নির্যাতনের বহতা ধারা
২০১৯ সালের ভারতে নিয়ম হয়ে গেল এটাই? তেলঙ্গানার তরুণী চিকিৎসক আর উন্নাওয়ের দলিত মেয়েটি কি সেই নিয়মেরই প্রতীক হয়ে উঠলেন? ত্রিপুরাতেও যেন উন্নাওয়েরই ছায়া। এক কিশোরীকে দু’মাস গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারার অভিযোগ। বছরভর মেয়েদের ওপর নিপীড়ন চলল। পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। কলকাতার গার্ডেনরিচের সাত বছরের শিশুও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি কালীঘাট মন্দির চত্বরে ভিক্ষাজীবী দুই নাবালিকা। এই জানা খবরের বাইরে লুকিয়ে রয়েছে আরও অসংখ্য অজানা খবরেরা। সেখানে একরত্তি শিশু থেকে প্রৌঢ়া— যৌনহিংসা রেয়াত করেনি কাউকেই। বিচার হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। উন্নাওয়ের অপর এক ধর্ষণ মামলায় আমৃত্যু কারাবাসের সাজা পেয়েছে বিজেপির বহিষ্কৃত বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার (ছবিতে)। নির্ভয়া মামলায় অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। মিলল হাতেগরম বিচারের এক বিপজ্জনক নিদর্শনও। তেলঙ্গানার ঘটনায় চার অভিযুক্তই নিহত হল পুলিশি এনকাউন্টারে। জনতার সঙ্গে দেশের রাজনীতিবিদদের এক বড় অংশও এই অ-বিচারকেই সমর্থন জানালেন।
নবনির্মাণ ও নবনিপীড়ন
কেবল জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে নয়, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসেই একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর হয়ে থাকবে ২০১৯। এই প্রথম দেশের কোনও প্রদেশকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হল। সঙ্গে কাশ্মীরের বিশেষ ব্যবস্থা ৩৭০ ধারাও প্রত্যাহৃত হল। সংসদে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই কাশ্মীর জুড়ে ভরিয়ে দেওয়া হল নিরাপত্তা বাহিনী। বন্দিদশায় পৌঁছে গেল উপত্যকা। বন্ধ হল ইন্টারনেট নামক সংযোগসূত্রও। নেতানেত্রীদের বিনা অজুহাতে বন্দি করা হল, নাগরিকদের উপর চলল প্রবল দমনপীড়ন— কাশ্মীরের এত দিনের প্রেক্ষিতেও যা মর্মান্তিক। স্কুল কলেজ ব্যবসাবাণিজ্য, জীবনযাপনের সব দিক এখনও বন্ধ, স্থগিত, অবরুদ্ধ। কিন্তু যে হেতু স্থানটি কাশ্মীর, দিল্লির নেতারা দাবি করছেন— পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’: গুলি খেয়ে বা বোমার বিস্ফোরণে মানুষ মারা যাচ্ছেন না যখন! এ ছাড়াও ফেব্রুয়ারির পুলওয়ামা হানা ও তৎপরবর্তী বালাকোটের খাতিরে জাতীয় নির্বাচনপর্বেও সব আলোচনা কেন্দ্রে থাকল কাশ্মীরই।।
২০১৯ আর বিশ বাঁও জল
বেকারত্ব বাড়ছে, সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রেও কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। গাড়ি থেকে বিস্কুট, বিক্রি কমল সব পণ্যেরই। আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে কমতে এসে ঠেকল সাড়ে চার শতাংশে। আর, সরকার প্রাণপণ অস্বীকার করে গেল এই বাস্তব। যে পরিসংখ্যান সরকারের পক্ষে বিপজ্জনক, প্রকাশ আটকে দিল তার। খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কার ‘সরকারি’ জবাব দিলেন কিছু চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। অর্থনীতি এমন বেহাল কেন, তার কিছু উত্তরও মিলল। রঘুরাম রাজন (ছবিতে) বললেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের কথায় ভারতীয় অর্থনীতির ওঠাবসা, আর এই অতিকেন্দ্রীয়তাই বিপদ ডাকছে। মনমোহন সিংহ আর কৌশিক বসু বললেন, বিশ্বাসের অভাবই ভারতীয় অর্থনীতিকে চূড়ান্ত বিপদের দিকে ঠেলছে। শিল্পপতি রাহুল বজাজ বললেন, সবার মনে ভয়— সরকারের সমালোচনা করলেই রাজরোষে পড়তে হবে। গভীর দুশ্চিন্তায় অর্থনীতির বছর ফুরল।
ভরসা থাকুক
আজকের ভারতে এক ব্যতিক্রমের নাম নাজ়মা আখতার (ছবিতে)। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য। নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ ঢুকে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, লাইব্রেরিতে। আহত ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্য জানালেন, তিনি ছাত্রদের সঙ্গে আছেন। বছরভর দেশ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলা চলল। জেএনইউ থেকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর— আক্রান্ত সব ক্যাম্পাস। কোথাও পুলিশ, কোথাও গৈরিক বাহুবলীরা আক্রমণকারীর ভূমিকায়। জেএনইউ-এর ওপর নানা অজুহাতে নানা হামলা চলার পর বছরশেষে প্রতিবাদরত ছাত্রদের দিল্লির রাস্তায় নির্মম ভাবে মারল পুলিশ। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হল আইআইটি কানপুরে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে মুসলমান অধ্যাপক নিয়োগের প্রতিবাদ করল এক দল ছাত্রছাত্রী। অর্থাৎ, ২০১৯— শাসকদের সঙ্গে ছাত্রদের যুদ্ধের বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy