Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

নাগরিকের দায়িত্ব

কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে এই অসম যুদ্ধে সরকারের বৃহত্তম প্রতিপক্ষ হইয়া উঠিয়াছে জনগণ।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০০:৪৮
Share: Save:

ফের কন্টেনমেন্ট-এর নির্দেশ জারি না করিয়া উপায়ান্তর ছিল কি? আনলক পর্ব আরম্ভ হইবার পর কোভিড-১৯’এর সংক্রমণ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। লকডাউন চলাকালীন সেই হার নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভরসা জন্মিয়াছিল, হয়তো অতিমারির প্রসারে রাশ টানা সম্ভব হইবে। পরিসংখ্যান সেই সম্ভাবনাকে আপাতত উড়াইয়া দিয়াছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নহে, গোটা দেশে— বস্তুত গোটা দুনিয়ায়— অতিমারি ফের শক্তি বাড়াইতেছে। ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের তৃতীয় স্থানে উঠিয়া আসা, শুধু মুম্বই শহরেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অতিমারির জন্মস্থান চিনকে ছাপাইয়া যাওয়া— সবই বলিতেছে, বিপদ কাটিতে এখনও ঢের বাকি। কাজেই, রোগ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা অপরিহার্য। তাহার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে ফের কঠোর লকডাউন করিতে হইলে তাহাই কর্তব্য।

কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে এই অসম যুদ্ধে সরকারের বৃহত্তম প্রতিপক্ষ হইয়া উঠিয়াছে জনগণ। কাণ্ডজ্ঞানহীন, আমোদপ্রিয় জনগণ। পশ্চিমবঙ্গে ফের লকডাউন চালু করিবার সিদ্ধান্তটির পশ্চাতে নাগরিকের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার কথাটি রীতিমতো স্পষ্ট— প্রশাসন জানাইয়াছে, মানুষকে মনে করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে বিপদ এখনও কাটে নাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন অতিমারি গোষ্ঠী সংক্রমণের দোরগোড়ায় দাঁড়াইয়া আছে, তখন বিপদের কথাটি নাগরিককে আলাদা ভাবে স্মরণ করাইয়া দেওয়া জরুরি হইয়া দাঁড়াইল, ইহা গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে। যে জনতা বিপদের গুরুত্ব বুঝে না, যাবতীয় বিধিনিষেধ অবজ্ঞা করিয়া বিনা মাস্কে যত্রতত্র ঘুরিয়া বেড়ায়, চায়ের দোকানে আড্ডা মারে, তাহাদের কি প্রকৃতার্থে ‘নাগরিক’ বলা চলিতে পারে? কেহ বলিতে পারেন, যত ক্ষণ না এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়, তত ক্ষণ অবধি শুধু মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করিয়া রোগের প্রসার রোধ করা যাইবে না। কথাটি উড়াইয়া দেওয়ার নহে। সত্যই, যত ক্ষণ না প্রতিষেধকের বর্ম মিলিতেছে, অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধটি অতীব অসম। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা বলিতেছেন, যথার্থ প্রতিষেধক মিলিতে এখনও অন্তত কয়েক মাসের অপেক্ষা। তত দিন অবধি আত্মরক্ষার দায়িত্ব নাগরিকেরই। মানুষকে বুঝিতে হইবে, লকডাউনের অস্ত্রটি যথেচ্ছ প্রয়োগ করিবার উপায় সরকারের নাই। তাহার অর্থনৈতিক বিপদ কতখানি মারাত্মক, গত কয়েক মাসে ভারত তাহা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় শিখিয়াছে। ফলে, যখন সরকার সেই অস্ত্রটি ব্যবহার করিতেছে, অতিমারির প্রসার রোধে তাহাকে সর্বাপেক্ষা সফল করিয়া তুলিবার দায়িত্ব নাগরিককে লইতেই হইবে। সমাজের স্বার্থেও বটে, নিজের স্বার্থেও বটে।

আনলক প্রক্রিয়া চলাকালীন ফের লকডাউনের পথে হাঁটিবার সিদ্ধান্তটি সাহসী। কিন্তু, একই সঙ্গে দেখিতে হইবে, এই প্রক্রিয়াটি যেন অর্থনীতির পক্ষে যত কম সম্ভব ক্ষতিকারক হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই দফায় লকডাউনের যে নীতি ঘোষণা করিয়াছে, তাহাতে সুবিবেচনার পরিচয় আছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ও ব্যাপ্তির উপর নির্ভর করিয়া কন্টেনমেন্ট জ়োন নির্দিষ্ট করা, স্থানীয় সিদ্ধান্তের ভার স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ছাড়িয়া দেওয়া ইত্যাদি সিদ্ধান্ত হইতে অনুমান করা চলে, এই দফায় কামান দাগিবার পরিবর্তে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আক্রমণ শানানোই সরকারের উদ্দেশ্য। অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন এত দিন সর্ব ক্ষেত্রে সমান পারদর্শিতার পরিচয় দেয় নাই। বস্তুত, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ঘরে-ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় অধিক সংক্রমণ ছড়াইয়াছে, এমন অভিযোগ শোনা যায়। এই দফায় কন্টেনমেন্ট পর্বটিকে যদি ঠিক ভাবে পরিচালনা করা যায়, তবে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশের নিকট উদাহরণ হইয়া উঠিতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy