দিন কয়েক আগে সংবাদপত্রে একটা ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম। সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে বসে মিডডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা! কখনও গাছতলায়, কখনও খোলা আকাশের নীচে বসেও মিডডে মিল খেতে দেখা যায় পড়ুয়াদের। অথচ এমন বেশ কিছু স্কুল আছে যেখানে অব্যাবহৃত ক্লাসরুম বন্ধ থাকলেও তা পড়ুয়াদের সুস্থ ভাবে খাবার খাওয়ার জন্য খুলে দেওয়া হয় না। বছর দু’য়েক আগে বহরমপুর শহরের এক নামী বিদ্যালয়ের ছেলেদের ড্রেনের পাশে খেতে দেখেছি। আসলে এগুলোর নেপথ্যে রয়েছে মিডডে মিল ব্যবস্থার উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি আমাদের অজ্ঞতা, অসংবেদনশীলতা, উদাসীনতা এবং আমাদের অদক্ষতা।
অন্য দিকে, জেলার বেশ কিছু প্রাথমিক ও হাইস্কুলে মিডডে মিল সাফল্যের সঙ্গে চলে। যেখানে রয়েছে মিডডে মিলের জন্য অসাধারণ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ। যেখানে মিডডে মিল খাওয়া একটি আনন্দময় ব্যাপার। এটা অনস্বীকার্য যে, বর্তমানে দুর্মূল্যের বাজারে মিডডে মিলের বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ খুবই কম। আরও বরাদ্দ দরকার। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে ওর মধ্যেও একটু কষ্ট করে ভাল খাওয়ানো যেতে পারে।
অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, মিডডে মিল কি পড়াশোনার ক্ষতি করে? উত্তরটা হচ্ছে, না। মিডডে মিল ক্লাস বা পড়াশোনার কোনও ক্ষতি করে না। যে সব স্কুলের প্রধানশিক্ষক দক্ষ নন এবং পরিচালন ব্যবস্থা ঢিলে সেই বিদ্যালয়ে মিডডে মিলের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। ভাল পরিবেশে ভদ্রস্থ মিডডে মিল খাওয়া পড়ুয়াদের অধিকার। আর ভাল মানের মিডডে মিল সরবরাহ বিদ্যালয়ের প্রধানদের একটি দায়িত্ব। বিদ্যালয়ে খুব সহজে কারও কোনও ক্লাসের ক্ষতি না করে সুষ্ঠু ভাবে, মিডডে মিল খাওয়ানো যেতে পারে। তার জন্য প্রথমেই দরকার একটি দক্ষ মিডডে মিল টিম। প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকা ছাড়াও দরকার কয়েক জন আন্তরিক সহকারী শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। তাঁদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হয়। এ ভাবে ভাবা যেতে পারে—
১) এক জনকে টিম লিডার হতে হবে যিনি সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তিনিই আর্থিক হিসেবটা রাখবেন। তিনি প্রধান শিক্ষক বা সহ প্রধান শিক্ষক হতে পারেন বা মিডডে মিল নোডাল শিক্ষক।
২) আনাজ, অন্য জিনিসপত্র কেনা ও গ্যাস সরবরাহের দল গড়া যেতে পারে।
৩) স্টোরকিপার থাকবেন। যিনি কত জিনিসপত্র পাচ্ছেন ও রোজ কত খরচ করছেন তার হিসেব রাখবেন।
৪) এক জন অশিক্ষককর্মী বা শিক্ষক রোজ কত পড়ুয়া মিডডে মিল খাচ্ছে তার হিসেব রাখা, চালের হিসেব রাখা ও মিডডে মিল সংক্রান্ত খাতাপত্র তৈরি রাখার কাজ করবেন। তিনি স্টোরকিপারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবেন। এই কাজটি শিক্ষক আধ ঘণ্টার মধ্যে ক্লাসের কোনও ক্ষতি না করেই করে ফেলতে পারবেন।
মিডডে মিল ব্যবস্থায় প্রতিটি শ্রেণির, প্রতিটি বিভাগের খাদ্যমন্ত্রীদের কাজে লাগানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাদের কাজ বিদ্যালয়ের প্রার্থনার পরেই অফিসে গিয়ে অশিক্ষক কর্মীর কাছে কত জন পড়ুয়া উপস্থিত হয়েছে তার সংখ্যাটি জানিয়ে আসা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অশিক্ষক কর্মী নেই। সেখানে এক জন শিক্ষকই এই কাজটি করবেন। চারটি শ্রেণিকক্ষে ক’জন পড়ুয়া খাবে তা জানতে দু’মিনিট লাগবে। স্টোর থেকে খাবার দিতে বড়জোর পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগবে। ১০টা পঞ্চাশের পরিবর্তে এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি দশ মিনিট দেরি করে ১১টায় ক্লাসে যান, খুব ক্ষতি হবে না।
তা ছাড়া দু’টি ক্লাসের ফাঁকে মিডডে মিলের রান্নাঘরে পাঁচ মিনিট সময় দিলে রান্না কেমন হচ্ছে, সব কিছু ঠিক আছে কি না দেখা যেতে পারে। আসলে সবটাই সদিচ্ছা। সদিচ্ছা থাকলে এগুলো ক্লাসের ফাঁকে করাই যায়। এতে ক্লাসের কোনও ক্ষতি হয় না।
সুষ্ঠুভাবে মিডডে মিল পরিচালনার জন্য যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন—
১) হাত ও থালা ধোওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কল ও সাবানের ব্যবস্থা।
২) লাইনে দাঁড়াবার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও খাবার নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কাউন্টার। প্রত্যেকটি কাউন্টারে তিন জন বা চার জন রাঁধুনি থাকবেন। প্রথম জন ভাত, দ্বিতীয় জন ডাল, তৃতীয় জন সব্জী, চতুর্থ জন ডিম পরিবেশন করবেন।
৩) দরকার পর্যাপ্ত ডাইনিং হল। যেখানে পড়ুয়ারা খাবার নেওয়ার পরে বসে খাবে। ডাইনিং হল পরিচ্ছন্ন এবং আলো-বাতাসপূর্ণ হবে। এখন ব্লক অফিস থেকে স্কুলগুলোতে খুব সুন্দর করে ডাইনিং হল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। ডাইনিং হল না থাকলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষকে ডাইনিং হল বানিয়ে নেওয়া যায়। পাঁচশোর নীচে পড়ুয়া থাকলে আটশো বর্গফুটের শ্রেণিকক্ষকে ডাইনিং হল তৈরি করলেই চলবে। পনেরোশো পড়ুয়া হলে তিনটে ক্লাসরুমে ডাইনিং হল বানিয়ে নিন।
৪) খাওয়া শেষে হাত ও থালা ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। পরিস্রুত পানীয় জল গ্রহণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৫) রান্নার জন্য পর্যাপ্ত সামগ্রী থাকবে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে খাবার প্রস্তুত হয়ে যায়।
৬) বড় স্কুলে ছয় থেকে আটটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকবে। সব সময় দুটো সিলিন্ডার মজুত থাকবে।
৭) অবশ্যই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকবে।
প্রধান শিক্ষক, লস্করপুর হাইস্কুল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy