সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ‘সশস্ত্র’ (১৪-৪) প্রসঙ্গে কিছু কথা। সম্প্রতি রামনবমী উপলক্ষে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের বেআইনি অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেল। বিষয়টি কতটা নিন্দনীয় অথবা আইনবিরুদ্ধ, সে প্রশ্ন গৌণ। কারণ, প্রকাশ্যে প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা মিছিল বার করার সাহস যদি দেখাতে পারেন, তা হলে পরোক্ষ ভাবে তাঁরা মানুষের চোখে বৈধতা আদায় করে নিয়েছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। মুসলমানরা মহরমে সশস্ত্র মিছিল বা তাজিয়া বার করেন মানেই রামনবমীর শোভাযাত্রায় বেআইনি অস্ত্র নিয়ে মিছিলের বৈধতা মিলবে, এমন আইন আমাদের দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে কি? ধর্মীয় উন্মাদনার আঁচ রাজনৈতিক ময়দানে যে কটু গন্ধ ছড়াচ্ছে, তা আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে চলেছে। স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রাখল রামনবমীর শোভাযাত্রা।
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটাই আজ বিপন্ন। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির ঊর্ধ্বে ধর্মীয় উন্মাদনাকে স্থান করে দেওয়ার ঔপনিবেশিক কৌশলকে স্বাধীন ভারতেও সুচারু ভাবে প্রয়োগের রাজনৈতিক অভিসন্ধি বিস্ময় জাগায়। ধর্মে মানুষের পেট ভরে না, এই সহজ সত্য ভুলিয়ে দিয়েছে আজকের রাজনীতি।
যে সব অস্ত্র প্রকাশ্য দিবালোকে প্রদর্শিত হয়েছে সেগুলিকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়, এটাও বাস্তব। অস্ত্রের প্রয়োজন হয় শত্রুর দমনে। ভগবান রামচন্দ্রের নামে রামনবমীর শোভাযাত্রায় দৃষ্টিগোচর হওয়া ওই অস্ত্রগুলি তা হলে কোন শত্রু দমনের জন্য নির্মিত হয়েছে? মহরমের মিছিলে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলিই বা কোন উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়? মনুষ্যত্বের এই অবনমন দেখে আমরা কি এখনও নিদ্রিত থাকব?
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
জোটের বিপাক
‘সংখ্যার রাজনীতিই যথেষ্ট?’ (১৪-৪) শীর্ষক প্রবন্ধে প্রেমাংশু চৌধুরী বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে হলে সেই বিরোধী রাজনৈতিক জোটের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। তবে নীতিগত সামঞ্জস্যও যে গুরুত্বপূর্ণ, দেশের মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করাই যে বিরোধীদের সাফল্যের চাবিকাঠি, তার আলোচনা বোধ হয় দরকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলি বিশ্বাসযোগ্যতা তখনই পাবে, যখন দলের নেতারা এমন কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করবেন, যা মানুষের সামনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারে। দলের বহু নেতা যদি অসৎ হন; যদি তাঁরা স্বার্থের জন্য (দুর্নীতির পরিণাম থেকে বাঁচতে) এ-ডাল থেকে ও-ডালে সহজেই পৌঁছে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, এবং যদি দলের অস্তিত্ব রক্ষার্থে ভোটের পরেই নির্লজ্জের মতো ক্ষমতাসীন দলে চলে যান, তবে আর ‘জোট’ নামক সোনার পাথরবাটির কী মূল্য রইল? নামোল্লেখের প্রয়োজন নেই, এমন অনেক ধূর্ত নেতা বা নেত্রী আছেন, যাঁরা নিজ দল এমনকি নিজ রাজ্যের স্বার্থে দেশের ভোটারদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
এই বাস্তব অবস্থার মধ্যে আগামী নির্বাচনে দেশের শাসক দল ক্ষমতাচ্যুত হবে এবং বিরোধী দলগুলির অমুক বা তমুকজন প্রধানমন্ত্রিত্ব পেতে পারেন, এ-হেন কষ্টকল্পনা নিরর্থক।
সবুজ সান্যাল
ধাড়সা, হাওড়া
নিয়োগে দুর্নীতি
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সরব বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগে অনিয়মের নানা ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, এই দুর্নীতির হাওয়া কি শুধুই শিক্ষা দফতরের মধ্যে সীমাবদ্ধ? রাজ্য সরকারের বাকি দফতরগুলি কি দুর্নীতিমুক্ত? দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে যাঁরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সরকারি দফতরে যাতায়াত করেন, তাঁদের একাংশকে নানা রকম বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এক সময়ে দুর্নীতির গন্ধ পেতে শুরু করেন তাঁরা। অথচ, এই দুর্নীতির সত্যতা যাচাই করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে থেকে যায়। তখনই মনে প্রশ্ন জাগে, অন্যান্য দফতরের দুর্নীতির তদন্তের ক্ষেত্রে কি সংবাদমাধ্যমের কোনও ভূমিকা নেই?
হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই করে চলেছে। এই মুহূর্তে এ রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের আনাচে-কানাচে যে সমস্ত দুর্নীতির ঘুণপোকা লক্ষ করা যাচ্ছে, তার মধ্যে অবশ্যই বিভিন্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েতের দুর্নীতি অন্যতম। কারণ এ সব ক্ষেত্রেও কোটি কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা হয়। এই অপশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে লড়াইয়ের মাঠে টেনে নামাতে পারে একমাত্র বিভিন্ন সংবাদপত্রের দৈনিক প্রতিবেদন। যে প্রতিবেদনগুলো সরকারি তদন্তকারী সংস্থার চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে। অবশ্যই, সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কেবলমাত্র সরকার-বিরোধিতায় আটকে থাকলে হবে না। তাদের অবস্থান নিতে হবে সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
শশাঙ্ক শেখর মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
নেতার প্রাসাদ
সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় দু’দিন দু’টি খবর (‘আমার আছে, তাই করেছি’, ১০-৪; এবং ‘তিনতলা বাড়িটা বানিয়েই কাল হল দেখছি,’ ১১-৪) পড়ে এই চিঠি। চৌত্রিশ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে যে দল ক্ষমতায় এল, সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে যার সততার অঙ্গীকার দেখা গেল, দশ-এগারো বছরের মধ্যে তার পরতে পরতে এত অন্ধকার জমা হল কী ভাবে? স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে আর কোনও দলের সরকার এত আর্থিক দুর্নীতির পাঁকে হাবুডুবু খেয়েছে বলে মনে হয় না। প্রথম খবরটিতে প্রকাশ, কার্তিক ইশর ছিলেন এক রাজমিস্ত্রি। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ২০১৩ এবং ২০১৮-তে তিনি পঞ্চায়েত প্রধান হন। তাঁর প্রাসাদ-প্রমাণ তিনতলা বাড়ি বন্যা-কবলিত খানাকুলে বিরল। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, ব্যাপক দুর্নীতির টাকায় বাড়ি হয়েছে, কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাতে অনেকেই সাহস করেননি। দ্বিতীয় ঘটনার কেন্দ্রে শেখ সোহরাব বারো বিঘা জমি এবং একটি নীল-সাদা রঙের বাতানুকূল তিনতলা বাড়ির মালিক। আরামবাগের এই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে গাছ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। স্কুলশিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে গরু পাচার, কয়লা, বালি ও পাথর খাদান থেকে বেআইনি পথে টাকা আসার অভিযোগ আজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির একটু পরশ যদি পঞ্চায়েত স্তরে লেগে থাকে, অবাক হওয়ার কী হয়েছে?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
শিক্ষার শক্তি
অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভূত সুনাম অর্জন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য নির্বাচনী যুদ্ধেও তাদের সহায়তা করেছে— পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে ‘আপ’। এ রাজ্যে সাধারণ মানুষের ইচ্ছে যখন বেসরকারি বিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তি করার, তখনই দিল্লিতে বেসরকারি বিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করানোর আগ্রহ বেড়ে চলেছে। এটি অত্যন্ত সদর্থক ঘটনা। এই রাজ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি। প্রশাসনিক স্তরে এখনও নিয়মিত পরিদর্শনের সুবিধা তৈরি হয়নি। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের আরও তৎপর হতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়মুখী হয়, এবং পড়াশোনার প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হয়। অভিভাবকদেরও বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কারণ জাতির উন্নয়নে শিক্ষাই শেষ কথা।
সফিকুল ইসলাম
ফরাক্কা, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy