Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

জরুরিতর

মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা ও সত্য অপ্রমাণ করাই গুজবের পবিত্র কর্তব্য।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৩
Share: Save:

মাস্ক পরা ক্ষতিকর বলিয়া যে অভিযোগ উঠিতেছিল, তাহা ভিত্তিহীন, জানাইয়াছেন গবেষকেরা। কথা রটিয়াছিল, যাঁহাদের ফুসফুসের অসুখ আছে, দীর্ঘ ক্ষণ মাস্ক পরিলে তাঁহাদের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটিয়া যাইতে পারে। দীর্ঘ সময় নাক-মুখ আবৃত রাখিলে নাকি প্রশ্বাসের সহিত কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রবিষ্ট হইবার আশঙ্কা তৈরি হয়, যাহার ফল অক্সিজেনের অভাব। মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা ও সত্য অপ্রমাণ করাই গুজবের পবিত্র কর্তব্য। উক্ত শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন কিংবা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের আশঙ্কাটি যথার্থ নহে, জানাইয়াছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা। বরং অসুস্থদেরই কোভিডে বিপদের আশঙ্কা সর্বাধিক, ফলে তাঁহাদের সংক্রমিত হওয়া চলিবে না। কোনও ব্যক্তির প্রশ্বাসের সহিত যে পরিমাণ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করিতে পারে, তাহার পরিমাণ বহুলাংশে হ্রাস করিতে সক্ষম মাস্ক। অতএব, মাস্ক পরা অপরিহার্য। এবং, মাস্ক না পরিবার কী বিপদ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোভিডে আক্রান্ত হইবার সংবাদটি তাহা স্পষ্ট করিতেছে।

কোন সুবিধা পাইতে কতখানি মূল্য চুকাইতে হইতেছে, সেই হিসাবটি কষিয়া দেখা বিচক্ষণতার প্রথম পাঠ। মাস্কের ক্ষেত্রে সেই হিসাবের পাল্লা সুবিধার দিকে বিষম রকম ঝুঁকিয়া আছে— স্বাভাবিক অবস্থায় প্রশ্বাসের সহিত যত জীবাণু ফুসফুসে প্রবেশ করিতে পারে, এই বস্ত্রখণ্ড তাহার সিংহভাগকে আটকাইয়া দেয়। ফলে, সংক্রমিত হইবার ঝুঁকি কমে। অসুবিধা বলিতে খানিক অস্বস্তি। মার্কিন মুলুকে মাস্ক-বিরোধীরা অবশ্য শ্বাস লইবার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের রব তুলিয়াছিলেন। এক্ষণে প্রশ্ন, প্রাণে বাঁচিবার স্বাধীনতার বিপরীত পাল্লায় বিনা বাধায় শ্বাস লইবার স্বাধীনতাকে চাপাইলে কাঁটা কোন দিকে হেলিয়া থাকিবে? বস্তুত, মাস্ক পরিধান করা বা না করার প্রশ্নটি মানসিকতার। কেহ মাস্ক না পরিয়া আপনাকে অকুতোভয় প্রমাণ করিতে পারেন, কিন্তু তাহাতে আপনার ও সমাজের এমন বিপদ তিনি ডাকিয়া আনিবেন, যাহা অপূরণীয়। যে বস্ত্রখণ্ডে কোনও বিপদ নাই, শুধু সংক্রমণ ঠেকাইবার অভিপ্রায়েই যাহার ব্যবহার, অতিমারির কালে তাহা অপরিহার্য।

অপর পরামর্শগুলিও অলঙ্ঘনীয়। নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনে গৃহের বাহির না হওয়া প্রভৃতি প্রত্যেকটি নিয়ম মানিয়া চলাই এখনও একমাত্র পথ। ধাপে ধাপে লকডাউন প্রত্যাহৃত হইবার অর্থ ইহা নহে যে, করোনাভাইরাস দূর হইয়াছে। মানুষের রুটি-রুজির পন্থাগুলি খুলিয়া দিবার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ করা হইয়াছে, যাহার ফলে অর্থব্যবস্থার চাকাটি পুনরায় সচল হইবার আশা করা যায়। সম্পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করিয়া জনজীবন যতখানি স্বাভাবিক হইতে পারে, এই মুহূর্তে তাহাই সীমা। বুঝিতে হইবে, ভাইরাসটি আমাদের মধ্যে বাস করিতেছে, পূর্বাপেক্ষা শক্তি হ্রাস পাইবারও প্রমাণ নাই, বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার সর্বাধিক। একমাত্র সচেতন ও নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাপনই ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি হইতে নিষ্কৃতি দিতে পারে। স্বাভাবিক জীবনকে জরুরি ভাবিয়া যাঁহারা মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ত্যাগ করিতেছেন, তাঁহাদের মনে রাখিতে হইবে, সেই জীবনে ফিরিবার জন্যেই এই সকল পদক্ষেপ জরুরিতর।

অন্য বিষয়গুলি:

Masks Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy