মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও সনিয়া গাঁধী।
সনিয়া গাঁধী সকল বিরোধীর বৈঠক ডাকিয়াছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দেন নাই। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বরাবর সরব হইয়াও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁহার এই আপত্তি কেন? মুখ্যমন্ত্রী জানাইয়াছেন, কংগ্রেস, বাম প্রভৃতি বিরোধীরা ধর্মঘটে যে বিশৃঙ্খলা করিয়াছে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করিয়াছে, তাহাতে তিনি ক্ষুব্ধ। তবে কি প্রশাসনের শীর্ষকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা, দুইটি ভূমিকার সংঘাতেই চোট পাইল বিরোধী ঐক্য? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সম্পদের অভিভাবক, রাজ্যকে সচল রাখিবার ভারও তাঁহারই। যাহারা ধর্মঘট ডাকিয়াছে, ভাঙচুর করিয়াছে, তাহাদের উপর প্রতি তিনি বিরূপ হইতেই পারেন। প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলার কারিগরদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাও করিতে পারেন। কিন্তু তাহার জন্য জাতীয় স্তরের বৈঠক হইতে সরিয়া আসিবার যুক্তি কী? রাজনীতির দৃষ্টিতে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাহা পূর্বে অস্বীকার করেন নাই। দিল্লিতে বিরোধী বৈঠকে তিনি যাইবেন বলিয়াই বার্তা ছিল। কার্যক্ষেত্রে পিছাইয়া গেলেন। গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা যখন বিপন্ন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সম্পত্তিকে অধিক মূল্য দিলেন! বিশেষত, যে মুখ্যমন্ত্রী অবলীলাক্রমে রাজনৈতিক কারণে প্রশাসনিক রীতিকে শিকেয় তুলিয়া রাখেন! যথা, গত বৎসরই সকল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের লইয়া প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক তিনি বয়কট করিয়াছিলেন। রাজ্যেও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত কিংবা কৃষি সমবায়ের কার্যরীতিতে তিনি সর্বদা নিরপেক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা লইয়াছেন, এমন দাবি করা কঠিন। এখনই কেন তাঁহার প্রশাসকের ভূমিকাটি প্রবল হইয়া রাজনীতির সকল বিবেচনাকে অতিক্রম করিল, তাহা দুর্জ্ঞেয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই অনুমান করা চলে, প্রশাসকের ধর্ম নহে, রাজনীতিকের স্বার্থই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রকৃত চালিকাশক্তি। রাজ্যের রাজনীতিতে কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাহাদের বিরোধিতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ বলিয়াই কি তিনি কোনও কারণে, কোনও বিষয়েই তাঁহাদের সহিত এক মঞ্চে অবস্থানে রাজি নহেন? যদি তাহাই মুখ্যমন্ত্রীর অ-সহযোগের কারণ হয়, তবে বলিতে হইবে, তিনি ক্ষুদ্র স্বার্থের পায়ে বৃহৎ স্বার্থকে বলি দিলেন। তিনি গোড়া হইতে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করিয়া আসিতেছেন, রাজনৈতিক প্রতিবাদ করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। তাঁহার মিছিলের পদভারে শহর বারংবার কম্পিত হইয়াছে। এই বিষয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁহার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি সেই ভূমিকা হইতে নিজেকে বঞ্চিত করিলেন, দূরে রাখিলেন পশ্চিমবঙ্গকেও। ইহা কেবল দুর্ভাগ্যের নহে, দুশ্চিন্তার বিষয়।
লক্ষণীয়, সোমবারের বৈঠকে আসেন নাই মায়াবতী, অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁহারাও রাজ্য রাজনীতির পুরাতন রেষারেষির ছকে বন্দি। বিরোধীদের অনৈক্যে গণতন্ত্রের ঝুঁকি বাড়িল। নেতার ঝুঁকিও। নিজের দলকে বিজেপির ‘বি টিম’ করিবার দুর্নাম পূর্বেই জুটিয়াছে মায়াবতীর। সম্প্রতি কলিকাতার বুকে মমতাকে শুনিতে হইয়াছে, ‘গো ব্যাক মমতা।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ নেহাত ‘সৌজন্য’, তাহা ব্যাখ্যা করিতে বিলক্ষণ পরিশ্রম করিতে হইয়াছে মমতাকে। ইহাও লক্ষণীয় যে, নাগরিকত্ব আইন পাশ হইবার এক মাস পার হইলেও, সিএএ-এনআরসি বাতিলের আন্দোলনে জনতা, বিশেষত মহিলা ও ছাত্রেরাই এখনও নেতৃত্বে থাকিয়া ভারতের রাজনীতিতে এক নূতন অধ্যায় রচনা করিতেছেন। জনমতের চাপেই সিএএ-এনআরসি’র বিরুদ্ধে একে একে অবস্থান লইয়াছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। পরিচিত রাজনীতির চাল ক্রমশ অচল হইতেছে। নেতা সাবধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy