স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘বিষাক্ত কুয়াশার মতো ভয়’ (১-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি এ রাজ্যের রাজ্য মহিলা কমিশনের দায়িত্বজ্ঞানের অভাবের পরিচায়ক। ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের পরেও রামপুরহাটের বগটুইতে তাঁদের না যাওয়ার মধ্যে যেন কমিশনের সদস্যদের সরকারি পদ হারানোর সুপ্ত ভীতির ইঙ্গিত মেলে। দেশের মহিলাদের স্বার্থ সংরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনে ১৯৯২ সালে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম মহিলা কমিশন গঠন করা হয়, যা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষিত। কিন্তু এখন কমিশন ও তার সদস্যরা যেন রাজ্য সরকারের কুক্ষিগত। সদস্যরা যতই দায়িত্বশীল হন না কেন, সরকারের বিনা অনুমতিতে তাঁরা এক পা-ও নড়বেন বলে মনে হয় না। যেখানে সরকারের নেতা, মন্ত্রী ও বাহুবলী দ্বারা বগটুই গ্রামে নৃশংস ভাবে সাত জন মহিলার মৃত্যু ঘটেছে, সেখানে পরিবারগুলির অন্য সব সদস্যকে সান্ত্বনা দিতে, এবং গ্রামবাসীদের ভীতি কাটাতে মহিলা কমিশন পাশে দাঁড়াবে, এ আশা সঙ্গত নয় কি?
রাজ্য মহিলা কমিশন সাত জন নিরপরাধ মহিলার দগ্ধদেহের সামনে দাঁড়িয়ে সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং এই নৃশংস ঘটনায় জড়িত বাহুবলীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেনি— এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে?
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
সঙ্গীর ভরসায়
‘বিষাক্ত কুয়াশার মতো ভয়’ প্রবন্ধে রাজ্য মহিলা কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব ও কর্তব্যজ্ঞানহীন আচরণের দিকটি স্পষ্ট হয়েছে, যা নতুন করে ভয়ের উদ্রেক করে। কমিশনের সাফাই, যে হেতু বগটুই গ্রাম ‘অশান্ত’, তাই যাওয়া যাবে না। তবে কি শান্ত পরিবেশে শান্তির ললিত বাণী শোনাবেন? আসলে মহিলা কমিশন যতটা না মহিলা কেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি সরকার কেন্দ্রিক। সরকার, পুলিশ সবই তো রাজনীতিকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। আবার এই রাজনীতিকরাই ক্ষমতা, পদ, লোভের অক্ষে ঘোরাফেরা করেন। কিন্তু তাই বলে মহিলা কমিশনের মতো একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে তাঁদের স্বার্থহানির দিকটি বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখবে না? রাজনৈতিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্যাতিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষদের পাশে দাঁড়াবে না? দুঃসময়ে যে পাশে থেকে ভরসা জোগায়, ভিতরে বাইরে সাহস দেয়, প্রতিবাদ করতে শেখায়, নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে হাতে হাত ধরে আগামীর পথ চলতে শেখায়, সে-ই আসল সঙ্গী। মহিলা অধিকার রক্ষায়, তাঁদের প্রাণ বাঁচাতে কমিশন দায় এড়িয়ে যেতে পারে কি?
মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য, কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
বাধা কোথায়?
স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ পড়ে হতবাক হয়ে গেলাম। যেখানে মেয়েদের প্রতি অবিচার, অন্যায় হচ্ছে, সেখানে মহিলা কমিশন ছুটে যাবে, সত্য মিথ্যা নির্ণয় করবে, এতে বাধা কোথায়? আর থাকলেই বা কমিশন তা গ্রাহ্য করবে কেন? এখন বিভিন্ন প্রদেশের পুলিশ ও প্রশাসন মেয়েদেরই সতর্ক হতে বলে, যেমন অমুক জায়গায় যাওয়া উচিত নয়, কারণ তা মেয়েদের পক্ষে নিরাপদ নয়। অত রাতে মেয়েটির একা একা বাইরে বেরোনো উচিত হয়নি, বা এই রকম পোশাক না পরলে মেয়েদের শ্লীলতাহানি হবে না। কিন্তু কখনও বলে না— সমাজকে বদলাতে হবে, পুরুষকে সংযত হতে হবে। তাই যাঁরা মহিলা কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁদের মেয়েদের হয়ে কথা বলতেই হবে। শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বড় বড় কথা বললে কর্তব্য ফুরিয়ে যায় না।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
বৈষম্যের বাস্তুতন্ত্র
সন্দীপন নন্দীর বলিষ্ঠ প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ (‘বি এ পাশ, গৃহকর্মে নিপুণা’, ৫-৪)। আমাদের দেশে মেয়েদের শ্রমের বাজারে যোগদানের হার বাড়ছে না বরং কমছে, এই ব্যাপারটা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার! আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যে ভাবে মেয়েদের পিছিয়ে যাওয়ার জন্যে পরিকাঠামো তৈরি করছি, তাতে আমাদের উন্নয়নের গতি কোন দিকে, তা সহজেই অনুমেয়! বাবা-মা’র উচিত মেয়েদের নানা ধরনের কাজে যথেষ্ট উৎসাহিত করা, একেবারে গোড়া থেকে। মেয়েরা যদি কর্মক্ষেত্রে মেধা, নৈপুণ্য, শ্রম ইত্যাদি দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তা হলে পৃথিবীটাই বদলে যেতে পারে!
মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা বলা হয়, কিন্তু বৈষম্যের যে বাস্তুতন্ত্র গঠিত হয়ে আছে, তাকে ভেঙে চুরমার করতে পারেন মেয়েরাই। আজ মেয়েদের শুধু নয়, পুরো মানব সমাজের ভাল হতে পারে মেয়েরা যদি কর্মক্ষম হয়ে সংসারের হাল নিজেরা ধরেন, স্বাধীন ভাবে গুছিয়ে নিতে পারেন। স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে সুসম্পর্ক গঠিত হতে পারে একমাত্র তখনই।
বিবেকানন্দ চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
পিছিয়ে ছেলেরা
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি প্রায় ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ, ছেলেদের কাছে শিক্ষা এখন আর আবশ্যক নয়। উভয় পরীক্ষাতেই অনেক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেনি, অনেকে ফর্ম পূরণ করেও পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে ১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র এক জন পরীক্ষা দিচ্ছে এ বছর। মাধ্যমিকে ইংরেজি, বাংলায় অনেকে ৫-৬ নম্বর পাচ্ছে। যদি গ্রেস নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া না হয়, তা হলে ফল বেরোনোর সময় শিক্ষার আরও কদর্য কাঠামো বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা। অনেকে হয়তো বলবেন, প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার জন্য অনেকে পড়াশোনা না করায় এমন খারাপ অবস্থা। পরের বছর এই ব্যর্থতা অনেকটা ঢাকা পড়ে যাবে। আসলে সবটা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। শিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের অভাবে বিশেষ করে ছেলেরা শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, স্কুলে শিক্ষকের অভাব প্রকট। নানা সমস্যায় জর্জরিত স্কুল সার্ভিস কমিশন দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক নিয়োগে ব্যর্থ। তৃতীয়ত, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করে অনেকে নিকটবর্তী স্কুলে বদলি হচ্ছেন। তাতে অনেক স্কুলের শূন্য পদের সংখ্যা আরও বাড়ছে। ফলে কোথাও কোথাও স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা পর্যন্ত ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজ্যে সরকারি শিক্ষার এমন শোচনীয় অবস্থার মধ্যে তাই আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন। এই অবস্থায় যদি সরকারি শিক্ষাকে নতুন জীবন দান করতে হয়, তা হলে পুরো ব্যবস্থার পচে-গলে যাওয়া অংশ বাদ দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে হবে।
প্রদ্যোত পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
প্লাস্টিকের কলসি
কুমোর সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাঁদের জীবিকার তাগিদে অন্য রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মাটির কুঁজোতে গরমকালে জল খাওয়া আর দেখা যায় না। মাটির হাঁড়ি-কলসি বানানোর কুটির শিল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণ থাকত, তাঁরাও এই জীবিকা থেকে সংসারকে যথেষ্ট সাহায্য করতেন। প্রতি বছর লক্ষ, লক্ষ মানুষ তারকেশ্বর মন্দিরে আসতেন শেওড়াফুলি থেকে পবিত্র গঙ্গা জল নিয়ে, ওই মাটির কলসি করেই। আজ সেই জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিকের কলসি। মনে পড়ে দীপাবলি রাতের কথা, যখন মাটির প্রদীপ দিয়ে বাড়ি সাজানো হত। আজ সে জায়গা দখল করেছে টুনি বাল্ব। বাংলার মৃৎশিল্প আজ মৃতপ্রায়। এই শিল্প আর শিল্পীদের বাঁচাতে সরকার পদক্ষেপ করুক।
স্বপন কুমার আঢ্য, ভান্ডারহাটি, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy