Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

তথ্যের আকাল

অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হইবার পরিবর্তে তাহা লুকাইবার চেষ্টা এই প্রথম হয় নাই। ভারতে ক্রমবর্ধমান কর্মহীনতার তিক্ত সত্য এড়াইতে মোদী-সরকার দীর্ঘ দিন সে সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করিতে দেয় নাই।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

দেশের হাল বুঝিতে পরিসংখ্যান সংগ্রহ সরকারের একটি প্রধান কাজ। যে সরকার তাহার নিজের সংগৃহীত পরিসংখ্যানের উপর আস্থা রাখিতে পারে না, তাহার উপর দেশবাসী ভরসা করিবে কী রূপে? সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র বার্ষিক রিপোর্ট (২০১৭) সেই প্রশ্ন তুলিয়া দিল। তাহাতে বেশ কয়েকটি অপরাধ সংক্রান্ত কোনও তথ্যই প্রকাশিত হয় নাই। বুরোর আধিকারিকরা জানাইয়াছেন, ওই সকল অপরাধের তথ্য ‘অস্পষ্ট’ এবং ‘আস্থাযোগ্য নহে’। প্রশ্ন করিতেই হয়, কেন অস্পষ্টতা রহিল? ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ রিপোর্টের সাত দশকের ইতিহাসে এই প্রথম প্রকাশে বিলম্ব ঘটিল প্রায় এক বৎসর। ২০১৭ সালের রিপোর্ট প্রকাশ পাইল ২০১৯ সালে। বাড়তি এক বৎসর সময় লইয়াও আধিকারিকরা কেন পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে অস্পষ্টতা দূর করিতে পারিলেন না, তাহার জবাব দিবার দায় কি তাঁহাদের নাই? যে সকল অপরাধের তথ্য ‘অস্পষ্ট’ বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে, সেগুলি দেখিলে অবশ্য অন্য রূপ আশঙ্কা হয়। সমস্যা পদ্ধতির নহে, রাজনীতির। যে পঁচিশটি অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশিত হয় নাই, তাহার মধ্যে রহিয়াছে ‘গণপ্রহারে মৃত্যু’ (লিঞ্চিং), সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে গণধর্ষণ, গোরক্ষা-সংক্রান্ত অপরাধ, সাংবাদিকের প্রতি হিংসা, তথ্যের অধিকার আন্দোলনকারীর প্রতি হিংসা, প্রভৃতি। আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয় এই কারণে যে, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তথ্য সংবলিত অপর যে রিপোর্টটি প্রকাশ করে, তাহাতে একাদিক্রমে তিন বৎসর কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয় নাই।

অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হইবার পরিবর্তে তাহা লুকাইবার চেষ্টা এই প্রথম হয় নাই। ভারতে ক্রমবর্ধমান কর্মহীনতার তিক্ত সত্য এড়াইতে মোদী-সরকার দীর্ঘ দিন সে সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করিতে দেয় নাই। তাহাতে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা হইয়াছে। অর্থনীতিতে ভয়াবহ মন্দার তথ্য-পরিসংখ্যানও মন্ত্রীরা রসিকতা করিয়া উড়াইতেছেন। দেশবাসী বরং শুনিয়াছে, তথ্যের অধিকার প্রয়োগ করিবার কাজটিই অপ্রয়োজনীয়, কারণ প্রশাসন স্বতঃই স্বচ্ছ। এই ঘোষণা যিনি করিয়াছেন, সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেন কৃষকের আত্মহত্যা, কিংবা গোরক্ষকদের প্রহারে নিহত নাগরিকের সংখ্যা প্রকাশ করিতে পারিলেন না? ‘গণপ্রহারে হত্যা’ বিভাগটি ২০১৫ সালে যোগ হইয়াছিল, মহম্মদ আখলাক এবং পেহলু খানের হত্যার পরে। ২০১৬ সালের রিপোর্টে সে সম্পর্কে পরিসংখ্যান প্রকাশও পাইয়াছিল। এ বৎসর কেন এই বিভাগে সংগৃহীত তথ্য নির্ভরযোগ্যতা হারাইল? আরও একটি বিভাগে কোনও তথ্য প্রকাশিত হয় নাই এ বৎসরের রিপোর্টে। তাহা হইল, সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ।

যে তথ্য ‘নির্ভরযোগ্য’ নহে, তাহা প্রকাশ করা অবশ্যই অনুচিত। কিন্তু নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করিবার দক্ষতা ভারতের কি নাই? প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও তাঁহার অনুগামীরা সমীক্ষা ও সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ভারতকে বিশ্বের দরবারে অত্যুচ্চ স্থান দিয়াছিলেন। আজ সাধারণ বার্ষিক রিপোর্টগুলিও বিলম্বিত করিয়া, অসম্পূর্ণ রাখিয়া, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ সেই ঐতিহ্যের অবমাননা করিতেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

NCR Criminal Offence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy