ভোজনপাত্রটি অতিকায়, কিন্তু অন্নব্যঞ্জন দিবার চামচটি ক্ষুদ্র। এমনই নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বাস্থ্য বাজেট। সংসদের স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট, যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ করে নাই কেন্দ্র। ঘাটতি বড় কম নহে, চার হাজার সাতশো কোটি টাকা। সাংসদদের আশংকা, ইহার ফলে শিশুদের টিকাকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। হাম ও রুবেলা, রোটা ভাইরাস এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকার প্রসারের কাজ ব্যহত হইবে। সরকারি টিকাকরণ প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে ওই তিনটি টিকার প্রাপ্তি অধিকাংশ রাজ্যে এখনও নিশ্চিত করা যায় নাই। পশ্চিমবঙ্গেই এতদিন কেবল হামের টিকা দেওয়া হইত, এ বৎসর হইতে হামের সহিত রুবেলার টিকা সরকারি প্রকল্পের অধীনে আনিবার পরিকল্পনা চলিতেছে। কিন্তু ডায়ারিয়া প্রতিরোধে রোটা ভাইরাসের টিকা, কিংবা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে নিউমোকক্কাল টিকা এ বৎসরও চালু হইবে না। এমন আংশিক শিশুসুরক্ষার চিত্র অধিকাংশ রাজ্যে। যথেষ্ট বরাদ্দ না থাকিবার জন্য শিশুর টিকাকরণ প্রসারের পরিকল্পনা যদি গতি হারায়, তাহার চাইতে দুর্ভাগ্য কী থাকিতে পারে? গত বৎসরই ঘোষিত হইয়াছে, তাহাতে ২০২৫ সালের মধ্যে মোট জাতীয় উৎপাদনের আড়াই শতাংশ স্বাস্থ্যে খরচ করিবার লক্ষ্য রাখা হইয়াছে। কেন্দ্রের ব্যয় কিন্তু ০.৩ শতাংশেই আটকাইয়া আছে। সকল রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র মিলিয়া ব্যয়ের অঙ্ক জাতীয় উৎপাদনের ১.৪ শতাংশ। নেপাল বা শ্রীলঙ্কার মতো দেশও স্বাস্থ্যখাতে অধিক খরচ করে।
কার্পণ্যে কেবল টিকাকরণেই থামিয়া নাই। স্বাস্থ্যচিত্রে পরিবর্তন আনিতে সরকারের নূতন ঘোষণা, দেশের দেড় লক্ষ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি হইবে। বর্তমানে এগুলিতে মা-শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবা, এবং কয়েকটি সংক্রামক অসুখের প্রতিরোধের কাজ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেন্দ্রের পরিকল্পনা, এ বার ওই কেন্দ্রগুলিতে অসংক্রামক রোগের পরিষেবাও যুক্ত হইবে। ডায়াবিটিসের পরীক্ষা কিংবা রক্তচাপ মাপিবার ব্যবস্থাও থাকিবে, নাক-কান-গলা এবং দাঁতের প্রাথমিক চিকিৎসাও থাকিবে। তাহার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীও বাড়িবে। উত্তম প্রস্তাব, কিন্তু তাহার অর্থ জুগাইবে কে? সংসদীয় কমিটি বলিয়াছে, যে টাকা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ বৎসর বাজেটে রাখিয়াছে, তাহাতে বড়জোর দশ হাজার কেন্দ্রের হাল ফিরিবে। পশ্চিমবঙ্গেই দশ হাজারের অধিক উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রহিয়াছে। এই হারে টাকা বরাদ্দ করিলে কত দিনে সকলের নিকট প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছাইবে?
স্বাস্থ্যবিমার নূতন প্রকল্পেও বৃহৎ লক্ষ্য নির্দিষ্ট হইয়াছে, দশ কোটি পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা বিমা। কিন্তু বরাদ্দ হইয়াছে মাত্র দু’হাজার কোটি টাকা। ইহাতে সরকারের উদ্দেশ্য লইয়াই সংশয় জাগিতে বাধ্য। এই কার্পণ্যের কি প্রয়োজন ছিল? ভারত কি বাস্তবিকই এত হতদরিদ্র যে তাহার শিশুদের প্রাণরক্ষার জন্য সরকার যথেষ্ট খরচ করিতে পারে না? ভারতে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, আন্ত্রিকের মতো অসুখে বহু লোক আজও প্রাণ হারাইতেছে। অপুষ্ট, অকালমৃত শিশুর সংখ্যা দেখিলে লজ্জায় মাথা হেঁট হইতে বাধ্য। তা সত্ত্বেও প্রতি বৎসর প্রায় চার কোটি ভারতীয় চিকিৎসার খরচ চালাইতে দারিদ্রে পতিত হইয়া থাকেন। তাহার পরেও কেন্দ্র এমন ব্যয়কুণ্ঠ হইলে দেশের স্বাস্থ্যচিত্র বদলাইবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy