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি চলিতেছে, তাহা তখনই শাসকের শিরঃপীড়ার কারণ হইবে, যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তাহাকে রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত করিতে পারিবে। মনমোহন সিংহের শেষ দফায় বিজেপি যে কাজটি নিখুঁত ভাবে করিয়াছিল। সেই আমলে পেঁয়াজের, গ্যাস সিলিন্ডারের, পেট্রলের অথবা চাল-ডালের যত দাম ছিল, এখন কার্যত প্রতিটি ক্ষেত্রেই মূল্যস্তর তাহার ঢের ঊর্ধ্বে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার পরিমাণও স্বভাবতই বেশি। ব্যর্থতা বর্তমান বিরোধীদের, যাঁহারা পরিস্থিতিটিকে রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত করিতে পারেন নাই— সম্ভবত সেই কথা ভাবিয়া উঠিবার অবকাশও পান নাই। বিরোধীদের এই ব্যর্থতায় সমস্যা কী? সমস্যা ইহাই যে যত ক্ষণ না প্রশ্নটি যথেষ্ট রাজনৈতিক হইয়া উঠিতেছে, তত ক্ষণ অবধি শাসক তাহাকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে, পরিস্থিতি পাল্টাইবার সম্ভাবনাও কমে। শাসকদের ব্যর্থতাকে তাঁহাদের জন্য অস্বস্তিকর রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত করাই বিরোধীদের কাজ। ভারতের বিরোধীরা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

যদি পেঁয়াজের দামই মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হইয়া থাকে, তবে তাহা নিয়ন্ত্রণে আসা সময়ের অপেক্ষামাত্র। কিন্তু, মূল্যসূচকে পেঁয়াজের গুরুত্ব সামান্যই। লক্ষণীয় ভাবে দাম বাড়িয়াছে গম-সহ খাদ্যশস্যের। সেই দাম মরসুমের উপর নির্ভরশীল নহে, কারণ খাদ্যশস্য গুদামে দীর্ঘ সময় মজুত থাকে। এই ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করিয়াছে রাজনীতি। লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমাণ গম কিনিয়াছিল— সরকার ফসল কিনিলে কৃষক তুষ্ট হইবে, সেই ভরসায়। কিন্তু, গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাহা বণ্টন করে নাই। ফলে, বাজারে একটি কৃত্রিম অভাব তৈরি হইয়াছে। এখন তাহার মূল্য চুকাইতে হইতেছে। শাসকপক্ষের অবশ্য দুর্ভাবনার কারণ নাই। বিরোধীরা নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনের লাভের বখরা লইয়া ব্যস্ত— মূল্যস্ফীতি লইয়া ভাবিবার সময় তাঁহাদের নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Inflation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy