লন্ডন ডায়েরি। ফাইল ছবি।
রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান শেষ। এ বার মুকুট ও রাজপরিবারের সমস্ত অলঙ্কার ফেরত যাবে টাওয়ার অব লন্ডন-এ। ব্রিটেনের এক সংবাদপত্র রসিকতা করে লিখেছে, অভিষেক অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ গয়না প্রদর্শিত হয়েছে, কোনও পঞ্জাবি বিয়ের অনুষ্ঠানেও তত গয়না দেখা যায় না! পুরো অনুষ্ঠানে তিন বার পোশাক ও দু’বার মুকুট বদলেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে তিনি পৌঁছন একটি লাল জ্যাকেট ও নৌবাহিনীর ট্রাউজ়ার্স পরে। সঙ্গে ছিল আরমাইন ইম্পিরিয়াল রোব। অভিষেক চলাকালীন চার্লসের পরনে সোনালি টিউনিক এবং রোব। মাথায় দু’কিলোগ্রাম ওজনের খাঁটি সোনার সেন্ট এডওয়ার্ড’স ক্রাউন। অ্যাবি থেকে বেরোনোর সময়ে ফের পোশাক পাল্টান তিনি। পরেন সোনালি ও বেগুনি টিউনিক, উপরে আরমাইন ইম্পিরিয়াল রোবটি। মাথায় ছিল ইম্পিরিয়াল স্টেট ক্রাউন। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই মুকুটটিই পরবেন চার্লস। রানি ক্যামিলা কুইন মেরির মুকুটটিই পরবেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। অভিষেকের দিন সেটা থেকে বিতর্কিত কোহিনুর হিরে সরিয়ে লাগানো হয়েছিল তিনটি কালিনান হিরে। তবে অভিষেকের দিন একটি ভারতীয় হিরেও পরেছিলেন ক্যামিলা। তাঁর গলায় ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার হিরের নেকলেস। এই নেকলেসটি রানি ভিক্টোরিয়ার হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানের ছবিতে দেখা যায়। ১৮৫৮ সালে তৈরি এই নেকলেসটিতে রয়েছে মোট ২৬টি হিরে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ২২.৪৮ ক্যারাটের লাহোর ডায়মন্ড। ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত শিখরা রানি ভিক্টোরিয়াকে হিরেটি ‘উপহার’ দেন।
অভিনব কুচকাওয়াজ
লন্ডনের অন্যতম ধন্যাঢ্য এলাকা চেলসির বাসিন্দারা একটু অন্য ভাবে উদ্যাপন করলেন রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক। নতুন রাজার প্রতি সম্মান জানাতে ১৫০টিরও বেশি কিং চার্লস স্প্যানিয়েল কুকুর কুচকাওয়াজ করল গোটা কিংস রোড ধরে। রাজা দ্বিতীয় চার্লসের নামেই এই কুকুরগুলির নাম। ১৬৬০ সালে ফ্রান্স থেকে ফিরে তিনি ব্রিটেনের মসনদে বসেন। তাঁর সঙ্গে আসে তাঁর পোষ্য স্প্যানিয়েল। চেলসির এই কুচকাওয়াজে কুকুরগুলির পরনে ছিল নকল মুকুট ও ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা ইউনিয়ন জ্যাকের স্কার্ফ। কারও কারও পরনে ছিল রাজকীয় লাল কোট এবং টায়রা। যে কুকুরগুলি হাঁটতে পারে না তাদের পুশচেয়ারে নিয়ে হাঁটছিলেন তাদের মালিকেরা। পুশচেয়ারগুলি বেগুনি ভেলভেটের পর্দা দিয়ে সজ্জিত ছিল।
আপ্যায়ন
রাজ্যাভিষেকের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির দায়িত্ব ছিল অতিথি ফার্স্ট লেডিদের তত্ত্বাবধান। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে তিনি স্বাগত জানান আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জ়েলেনস্কিকে। জিলকে লন্ডন ঘুরিয়ে দেখান অক্ষতা, দক্ষিণ লন্ডনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও যান দু’জন। অভিষেকের পরের দিন ছিল রবিবার। সে দিন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে একটি বিশেষ পার্টির আয়োজন করেন সুনক দম্পতি। রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক থিমের কাপ-প্লেটে অতিথিদের সাজিয়ে দেওয়া হয় চা, স্যান্ডউইচ, কাপ কেক, স্কোন। ছিলেন প্রায় ১০০ জন অতিথি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইউক্রেনীয় শরণার্থী, সমাজকর্মী এবং অতিমারির সময়ে যাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে সহায়তা করেছেন, এমন বেশ কিছু মানুষ। ইউনিয়ন জ্যাক ও রংবেরঙের পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত লম্বা টেবিলে থরে থরে সজ্জিত ছিল হরেক কিসিমের খাবার। অক্ষতা ও ঋষির দুই মেয়ে অনুষ্কা ও কৃষ্ণা তাদের পোষ্য নোভাকে নিয়ে অতিথিদের খেয়াল রাখছিল।
বিশেষ অতিথি
রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকের অতিথি তালিকায় ছিলেন বাঙালি ষোড়শী আয়োনা মণ্ডল। তিনি ২০২২ সালে বার্মিংহামের ‘ইয়ং পোয়েট লরেট’ হয়েছেন। দু’হাজার বিশেষ অতিথির সঙ্গে আয়োনাও গিয়েছিলেন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে। সঙ্গে ছিলেন বাবা পার্থ মণ্ডল। অভিষেকের পরে আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবেরি জাস্টিন ওয়েলবির আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন বাবা-মেয়ে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আয়োনাকে। বার্মিংহামের শিশুদের মধ্যে সাক্ষরতা নিয়ে কাজ করার জন্যই লিটারেসি ট্রাস্টের নজরে এসেছেন তিনি। শিশু-কিশোর বিভাগে রয়্যাল ভলান্টারি সার্ভিস করোনেশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর প্রাপকও এই কিশোরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy