গ্রীষ্মের হাওয়ায় হঠাৎ হেমন্তের ছোঁয়া। তাহাতে অবশ্য শান্তি নাই, আছে আশঙ্কা। এই এপ্রিলে নগদশূন্য এটিএম-এর সারি ফিরাইয়া আনিতেছে ২০১৬-র নভেম্বরের অনিবার্য স্মৃতি, নরেন্দ্র মোদীর খামখেয়ালে যখন আচমকা অচল হইয়াছিল কার্যত সব এটিএম যন্ত্র। প্রশ্ন হইল, শুধু কি সেই আতঙ্কের স্মৃতিটুকুই ফিরিতেছে, না কি আতঙ্কের প্রকৃত কারণ আছে? অর্থনীতির যাবতীয় যুক্তি দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিকেই সত্য বলিয়া দাবি করিতেছে। ২০১৬-র নভেম্বরের সহিত মিল প্রচুর— সর্বাপেক্ষা বড় মিল, গত বারের অব্যবস্থা হইতে সরকার শিক্ষা লয় নাই, ফলে এই সঙ্কটের পিছনেও অব্যবস্থার ভূমিকা বিপুল। ২০০০ টাকার নোট ছাপানো বন্ধ হইয়াছিল, তাহার পরিবর্তে নূতন ২০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়িতেছিল সরকার। সমস্যা হইল, এটিএম-এর নোট ধারণক্ষমতা নির্দিষ্ট। ২০০০ টাকার বদলে ২০০ টাকার নোট ভরিলে একটি মেশিনে থাকা মোট নোটের অর্থমূল্য দশ ভাগের এক ভাগ হইয়া যায়। সেই টাকা যে দ্রুত ফুরাইবে, এটিএমগুলি অচল হইবে, এই কথাটি সরকার ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই।
শুধু এই অবিবেচনাতেই অবশ্য নটেগাছ মুড়ায় নাই। হিসাব বলিতেছে, ভারতীয় অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে যত নগদ থাকিবার কথা, তাহার তুলনায় প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নগদ বাজারে কম আছে। অর্থাৎ, এটিএম-এ নগদের যে সঙ্কট চলিতেছে, তাহা শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা নহে, বরং ইহা কাঠামোগত সঙ্কট। সমস্যা আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছে দুইটি সম্ভাব্য প্রবণতা। এক, মানুষ নগদ ধরিয়া রাখিতেছেন। দুই, সঙ্কটের লক্ষণ টের পাওয়ামাত্র ব্যাঙ্ক হইতে নগদ তুলিবার ধুম পড়িয়াছে। দ্বিতীয় প্রবণতাটি অস্বাভাবিক নহে। বিশেষত, নোটবাতিলের পর নগদের অভাবে যে ভোগান্তি হইয়াছিল, তাহার পর কেহ যদি আগেভাগেই সাবধান হইতে চাহেন, তাঁহাকে দোষ দেওয়া মুশকিল। প্রধানমন্ত্রী বরং প্রথম প্রবণতাটির কথা ভাবিয়া দেখিতে পারেন। কেন মানুষ ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’-তেই হাতে নগদ ধরিয়া রাখিতেছেন? নূতন ২০০০ টাকার নোটগুলি দৃষ্টিনন্দন বলিয়া? না কি যে কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদে ভারতীয় অর্থনীতিকে তিনি পথে বসাইয়া দিলেন, তাহা পুরাদস্তুর ফিরিয়া আসিতেছে?
নগদের অভাবের বৃহত্তম কারণ অবশ্য সরকারের এক বিচিত্র বিশ্বাস— নোটবাতিলের পর ভারতের মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছেন, ফলে আর নোটের প্রয়োজন নাই। অনুমান করা চলে, যে হেতু এই বিশ্বাসটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর, ফলে অর্থ মন্ত্রক বা ব্যাঙ্কের কর্তারা আর তাহাকে প্রশ্ন করিবার সাহস পান নাই। হয়তো, প্রশ্ন করিবার প্রয়োজনই অনুভব করেন নাই। পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার ঘাটতি নেহাত তুচ্ছ নহে। কেন ভারত ডিজিটাল লেনদেনে দড় হইতে পারে নাই, সেই আলোচনা অন্যত্র। কিন্তু, কোনও বাস্তব প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতে এমন বিপজ্জনক পথে হাঁটিবার ঘটনাটি বলিয়া দেয়, ভারতীয় অর্থনীতি কাহাদের হাতে আছে। ২০১৬-র নভেম্বর হইতে সরকার শিক্ষা লয় নাই, ফলে ২০১৮-র এপ্রিলে ফের সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে। কর্তারা এই দফায় শিখিবেন, সেই ভরসাই বা কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy