ভারতে গণতান্ত্রিক বনিয়াদ আরও সুদৃঢ় করতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই মে মাসে আমাদের দেশে ইভিএম ব্যবহারের চল্লিশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ইভিএম ব্যবহারের প্রথম ঘটনাটি ঘটে কেরলের পারাভুর উপনির্বাচনে, ১৯৮২ সালে। ভোটগ্রহণ হয়েছিল পঞ্চাশটি ইভিএম ব্যবহার করে। ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার পর জনৈক পরাজিত প্রার্থী কোর্টের দ্বারস্থ হলেন। অভিযোগ, এই মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বেআইনি। কোর্টের নির্দেশ অনুসারে ভোটগ্রহণ আবার হল পেপার ব্যালটে।
আমাদের দেশের ‘রিপ্রেজ়েন্টেশন অব পিপল অ্যাক্ট, ১৯৫১’-য় ইভিএম ব্যবহারের কথা উল্লেখ ছিল না। সুতরাং, আইন পরিবর্তিত হল। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইভিএম-এর ব্যবহার মান্যতা পেল। এর আগে, ১৯৭৭ সালে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইসিআইএল-কে অনুরোধ করে ইভিএম যন্ত্র তৈরি করতে। ১৯৭৯ সালে যন্ত্র তৈরি হয়। ১৯৮০ সালে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলিকে তা দেখায়। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরলের সব বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ইভিএম দিয়ে হল। এর পর ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই যন্ত্র ব্যবহার হয়। তার পর থেকে আর পিছনে তাকানো নেই। ইভিএম-এর চার দশকের যাত্রাপথ মসৃণ হয়নি। উঠেছে অনেক অভিযোগ, হয়েছে মামলা। বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে মেশিনে। কিন্তু জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জনের কাজ এখনও বাকি।
আশা করব, নির্বাচন কমিশন, প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি, বিভিন্ন সরকারি গবেষণা সংস্থা আর রাজনৈতিক নেতারা এই প্রক্রিয়ার ত্রুটি শুধরে, এই মেশিনকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় এক গর্বের বস্তু হতে সাহায্য করবেন।
শঙ্কর দে
কলকাতা-৭৪
হেনস্থা
একটা সময় ছিল যখন চিকিৎসককে মানুষ ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বলে মনে করত। শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ যথার্থই বলেছেন, সেই সময়ে বাড়ি গিয়ে রোগী দেখতে কোনও চিকিৎসক ভয় পেতেন না (‘রোগী গুরুতর অসুস্থ হলেও হাসপাতালে না নিয়ে গেলে দায় কার?’, ২০-৪)। অঘটন ঘটলেও বাড়ির কেউ না কেউ চিকিৎসকের প্রতি সৌজন্য দেখাতে ভুলতেন না। গত কয়েক বছরে সমাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রযুক্তিবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। কিন্তু মানবিকতার হয়েছে চরম অবনতি। যে চিকিৎসক ও শিক্ষককে একটা সময়ে দেবতুল্য ভাবা হত, আজ তেমনটা হয় না। তুচ্ছ কারণে তাঁদের নিগৃহীত হতে হচ্ছে। নিজেদের গাফিলতির দায় চিকিৎসকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাড়ি গিয়ে কোনও চিকিৎসক আর রোগী দেখতে ভরসা পান না। ওষুধ দেওয়ার আগে একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপদেশ দেন, যাতে কোনও অনিচ্ছাকৃত ভুলে তাঁকে নিগৃহীত হতে না হয়।
এই প্রতিবেদনের সূত্রপাত নিমতা এলাকার এক বাসিন্দার আচমকা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ তোলা হয়, তাঁর বুকে ব্যথার খবর পেয়েও প্রতিবেশী চিকিৎসক রোগীর বাড়ি যাননি। পরিবর্তে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপদেশ দেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রোগীর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকের বাড়ি ভাঙচুর, তাঁকে এবং তাঁর পরিজনদের মারধর করা হয়। শহরের মানুষের একটা বড় অংশ যুক্তির ধার ধারেন না। এক জন হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কথা বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কিছু অন্যায় করেননি। অথচ, তাঁকে হেনস্থা করে চরম অমানবিকতার পরিচয় দেওয়া হল।
প্রফুল্ল কুমার সরকার
কলকাতা-৭৮
মৃত্যুদণ্ডের আগে
‘কেন আজও মৃত্যুদণ্ড?’ (২২-৪) শীর্ষক ওসমান মল্লিকের রচনাটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বিশ্বে ১১০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ। সেই সব দেশে অপরাধপ্রবণতা অনেক কমেছে বলে সমীক্ষায় প্রকাশ। আবার যে সব দেশে মৃত্যুদণ্ড সর্বাধিক, যেমন চিনে ২০২০ সালে প্রায় পাঁচশো জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে! সবচেয়ে বিস্ময়কর ও বিভীষিকাময় ঘটনা, এ বছরের ১২ মার্চ সৌদি আরব ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল, যা পৃথিবীতে এক দিনে রাষ্ট্রীয় নৃশংসতায় সর্বোচ্চ! অপর দিকে মৃত্যুদণ্ডের ঠিক বিপরীত মেরুতে যারা বসবাস করে, সেই দেশগুলি আসামিদের রীতিমতো বিচার-বিবেচনা এবং সংশোধনের সুযোগ দেয়। অপরাধীর অপরাধকে নিরন্তর গবেষণার দ্বারা সঠিক বিচার এনে দেয়। কী করে অপরাধ-প্রবণতা মুছে যাবে এবং অপরাধীরা মানব-পূজারি হয়ে উঠবে, তার জন্যই এজলাসে আসামিদের উপর যথেষ্ট শিক্ষা ও নজর দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল যাঁরা করেন তাঁদের যুক্তি, এই সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার পর অন্যরা এই ধরনের অপরাধ বিশেষ করবেন না। কিন্তু হয় তার বিপরীত। দিল্লির নির্ভয়ার অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ভারতে ধর্ষণ করে খুন মারাত্মক ভাবে বেড়ে গেছে। কাজেই, সবচেয়ে বেশি দরকার আসামিদের মানসিকতার পরিবর্তন করা। কেন এই অপরাধপ্রবণতা? কেন তাঁরা স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত নয় এবং কোন পরিবেশে, কোন পরিণতিতে, কোন সংঘর্ষে তারা হিংসাশ্রয়ী হয়— তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে দণ্ডাদেশ দেওয়া হলে এক অন্য পৃথিবী গড়ে ওঠে।
মনুষ্যত্বকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে গেলে সবার আগে দরকার মানুষকে (আসামিকে) রাষ্ট্রীয় ভাবে খুন করা কতখানি গ্রহণযোগ্য, কতখানি ন্যায়নিষ্ঠ, তা সম্যক বিবেচনা করা।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
মণ্ডলহাট, বর্ধমান
সন্তানের প্রতি
আমাদের ব্যস্ত সমাজে অগণিত বয়স্ক বাবা-মায়ের মানসিক ও শারীরিক সাহচর্যের দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে চার পাশে প্রচুর বৃদ্ধাশ্রম মাথা তুলছে। অণু পরিবারে, যেখানে এক বা দুই সন্তান, পুত্রবধূও কর্মরতা, জীবিকাসূত্রে যাঁদের নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে হয়, কাজের প্রয়োজনে দেশ-বিদেশ করতে হয়, কাজে যাওয়া বা ফেরার সুনির্দিষ্ট সময় থাকে না, সেই সকল সুপ্রতিষ্ঠিত সন্তানরা যদি অসুস্থ নিঃসঙ্গ বয়স্ক বাবা-মায়ের সম্মতি নিয়ে, অর্থব্যয় করে, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক ও আয়ার তত্ত্বাবধানে ও সমবয়স্ক, সমমনস্ক মানুষদের সাহচর্যে তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরামে রেখে নিশ্চিন্ত হতে চায়, সেই অধিকার কি আমরা তাদের দিতে পারি না? সেই সন্তানরা তো কর্তব্যে অবহেলা করছে না, বা সব ক্ষেত্রে বাড়িতে অবাঞ্ছিত ভেবে পাঠাতে চাইছে না। কেন আমরা, এই প্রজন্মের বয়স্ক বাবা-মায়েরা, আমাদের সন্তানদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হতে পারি না? এ ভাবে ভাবতে পারি না যে, ওরাও তো বড্ড চাপে থাকে, ওদের বর্তমান জীবনযাত্রার ধরন আমাদের সময়ের মতো নয়।
আমরা দশটা-পাঁচটার অফিস করেছি, সন্তানদের দায়িত্ব নিজেদের বাবা-মায়ের উপর রেখে নিজেদের চেনা শহরে নিজের বাড়িতে দিনশেষে ফিরে আনন্দে দিনযাপন করেছি। বর্তমান সময় সব দিক দিয়ে আলাদা। দিন বদলেছে, মানুষের জীবনযাত্রা, কাজের ধরন, পরিবারের গঠন— সব কিছুই আগের থেকে বদলে গেছে। ওরা তো আমাদেরই সন্তান: আমরা কি নিরন্তর ওদের কাজের ভুল ধরব, সমালোচনা করব? ওরা ভাল মানুষ হয়নি বলে অভিযোগের তির ছুড়ব? কেন? আমাদের ভাল থাকার কথা চিন্তা করেই অনেক কষ্টে অনেক সন্তান এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়, ওদেরও অনেক রক্তক্ষরণ হয়, ইচ্ছা থাকলেও ওরা পারে না। আমরা কেন ওদের মানুষ করেছি বলে আমাদের দেখভাল করতে ওদের দায়বদ্ধ করে রাখব? আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি, বিনিময়ে কোনও কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না রেখে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সব কিছু নিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনায় দোষটা কোথায়?
স্মিতা চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৪২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy