Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

‘সংশোধন’

গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বর্ষপূর্তির ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা শোনা গেল। বিরল ব্যতিক্রম বলিতে হইবে।

বহু সঙ্কট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে মৌন অবলম্বন করিতেই দেখিয়াছে দেশ।

বহু সঙ্কট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে মৌন অবলম্বন করিতেই দেখিয়াছে দেশ।

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

এক বৎসর হইল, নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হইয়াছেন। কেমন কাটিয়াছে, এই প্রথম (অর্থাৎ সব মিলাইয়া, ষষ্ঠ) বৎসরটি? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মহাশয়ের মতে, গত ষাট বৎসরে ভারতবর্ষ যে ‘ভুল’গুলির মধ্যে নিমজ্জিত ছিল, মোদী তাহা সবই সংশোধন করিয়া ফেলিয়াছেন। স্বীকার করিতেই হইবে, অমিত শাহদের মতে যাহা ‘ভুল’— গত এক বৎসরে তাহার আমূল ‘সংশোধন’ হইয়াছে বটে। ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হইয়াছে। ঘটনাক্রমে, এই এক বৎসরের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টও অযোধ্যা জমি বিবাদের রায় রাম জন্মভূমির পক্ষেই দিয়াছে। বুঝিতে অসুবিধা হয় না, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসিয়া একেবারে হিন্দুত্ববাদী শিবিরের গোড়ার বিষয়গুলিতে মন দেওয়াই প্রধান কাজ বলিয়া মনে করিয়াছেন মোদী। এখন কথা হইল, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা যাহাকে ‘সংশোধন’ জ্ঞান করেন, ভারত নামক ধারণাটির সহিত তাহার বিরোধ রীতিমতো প্রত্যক্ষ এবং অনিবার্য। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বই হউক বা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কাড়িয়া লওয়াই হউক— এই কাজগুলি হয় দেশের সংবিধানকে আঘাত করে, নতুবা এমন করেই তাহার বিকৃত প্রয়োগ ঘটায় যাহা সংবিধানের মূল আদর্শটির বিরুদ্ধে, ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গড়িয়া তুলিবার পরিপন্থী। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বিতীয় দফার প্রথম বৎসর পূর্তিকে ভারতাত্মার দলন হিসাবেই দেখিতে হইবে, উপায় নাই।

গত এক বৎসরের আর একটি প্রধান কৃতিত্ব: দেশের অর্থনীতির অভূতপূর্ব অধোগতি। নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিয়াছেন, কিন্তু অর্থনীতি ভাসিয়া গিয়াছে যমুনার ঘোলা জলে। এক দিকে গত দফার ভ্রান্ত নীতি, আর অন্য দিকে বিপদ বুঝিয়াও তাহা স্বীকার না করিতে পারিবার, সংশোধন না করিবার অবান্তর অহং— অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রধানতম কারণ এই দুইটি। অথচ নরেন্দ্র মোদীরা যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে বর্ষপূর্তি পালন করিলেন, তাহাতে আশাবাদ এমনই প্রবল যে বুঝিবারই উপায় নাই, দেশে এমন বৃহৎ সঙ্কট চলিতেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে একটি পত্রে বলিয়াছেন, অতিমারি হইতে আর্থিক উত্তরণের নিদর্শন হিসাবে ভারত গোটা দুনিয়ায় সর্বাগ্রে থাকিবে। কতখানি ভিত্তিহীন, যুক্তিহীন এই কথা, তাহার প্রমাণ— সেই দিনই জানা গিয়াছে যে অতিমারি থাবা বসাইবার পূর্বেই ভারতীয় অর্থনীতি ভূপতিত হইয়াছিল, সরকারি অব্যবস্থার ফলেই। এই বিরাট সত্য জানিয়াও যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তাহা চাপিয়া যান, তখন বলিতেই হয়, তাঁহার শাসনের অভিজ্ঞান ইহাতেই নিহিত। দেশে দশ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, আরও অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা সুগভীর সঙ্কটে— সেই সময় দুনিয়া জয় করিবার খোয়াবনামা রচনা চলিতেছে।

গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বর্ষপূর্তির ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা শোনা গেল। বিরল ব্যতিক্রম বলিতে হইবে। ইতিপূর্বে বহু সঙ্কট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে মৌন অবলম্বন করিতেই দেখিয়াছে দেশ। বিপন্ন মানুষ বা জনগোষ্ঠী বিষয়ে তাঁহার ‘মনের কথা’ শোনা যায় নাই, সে গো-সন্ত্রাসের শিকারই হউক, কিংবা নাগরিকপঞ্জির জাঁতাকলে নিজভূমে পরবাসীরাই হউক, কিংবা দাঙ্গাবিধ্বস্ত সংখ্যালঘুই হউক। তবে কি না, এই অতি-বিলম্বিতত উল্লেখের মধ্যেও এক বিপুল দ্বিচারিতা জাজ্বল্যমান। সরকারি অবহেলা ও অবজ্ঞায় অবর্ণনীয় কষ্টে নিক্ষিপ্ত, কখনও বা মৃত্যুপথে প্রেরিত, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করিলেন বটে, কিন্তু তাহাদের জন্য কোনও সহায়তা বা সংস্থানের কথা বলিলেন না। না, এমনকি বর্ষপূর্তির ইনাম হিসাবেও নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Migrant workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy