ছবি: সংগৃহীত
তুমুল হট্টগোলের মধ্যে রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হইয়া গেল কৃষি-বিষয়ক বিল দুইটি। লোকসভায় শাসকপক্ষের সংখ্যার জোর যতখানি, রাজ্যসভায় সেই শক্তি নাই। এডিএমকে, জেডি-ইউ এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস ব্যতীত অন্য শরিকরা এই কৃষি সংস্কারের প্রশ্নে বিজেপির পার্শ্বে দাঁড়ায় নাই। ফলে, বিল দুইটি লইয়া ভোটাভুটি হইলে রাজ্যসভায় তাহা পাশ করানো যাইত না, এমন সম্ভাবনা ছিল। সরকারপক্ষ সেই ঝুঁকি লইতে চাহে নাই। গণতন্ত্র নামক ধারণাটির প্রতি অসম্মান কোন পর্যায়ে গেলে কৃষি বিলের ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেও সংসদের উচ্চতর কক্ষটিকে এই ভাবে পাশ কাটাইয়া যাওয়া যায়, নরেন্দ্র মোদীর শাসনে এই প্রশ্নটির উত্তর জানা। কিন্তু, সরকারপক্ষ এখনও যে কথাটি বুঝিতে পারে নাই, তাহা হইল, গণতন্ত্রের এই অভাব তাহাদেরও উপকার করিতেছে না। আইনসভায় সংখ্যার জোর থাকিলে বিরোধী মতের উপর রোলার চালাইয়া দেওয়া যায়, অধ্যাদেশের দ্বারা শাসন করা সম্ভব হয়। কিন্তু, রাজনীতির পরিসরটি সংসদের উভয় কক্ষে সীমাবদ্ধ নহে— তাহা ভারতের একশত চল্লিশ কোটি মানুষের মধ্যে বিস্তৃত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অর্থ হইল, যে কোনও সিদ্ধান্তকে সেই মানুষের বৈধতার মানদণ্ডে পাশ করাইয়া আনা। তাহার জন্য গণতন্ত্রের মূল ধর্মটির অনুশীলন করিতে হয়— আলোচনার মাধ্যমে শাসন। তাহা না করিলে পরিণতি কী হইতে পারে, শিরোমণি অকালি দলের অবস্থানেই তাহা স্পষ্ট।
যে দুইটি বিল লইয়া এই বিপুল রাজনৈতিক অসন্তোষ জমা হইয়াছে, সেই ফার্মার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল, ২০২০ এবং ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাশিয়োরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০ কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের পথে অতি জরুরি দুইটি পদক্ষেপ। কৃষিকে বাজারের সহিত সংযুক্ত করিতে, মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিকে ছাঁটিয়া ফেলিতে এবং কৃষির সার্বিক আধুনিকীকরণের স্বার্থে সংস্কারগুলি জরুরি। কিন্তু, তাহার অপব্যবহারের আশঙ্কাও উড়াইয়া দেওয়া যায় না। কৃষকের স্বার্থরক্ষায় সরকার কী কী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিয়াছে, কী ভাবে বৃহত্তর কায়েমি স্বার্থের অনুপ্রবেশ ঠেকাইবার কথা ভাবা হইয়াছে, তাহা এখনও সাধারণ মানুষের— বিশেষত কৃষিজীবীদের নিকট স্পষ্ট নহে। বিশেষত, নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে সরকার যে ভাবে কতিপয় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করিয়াছে বলিয়া অভিযোগ, তাহাতে আতঙ্ক তীব্রতর হইয়াছে। কেহ আশঙ্কা করিতেই পারেন, এই ধরনের চট-জলদি সংস্কারে লাভবান হইবে নানাবিধ বেসরকারি স্বার্থ। তাই মানুষের সম্মতি আদায় না করিয়াই সংস্কার-সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দেওয়ার চেষ্টা হইলে প্রতিরোধ হওয়াই স্বাভাবিক। তাহাতে সর্বাধিক ক্ষতি সংস্কারের। এই প্রেক্ষিতেই বিলটি লইয়া সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনা, তর্কবিতর্ক জরুরি ছিল। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্থান দেওয়া উচিত ছিল, কারণ তাহাতেই ধ্বনিত হইত দেশের মানুষের সংশয় ও আশঙ্কা। সিদ্ধান্ত যাহাই হউক না কেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটিকে ঠিক ভাবে চলিতে দিলে দেশবাসী সরকারের লক্ষ্য বিষয়ে একটু আশ্বস্ত হইতেন।
দুর্ভাগ্য, গণতান্ত্রিকতার সু-অভ্যাস বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাই। শুধু কৃষি বিলই নহে, শিক্ষা বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি অতি তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কারও এই অতিমারি-আক্রান্ত সময়ের ফসল, যখন সংসদে আলোচনার উপায়মাত্র ছিল না। যে সময় রাজনৈতিক মতভেদ ভুলিয়া সকল দলের হাত মিলাইয়া একসঙ্গে কাজ করিবার কথা, তখন কি এই বিভেদবর্ধক সুদূরপ্রসারী সংস্কার করা সত্যই প্রয়োজনীয়? সমাজ-অর্থনীতির অনেক জরুরি ব্যাধি নিরসন যখন প্রথম ও প্রধান কাজ, তেমন সময়ে এই সকল পদক্ষেপকে অ-গণতন্ত্রের আবাহন বলিলে কি ভুল হইবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy