Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ১
Delhi

নিদ্রিত ভারত জাগে

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সহজ কাজ নহে। ভারত সম্মিলিত ভাবে সেই কঠিন কাজটি করিতেছে। দীপিকার ন্যায় তারকাদের ক্ষেত্রে যেমন কঠিন, সাধারণ মানুষের জন্যও তেমনই। দি

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

প্রতিবাদের প্রত্যুষে জাগ্রত হইয়াছে ভারত। প্রতিবাদী ভারত এখন অতন্দ্র। মুম্বইয়ের গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া মিশিয়া গিয়াছে কলিকাতার পার্ক সার্কাসের সহিত, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সহিত বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের তফাত করা যাইতেছে না। এবং, ভারতব্যাপী এই প্রতিবাদে যুক্ত হইয়াছেন এমন অনেকে, যাঁহাদের ইতিপূর্বে এ-হেন প্রতিবাদী ভূমিকায় কখনও দেখা যায় নাই। সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গত তিন দশকে এই প্রথম বার ক্লাস বয়কট করিল। প্রতিবাদীদের তালিকায় বলিউডের তারকা আছেন, খেলোয়াড় আছেন, শিল্পপতি আছেন। তাঁহাদের উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ শুধু এই কারণে নহে যে তাঁহারা পরিচিত মুখ; এই কারণেও বটে যে এত দিন তাঁহারা শাসক-বিরোধিতা হইতে সচেতন ভাবে দূরে থাকিতেন। কেন, সেই প্রশ্নের বহুবিধ উত্তর সম্ভব। কিন্তু, আজ যখন তাঁহারা নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে, বা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়-জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত ছাত্রনিগ্রহের বিরুদ্ধে— সর্বোপরি দেশে সৃষ্টি হওয়া প্রবল অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে— নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করিতেছেন, তাহা বিনা ঝুঁকিতে নহে। শাসককে চটাইবার ঝুঁকি। দীপিকা পাড়ুকোন ইতিমধ্যেই টের পাইতেছেন, গেরুয়া শক্তিকে চটাইলে কী হয়, হইতে থাকে। এই ঝুঁকি লইয়াও যে তাঁহারা প্রকাশ্য প্রতিবাদ করিয়াছেন, তাহা এক জাগ্রত ভারতেরই কথা বলে।

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সহজ কাজ নহে। ভারত সম্মিলিত ভাবে সেই কঠিন কাজটি করিতেছে। দীপিকার ন্যায় তারকাদের ক্ষেত্রে যেমন কঠিন, সাধারণ মানুষের জন্যও তেমনই। দিল্লির সুতীব্র ঠান্ডায় যাঁহারা শাহিনবাগে অবস্থান করিতেছেন, তাঁহাদের অধিকাংশই অবস্থাপন্ন নহেন। তাঁহাদের নিকট এক দিন প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করিবার অর্থ, এক দিনের রুজিরুটি ছাড়া। তাঁহারা সেই সাহস দেখাইয়াছেন। জামিয়া বা জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীরা সমস্ত শরীরে টের পাইয়াছে, রাষ্ট্রশক্তির আগ্রাসন কত ভয়ঙ্কর। অমিত শাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়া ঘর ছাড়িতে বাধ্য হইয়াছেন যে তরুণী, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশের লাঠির সম্মুখে তর্জনী উঁচাইয়া দাঁড়াইয়াছে যে ছাত্রী, সতেরো দিনের সন্তানকে বুকে লইয়া শাহিনবাগের বিক্ষোভে বসিয়াছেন যে মা, তাঁহারা প্রত্যেকেই বিপুল ঝুঁকি লইয়া, বিপুল মূল্য দিতে প্রস্তুত হইয়া যুদ্ধে নামিয়াছেন। এমনকি যাঁহারা এখনও রাস্তায় নামেন নাই, কিন্তু ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করিয়া বিক্ষোভ জানাইয়া চলিতেছেন, ঝুঁকি তাঁহাদেরও। কে পথে নামিয়াছেন, কে নামেন নাই, তাহা নির্বিশেষেই রাষ্ট্র প্রতিবাদীদের চিনিয়া রাখিতেছে— ভারতের প্রতিবাদ এই ঝুঁকির মুখেই। ভারত তবু ভয় পায় নাই।

এত বিবিধ পরিচিতির, বিবিধ অঞ্চলের, বিবিধ ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-শ্রেণির মানুষ হঠাৎ এই ভাবে প্রতিবাদী হইয়া উঠিলেন কেন? কোন জনগণ-ঐক্য-বিধায়কের আহ্বান এই ভাবে ভারতকে এক করিল? এই প্রশ্নের একটিই উত্তর সম্ভব— মোদী-শাহের শাসন এমন এক লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করিয়াছে যে, তাহা সরাসরি আঘাত হানিয়াছে ভারতের আত্মায়। ভারতের হৃদয়কে বিভাজনের কৃপাণে বিঁধিয়াছে। ভারতের হৃদয়ের রক্তই প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ হইয়া উৎসারিত হইতেছে। এবং, এই প্রতিবাদ দেখাইল, তেমন কারণ ঘটিলে কোনও রাজনৈতিক দলের উদ্যোগ ভিন্নই সাধারণ মানুষ শাসকের সিংহাসন কাঁপাইয়া দিতে পারে। তবে কি রাজনৈতিক দলগুলির আর কোনও দায়িত্ব থাকে না, অতঃপর মানুষের হাতেই ক্ষমতা? না। এই দেশব্যাপী আন্দোলনকে একটি বৃহত্তর ছাতার নীচে আনিবার, তাহাকে আরও তীক্ষ্ণ করিয়া তুলিবার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের লইতে হইবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy