ছবি: সংগৃহীত।
সমাজমাধ্যম আশীর্বাদ, না অভিশাপ? প্রযুক্তির হাত ধরিয়া সমাজমাধ্যমে বাড়িতেছে যৌন হেনস্থা ও অপরাধ। মতে না মিলিলে বা বিরুদ্ধস্বর মনে হইলে অপমান, কটূক্তি এমনকি ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি ছিলই। নিজের কাছে থাকা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়াইয়া প্রতিশোধ লইতেছে প্রাক্তন প্রেমিক। সাইবার অপরাধের ভাষায় ইহা ‘রিভেঞ্জ পর্ন’। ফেসবুক সংস্থার নিকট প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লক্ষ এহেন দুষ্কৃতির অভিযোগ জমা পড়ে, তথ্য বলিতেছে। যাঁহারা ইহার শিকার হন, তাঁহাদের মানসিক ও সামাজিক পরিণতি অনুমান করিতেও আতঙ্ক হইতে পারে। কুপ্রস্তাব বা অর্থ দাবি হেতু সম্মানহানি; কর্মক্ষেত্রে অপযশ, বিচ্ছেদ— মানসিক অশান্তির অন্ত থাকে না। চরম অবসাদ আত্মহননের দিকে লইয়া গিয়াছে, তেমন ঘটনাও বিরল নহে।
কেহ বলিতে পারেন, অপরাধ যখন, অপরাধীকে ধরিয়া কঠোর শাস্তি দিলেই হয়! কিন্তু অভিযুক্তকে কাঠগড়ায় তুলিয়া দণ্ডবিধানেই সমস্যার পূর্ণ নিষ্পত্তি সম্ভব নহে। কারণ, সমাজমাধ্যম তথা আন্তর্জালে একবার আসিয়া পড়িলে ছবি বা ভিডিয়ো অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হয়। যাহার থাকা উচিত ছিল ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারবৃত্তে, আন্তর্জালে আসিয়া পড়িলে তাহাই বহু মানুষের শরীরী উত্তেজনার ইন্ধন হইয়া উঠে। সমাজমাধ্যমের চরিত্রই এমন, উত্তেজক ছবি ও ভিডিয়ো মুহূর্তে ছড়াইয়া পড়ে, গণহারে ডাউনলোড ও বিতরিত হইয়া সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে লইয়া যায়। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির নিকট অভিযোগ করিয়াও কাজ হয় না। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থা, সমাজমাধ্যমে ঘটিয়া চলা অপরাধগুলির নজরদারিতে ও আইনি পদক্ষেপে তাহাদের নিজস্ব ‘এজেন্সি’ বা ‘পোর্টাল’ রহিয়াছে। অভিযুক্তের হদিশ পাইতে পুলিশ অনেক সময় তাহাদের সাহায্য চায় বা আপত্তিকর ছবি-ভিডিয়ো মুছিয়া দিতে বলে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়াছে, উপযুক্ত সহযোগিতা মেলে না, অভিযোগ ঠান্ডা ঘরে পড়িয়া থাকে। সাইবার-আইনবেত্তাদের মতে, অধিকাংশ সমাজমাধ্যম সংস্থারই আইনি সহযোগিতা কাঠামোটি যথেষ্ট পোক্ত নহে। সমাজমাধ্যমে গ্রাহক ও প্রেরকের বার্তা বিনিময়ের প্রক্রিয়া ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ হইলে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে সেই বার্তা হাতে পাওয়া মুশকিল হইয়া পড়ে।
তাহা হইলে কী করণীয়? আগাইয়া আসিতে হইবে রাষ্ট্রকেই। সাইবার-অপরাধের বিচারে ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারা প্রযুক্ত হইয়া থাকে। লঘু-গুরু যাবতীয় অপরাধের প্রতিকারে এইগুলিই ভরসা। কিন্তু সমাজমাধ্যমে অন্তরঙ্গ ছবি-ভিডিয়ো ছড়াইয়া দিবার ন্যায় কুকর্মকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়া, গুরুতর যৌন অপরাধ বিবেচনা করা আশু প্রয়োজন। অপরাধের গুরুত্বকে মান্যতা দিলে অপরাধীর বিচারও কঠোর হইবে। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিকেও তাহাদের দায়বদ্ধতার কথা বুঝাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। সমাজমাধ্যম-ব্যবহারকারীর সংখ্যায় ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির কাছে যথাযথ ও সুষ্ঠু আইনি সহায়তা এই দেশের প্রাপ্য। গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন দেশ কড়া আইন করিয়াছে, সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনে বিপুল জরিমানা করিয়াছে, পদস্থ কর্তাকে জেলে পাঠাইতেও ছাড়ে নাই। ভারতও এই পন্থা বিবেচনা করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy