Advertisement
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Letters to the Editor

সম্পাদক সমীপেষু: প্রতিবাদ এবং কাজ

শিক্ষা, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য এই তিনটি প্রধান মৌলিক অধিকারের প্রতিটির ক্ষেত্রেই দুর্নীতির যে কালি লেগেছে, এবং বিচারে যে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে, তা মানুষকে অধৈর্য করে তুলেছে। তাই মানুষ এখন ‘এর শেষ দেখে ছাড়ব’ এই রকম মনোভাব নিয়েছেন। তাই তাঁরা এত ধৈর্যশীল।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২১
Share: Save:

‘চিকিৎসার দায়’ (৭-৯) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলতে চাই, জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের প্রতিবাদের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব আবেগের সঞ্চার করেছেন, যা সাধুবাদযোগ্য। তবে প্রশ্ন হল, আর জি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে মানুষ এত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন কেন? সম্ভবত তার কারণ, শিক্ষা, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য এই তিনটি প্রধান মৌলিক অধিকারের প্রতিটির ক্ষেত্রেই দুর্নীতির যে কালি লেগেছে, এবং বিচারে যে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে, তা মানুষকে অধৈর্য করে তুলেছে। তাই মানুষ এখন ‘এর শেষ দেখে ছাড়ব’ এই রকম মনোভাব নিয়েছেন। তাই তাঁরা এত ধৈর্যশীল। এই অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের পরে অন্তত এই তিনটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠিনতম অবস্থান গ্রহণ করবে, এমন আশা করা যায়।

ডাক্তাররা অবশ্যই গড়পড়তা ছাত্র নন, তাঁরা অত্যন্ত মেধাবী। তাঁদের কাছ থেকে সমাজ যে কোনও অন্যায়কে প্রতিরোধ করার জন্য বুদ্ধিমান আচরণ এবং দৃঢ় মনোভাব আশা করে। তাঁরা যদিও ইতিমধ্যেই তাঁদের কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করে নিজেদের কর্মস্থলে কাজে যোগ দিয়েছেন, তবুও একটা বিষয় বলা যেতেই পারে যে, প্রতিবাদ হিসাবে কর্মবিরতি কর্মসূচিটি ঘটনার পর প্রথম তিন দিনের জন্য কার্যকর হতে পারত, এবং পরবর্তী কালে ওপিডি শেষ হওয়ার পরেও চলতে পারত। এ ভাবে তাঁদের ইচ্ছামতো যত দিন তাঁরা চান, আন্দোলন অব্যাহত রাখা যেত। প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার-রোগীর সম্পর্কটা তৈরি হয়েছে অতি প্রাচীনকাল থেকে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং অন্যের কথা শোনার অভ্যাস থেকে। সম্পাদকীয় প্রবন্ধে যথার্থই লেখা হয়েছে, রাজপথে অভয়া ক্লিনিক চালানোর ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। পুরসভার ব্যবস্থাপনায় সরকারি হাসপাতালে যে রোগী সহায়তার জন্য হেল্প ডেস্ক চালু করার চেষ্টা হয়েছিল, ডাক্তারদের বাধায় তা তুলে দিতে হয়েছে। এ কাজও কি সমর্থনযোগ্য ছিল? জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি চলাকালীন বিভিন্ন সংবাদ ও সমাজমাধ্যমের কথোপকথনে বলতে চেষ্টা করেছিলেন, এবং প্রচার করেছিলেন যে, চিকিৎসা ব্যবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সেই সমস্ত পরিবারেরও তো বিচার চাওয়ার অধিকার আছে।

এই দীর্ঘ সময়ের জন্য হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা অস্বীকার করা চিকিৎসা পেশার নীতির বিরুদ্ধে যায়। এই আন্দোলন শুধুই হতভাগ্য মেয়েটির বিচার ছাড়াও, ঘুণ ধরে-যাওয়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিকারের জন্য লড়াই করছে, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সেই জন্যেই মানুষ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। তবে ভবিষ্যতে এমন আন্দোলনে নামার সময়ে রোগীদের সুবিধার কথাটিও মাথায় রাখা জরুরি।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-৫৭

উচ্চশিক্ষার হাল

‘বেহাল নীতি’ (৭-৯) সম্পাদকীয়তে গবেষণায় ক্রমহ্রাসমান ছাত্রছাত্রী-সংখ্যা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যা জাতীয় শিক্ষানীতির দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক স্বীকৃত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক বা এনআইআরএফ-এর সমীক্ষায় দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে (যেমন জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদ, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) পূর্ণ সময়ের পিএইচ ডি গবেষকদের সংখ্যা ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। শিক্ষানীতির ব্যর্থতাই এই অবনমনের কারণ বলে মনে করেছে সম্পাদকীয়টি। শিক্ষাক্ষেত্রে বেহাল অবস্থার অভিঘাত বর্তমান সমাজে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিশেষ করে বিজ্ঞান শাখার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান, ফলত বিজ্ঞান গবেষণায় এবং শিক্ষকতায় প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের সঙ্কোচন অবশ্যম্ভাবী।

সম্প্রতি লোকসভায় এক প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৩ সালে আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৯ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বিদেশে চলে গিয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য। এ বছরের ২০ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিদেশে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক ঋণ সহজলভ্য হওয়ায় এই প্রবণতা বাড়ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, উচ্চশিক্ষা শেষে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ফেলোশিপ নিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা-প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে, দেশে উচ্চমানের গবেষণার সুযোগ না থাকায়। সমাধানের অন্যতম পথ হিসেবে উচ্চশিক্ষায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ঘটল আমাদের দেশে। কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ব্রিটেনের সাদাম্পটন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে, যাতে গুরুগ্রামে ওই ইউনিভার্সিটির একটি ক্যাম্পাস খুলতে পারে। এর আগে গুজরাতে বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু করেছিল দু’টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন শিক্ষানীতির দৌলতে এই উদ্যোগ আরও প্রসারিত হবে এবং সমাজে বৈষম্য আরও দ্রুত বাড়বে।

উচ্চশিক্ষায় এবং গবেষণায় মানবসম্পদের সঙ্কোচন কিসের ইঙ্গিত করে? সহজ উত্তর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় আমরা ক্রমশই পিছিয়ে যাব। বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি-র সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই তুলনায় যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির বাজার তৈরি হয়নি, ফলত উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ কমে আসছে। উচ্চকিত কণ্ঠে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বলে থাকেন যে, যুব শক্তি আমাদের দেশের বিরাট সম্পদ, অথচ তার সদর্থক প্রয়োগ হচ্ছে না। সম্মুখে তাদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। স্বভাবতই যোগ্য ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ মিলিয়ে স্নাতক স্তরে প্রায় সাড়ে নয় লক্ষ স্বীকৃত আসন রয়েছে। সেন্ট্রাল পোর্টালের মাধ্যমে সেই আসন ভর্তির হার বেশ কম। অনেক বিষয়েই শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট কম অ্যাডমিশন নিয়েছে। অন্য দিকে, বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্কের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ কমে আসছে। ফলে এই বিষয়গুলিতে ভবিষ্যতে শিক্ষক এবং গবেষকদের সংখ্যা কমতে থাকবে। এই সঙ্কটে প্রয়োজন শিক্ষা কমিশন গঠন করা, যা ভবিষ্যৎ দিশা ঠিক করতে পরামর্শ দেবে।

শ্যামল ভদ্র

কলকাতা-৬৮

কয়েদির ঠিকানা

গত বছর খবরে পড়েছিলাম, জায়গার অভাবে ২০০ কয়েদিকে মুক্ত সংশোধনাগারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে। কারা দফতরের এক আধিকারিকের মতে, সংশোধনাগার বাড়াতে হবে। আমরা মনে করি, অপরাধীদের সুস্থ ভাবে রাখতে গেলে কয়েকশো নতুন সংশোধনাগার তৈরি করা দরকার। কিন্তু একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সংশোধনাগার তৈরির জন্য যিনি টেন্ডার পাবেন, তিনি সকলের ‘প্রাপ্য’ মিটিয়ে যখন জেলখানা নির্মাণ করবেন তখন সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে। তাতে ‘প্রভাবশালী’ হিসেবে সমাজে পরিচিত কয়েদিদের প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। তখন আবার সরকারকেই তার দায় নিতে হবে। তার চেয়ে অন্য একটি উপায় ভাবা যায়। বছর দুই আগে খবরে প্রকাশ, নেদারল্যান্ডসের সরকার কয়েদির অভাবে সেখানকার জেলখানাগুলিকে বন্ধ করে দেয়। সেগুলি খালিই পড়ে আছে বলে মনে হয়। নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে একটা আর্থিক চুক্তি করে এ রাজ্যের অপরাধীদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে না কি? কিছু টাকা সরকারের ব্যয় হলেও কয়েদিদের প্রাণ সুরক্ষিত থাকবে। আমরাও কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারব।

মৃণাল মাইতি

ডিভিসি, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to the editor R G kar Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE