রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মরাঠি ভাষায় কথা বলা বাধ্যতামূলক করিবার প্রস্তাব আনিল মহারাষ্ট্র সরকার। কর্মীদের বার্ষিক মূল্যায়নের রিপোর্টে ভাষা ব্যবহারের খতিয়ান থাকিবে। অপরাপর ভাষায় কথা বলিলে বেতন বৃদ্ধি আটকাইয়া যাইবে। প্রস্তাবের প্রথমাংশটি উত্তম। দৈনন্দিন ব্যবহারে না থাকিলে ভাষা সচল-সজীব থাকে না। বহুভাষিক এই দেশে কোনও আঞ্চলিক ভাষা প্রচারের জন্য তাহার ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগে অন্যায় নাই। দ্বিতীয়াংশ ঘোর অন্যায্য। কে কোন ভাষায় কথা বলিবেন (বা বলিবেন না), ইহা সম্পূর্ণতই তাঁহার স্বাধীনতা। সরকার বলিয়াছে, মরাঠি বাধ্যতামূলক করিবার পরেও বহু আধিকারিক ইংরাজি পরিহার করেন নাই বলিয়া এই শাস্তিমূলক বন্দোবস্ত। কিন্তু মরাঠি প্রসারের জন্য ভাষা প্রয়োগে উৎসাহ দেওয়া যাইতে পারে, নিরুৎসাহ ব্যক্তিকে দণ্ড দেওয়ার অর্থ জোর করিয়া ভাষা চাপাইবার নিদান। তাহাকে অবাঞ্ছিত বলিলে ন্যূনোক্তি হয়, উহা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। আশঙ্কা হয়, ভাষার কল্যাণসাধন নহে, বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করিতেই এই ব্যবস্থা।
মহারাষ্ট্র সরকারের উদ্দেশ্যও অনুমান করা চলে। সেই রাজ্যের শাসক জোটের প্রধান দল শিবসেনার রাজনীতির মূল সুরের সহিত বলপূর্বক মরাঠি চাপাইয়া দিবার সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৭০-এর দশকে শিবসেনার উত্থানের হাতিয়ার ছিল মরাঠি অস্মিতা। মুম্বই শহরের অ-মরাঠি জনতাকে— মূলত গুজরাতি ও দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসীদের— তাহারা শত্রু ঘোষণা করিয়াছিল। কয়েক দশক ধরিয়া সেই আবেগকে পুঁজি করিয়াই শিবসেনার রাজনৈতিক উত্থান ঘটিয়াছে। ইহা ঠিক যে, কোনও এলাকায় বাস করিতে হইলে সেখানকার স্থানীয় ভাষা শিখিয়া লওয়া প্রয়োজন। তাহাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজেরও সুবিধা হয়। গণপরিষেবার সহিত যুক্ত ব্যক্তি যদি স্থানীয় ভাষা না শিখিয়া লন, তাহা হইলে স্থানীয়দের পরিষেবা পাইতে সমস্যা হইতে পারে। কিন্তু ভাষা চাপাইয়া দিবার অর্থ তাহাকে বৈষম্যের অস্ত্র করিয়া তোলা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি স্থানীয় ভাষা জানেন না, তাঁহাকে পশ্চাতে ঠেলিয়া দেওয়া। উক্ত রাজনীতি তাই বিপজ্জনক, ক্ষতিকর।
রাজ্যকেন্দ্রিক ভাষা-রাজনীতির বাড়বাড়ন্তের পশ্চাতে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটটিও বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর হইতে নয়াদিল্লিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা বারংবার একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে হিন্দি চালু করিবার চেষ্টা করিয়াছে। নরেন্দ্র মোদীর আমলে সেই চেষ্টা প্রবলতর। তাহার প্রতিবাদ হইতেছে। আবার প্রতিক্রিয়া হিসাবে আঞ্চলিক ভাষার খবরদারির প্রবণতাও দেখা যাইতেছে। দ্রাবিড় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কালে হিন্দির প্রতি জাতক্রোধ সৃষ্টি হইয়াছিল তামিলনাড়ুতে। কিছু বৎসর পূর্বে কর্নাটকে ইংরেজি সাইনবোর্ডগুলিতে কালি লেপিয়া দেওয়া হইতেছিল। বাংলা ব্যতীত অপর কোনও ভাষায় কাজকর্ম করা চলিবে না বলিয়া মাঝেমধ্যে রব ওঠে পশ্চিমবঙ্গেও। এই সকল রাজ্যের সরকারি ভাষানীতিতেও তাহার প্রভাব পড়ে। স্মরণে রাখা ভাল, ‘এক দেশ এক ভাষা’ কিংবা ‘এক রাজ্য এক ভাষা’ উভয়ই আসলে বহু ভাষার স্বীকৃতিকে খণ্ডন করিবার প্রয়াস। যে কোনও ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী বিদ্বেষ শেষাবধি ভারতের আত্মাটিকে বিনষ্ট করিবার চেষ্টা করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy