ফাইল চিত্র।
কলিকাতা পুরসভা একটি পুরস্কার জিতিল। তাহার নাম ‘রঙ্গরত্ন’। কোথায় জলাশয় বুজাইয়া বাড়ি উঠিতেছে তাহা ধরিতে ড্রোন উড়িবে, বলিয়াছে পুরসভা। রসিকতা বটে! শোনা যায়, আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকার গুহায় সন্ত্রাসবাদীদের গোপন ডেরা খুঁজিতে ড্রোন ব্যবহার হয়। কলিকাতার পুকুর-ডোবা কি তেমনই দুর্গম্য? না কি কলিকাতার লোকালয় মঙ্গলপৃষ্ঠের ন্যায় দূরবর্তী, যে যন্ত্র ছবি না পাঠাইলে তথ্য মিলিবে না? পুরকর্তাদের কথা শুনিলে মনে হয়, পুকুর-তস্কররা দুর্ধর্ষ চৈনিক দস্যু ‘ঘচাং ফু’-র ন্যায় রহস্যময় চরিত্র বুঝি। হায়, বাস্তব অন্য রূপ। কোথায় কোন পুকুর বুজানো হইতেছে, কে নির্মাণ চালাইতেছে, কাহাদের প্রশ্রয়ে অবৈধ ‘প্রমোটারি’ চলিতেছে, পাড়ার শিশুটিও জানে। পুরসভার কাউন্সিলর তাহা জানেন না, এলাকার থানা তাহা জানে না, সে কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? পুরসভারই তথ্য, গত পাঁচ-ছয় বৎসরে প্রায় আড়াইশো অভিযোগ জমা পড়িয়াছে। তাহার দেড়শোটি পুলিশের নিকট পাঠাইয়া দায় সারিয়াছে পুরসভা। কেন? ওই সকল এলাকার কাউন্সিলর কি ওই অভিযোগের সত্যতা জানাইতে অক্ষম? কর্তব্য তো তাঁহারই। সংবাদে প্রকাশ, পুরসভার ১০৯ ওয়ার্ডে নয়াবাদ এলাকায় পুকুরের উপরে নির্মিত বসতবাড়ি ভাঙিয়াছে পুরসভা। আরও বেশ কিছু বাড়ির মালিকের জমির চরিত্রে সংশয় থাকিবার ফলে নোটিস ধরাইয়াছে তাহাদের। এমন নির্মাণকার্য এক দিনে হয় নাই। কাউন্সিলর, পুলিশ কি কর্তব্য বিস্মৃত হইয়াছিলেন?
সমস্যা পুরাতন, কিন্তু নূতন নূতন কমিটি তৈরি করিয়া সাংবাদিক বৈঠকে নব নব সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছে পুরসভা। ড্রোন উড়িবে, ছবি মিলিবে, পুর ইঞ্জিনিয়ার ছুটিবে, পুলিশ ধরিবে। এই রোমাঞ্চকর কাহিনি সহজ প্রশ্নটিকে চাপা দিতে পারে নাই। এত দিন কি পুকুর বুজাইবার, অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করিবার দায়প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন না? তাঁহারা কেন ব্যর্থ হইলেন? বিশেষত কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি হইয়াও জনস্বার্থ রক্ষা করিতে কেন অক্ষম? ইহা কেবল রাজনীতির প্রশ্ন নহে, পুরসম্পত্তি বেদখল প্রশাসনিক সমস্যা, অবৈধ নির্মাণ হইলে তাহা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা। এলাকার পুকুরগুলি একে একে অন্তর্হিত হইতেছে, জলাশয়ে বাড়ি গজাইতেছে, অথচ এলাকার কাউন্সিলর অন্ধকারে! জলাশয় বুজিলে কেবল নির্মাতা নহে, এলাকার কাউন্সিলরের ভূমিকা লইয়াও পুলিশি তদন্ত দরকার।
২০০৬ সালে কলকাতা পুরসভা একটি তালিকা প্রকাশ করে, তাহাতে জলাশয়ের সংখ্যা ৩৮৭৪। একটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৬ সালে তাহার ১৬৭০টি অবশিষ্ট রহিয়াছে। পুরসভা কিন্তু এ বিষয়ে নীরব। এক দশকে জিপিএস প্রভৃতি প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হইয়াছে, যে কেহ ঘরে বসিয়া নিজ এলাকার উপগ্রহ-প্রদত্ত মানচিত্র দেখিতে পারেন। কিন্তু পুরকর্তারা নিয়মিত রিপোর্ট বাহির করিতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিরস্কার করিলে পুরসভা নড়িয়া বসে, নূতন কমিটি গড়িয়া বিচিত্র কার্যসূচি ঘোষণা করে। জনসম্পদ রক্ষা করিবার ইহাই পদ্ধতি বটে। জনগণের অর্থে ড্রোন না কিনিয়া, ঈশ্বরপ্রদত্ত পা দুইখানি ব্যবহার করিয়া একটু ঘুরিয়া বেড়ান। মেদ কমিবে, জ্ঞান বাড়িবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy