নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রাজনীতিতে পথ সব সময় কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। অস্বস্তির কাঁটা অনেক সময়ে মাথা তোলে। কিন্তু কাঁটার আভাস পেলেই কোনও পথ পরিত্যাগ করতে হবে, এমন ভাবনা বাস্তবসম্মত নয়।
দেশের মসনদ দখলের আগে নরেন্দ্র মোদীরা ঘোষণা করেছিলেন, প্রতি বছর দু’কোটি কর্ম সংস্থান করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পালিত হল, খতিয়ে দেখার সময় হয়েছে। কিন্তু সেই অগ্নিপরীক্ষা সম্ভবত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর সরকার। গত পাঁচ বছরে দেশের কর্ম সংস্থান ঠিক কতটা হয়েছে সেই রিপোর্ট প্রকাশিতই হতে দেওয়া হল না। এতে মুখ বাঁচানো যাবে বলে হয়ত নরেন্দ্র মোদীরা ভাবলেন। কিন্তু আসলে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রশ্নচিহ্নগুলো আরও বড় আকার ধারণ করল। প্রশ্নচিহ্নগুলো এড়িয়ে না গিয়ে যদি প্রকৃত উত্তরটা প্রকাশ্যে আসতে দেওয়া হত, গত সাড়ে চার বছরে কর্মসংস্থানের সঠিক হিসেব যদি দেশবাসীকে জানতে দেওয়া হত, তাতে সাময়িক অস্বস্তির কাঁটা পায়ে বিঁধলেও মিথ্যাচার বা তথ্য গোপনের দীর্ঘমেয়াদী কালিটা গায়ে লাগত না।
দেশের পরিসংখ্যান কমিশনার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন পিসি মোহনন। ইস্তফা দিয়েছেন কমিশনের আরও এক সদস্য। কী কারণে ইস্তফা? মোদী জমানায় কেন্দ্রীয় সরকার কত কর্মসংস্থান করতে পারল, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণায় ইস্তফা। ইস্তফার পরে তোপ দেগেছেন মোহনন। তাঁর কাজে কেন্দ্রীয় সরকার যে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে, বেশ স্পষ্ট করেই সেই অভিযোগ তিনি তুলেছেন।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
ঘটনাপ্রবাহ কি মোদী সরকারের বিন্দুমাত্র সুবিধা করল? সুবিধা তো নয়ই, বরং অসুবিধাই যে হল, যে কোনও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সে বিষয়ে একমত হবেন। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কতটুকু সাফল্য দেখাতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী, তা নিয়ে প্রশ্ন গত কয়েক বছর ধরেই উঠছিল। বছরে দু’কোটি করে কর্মসংস্থান দেওয়ার যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ২০১৪-য় মোদীরা শুনিয়েছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি কত শতাংশ পূরণ করতে পারলেন, দেশকে তা জানানোর সময় এসে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা বা অমিত শাহের বিজেপি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেই হিসেব জানান বা না জানান, দেশের পরিসংখ্যান কমিশন হিসেব জানাতে প্রস্তুত ছিল বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মোদীরা সেই প্রস্তুতি ভেস্তে দিলেন বলে অভিযোগ উঠছে।
আরও পড়ুন: পরিসংখ্যান কমিশন: চাপে ব্যাখ্যা কেন্দ্রের
রাহুল গাঁধী-সহ গোটা বিরোধী শিবির বার বার কর্মসংস্থানের প্রশ্নে আক্রমণ করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সংক্রান্ত ঘটনাবলীর উপরে আধারিত একটি হিন্দি ছবির একটি সংলাপকে তুলে ধরে জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে যখন তত্পর নরেন্দ্র মোদী-মনোহর পর্রীকর-নির্মলা সীতারামনরা, ‘হাও ইজ দ্য জোশ’ রবে যখন দেশকে মুখরিত করে তোলার চেষ্টায় বিজেপি, তখন পাল্টা ‘হাও ইজ দ্য জব’ রব তুলে বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। ঠিক তেমনই এক পরিস্থিতিতে সামনে এল পরিসংখ্যান কমিশনারের ইস্তফার খবর, সামনে এল কর্মসংস্থানের হিসেব প্রকাশিত হতে না দেওয়ার অভিযোগ। সরকারের অস্বস্তি বাড়বে বই কমবে না।
ঘটনাপ্রবাহ অস্ত্র তুলে দিল বিরোধীদের হাতে। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রশ্নবাণ এ বার আরও শানিত করবেন রাহুল গাঁধী। নরেন্দ্র মোদী চুপচাপ বসে থাকবেন, এমনটা ভাবলেও ভুল হবে। কেন প্রকাশিত হতে পারল না পরিসংখ্যান কমিশনের দেওয়া তথ্য, কর্মসংস্থানের আসল চিত্রটা কী— এ সব প্রশ্নের কোনও না কোনও জবাব নিয়ে বিজেপি ঠিক সামনে আসবে। কিন্তু শুধু জবাব দিলেই হয় না, জবাবটা ঠিক বিশ্বাসও করাতে হয়। এ দেশের ভাগ্য নির্ধারণে নির্বাচনই শেষ কথা বলে। আর কে না জানেন যে, নির্বাচন লড়া হয় কতকগুলো ধারণার উপরে দাঁড়িয়ে। রাহুলের প্রশ্ন বা মোদীর উত্তর— জনসাধারণের ধারণায় বেশি দাগ কাটবে যেটা, নির্বাচনে সুবিধা পাবে সেটাই। আর আমরা সকলেই জানি, এ দেশের নির্বাচনী রঙ্গমঞ্চে প্রশ্ন তোলার অবকাশ যাঁর কাছে থাকে, তিনি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। অতএব কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান গোপন করার অভিযোগটা উঠতে না দিলেই বোধহয় ভাল করতেন নরেন্দ্র মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy