—ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মাননীয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেওয়া হল না! একটি সংগঠন তাঁকে ঢুকতে দিল না, আগের দিন ছাত্রছাত্রীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। এ যেন, বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে আর ছেলেমেয়েরা বাবাকেই বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না! এই আচরণের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে? ছাত্রছাত্রীদের যদি আচার্যের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ থাকে, সমাবর্তনের অনুষ্ঠানকে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হিসেবে না বেছে, রাজ্যপালের সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করে কথা বলা যেতে পারত। সেটাই সমীচীন হত। আসলে এ রাজ্যের শাসক দলের উস্কানি তথা প্রত্যক্ষ মদতে এই সব অবাঞ্ছিত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যে হেতু এই রাজ্যপাল শাসক দলের অপছন্দের, তাই তারা নানা অছিলায় তাঁকে অসম্মান করছে। রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য কেউ থাকছে না (এমনকি উপাচার্যও), বসার ঘর বন্ধ, চাবিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! রাজ্যপালের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলে, তার মোকাবিলা রাজনৈতিক ভাবেই করা হোক, শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের রাজনৈতিক লড়াইয়ে ব্যবহার করা কতটা নৈতিক?
যদি আচার্যকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ চালানো যায়, তবে আচার্য পদে রাজ্যপালকে রাখার প্রয়োজন কী? তার চেয়ে, শাসক দলের তাঁবেদার কাউকে আচার্য করলেই হয়। সরকার খুশি থাকবে, শান্তি বজায় থাকবে।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
বুদ্ধিজীবী
অংশুমান করের ‘এই সঙ্কটেও কেন এত ছুতমার্গ’ (১৯-১২) নিবন্ধ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। লেখক বর্তমান সাম্প্রদায়িক ‘সংখ্যাগুরু’ শাসনের আগ্রাসন ঠেকাতে বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, এক হয়ে প্রতিবাদের প্রস্তাব করেছেন। মনে পড়ে গেল ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত নোয়াম চমস্কির বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘দ্য রেস্পনসিবিলিটি অব ইন্টেলেকচুয়ালস’-এর কথা, যেখানে তিনি বলেছেন, সত্য বলা ও মিথ্যাকে উন্মোচিত করা বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব। যুক্তি হিসেবে তিনি যথার্থই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীদের সেই সুযোগ আছে, পদাধিকার ও সামাজিক সম্মানের দৌলতে (মিথ্যা-প্রস্তুতকারী?) ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছতে পারার। আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘প্রিভিলেজ ইল্ডস অপরচুনিটি অ্যান্ড অপরচুনিটি কনফারস রেস্পনসিবিলিটি’’।
আমাদের বর্তমান বুদ্ধিজীবী সমাজ তাঁদের নির্দিষ্ট কাজ একজোট হয়ে করতে পারছেন না বলে খেদ ব্যক্ত করেছেন অংশুমানবাবু। সব বুদ্ধিজীবী সব বোঝেন, বা একই রকম বোঝেন, এ রকম সামান্যতায় না গিয়েও বলা যায়, বর্তমান সঙ্কট সম্পর্কে তাঁদের অবহিত হওয়ার কথা; বাকিদের সঠিক পথের দিশা দেখানো তাঁদের কর্তব্য। কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই নিজেদের ‘বুদ্ধি’র উপরেই আস্থা রাখতে পারছেন না, বা সামান্য কিছু পাওয়ার লোভে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। গড়ে উঠছে এক-এক রাজনৈতিক দলের এক-এক বুদ্ধিজীবী সমাজ। এমন বুদ্ধিজীবীও আছেন, যাঁরা গত লোকসভায় আগ্রাসী দলকেই ভোট দিয়েছেন, বর্তমান বঙ্গ সরকারকে চাপে রেখে তাঁদের আটকে-থাকা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের আশায়।
সন্তোষ কুমার পাল
পাঁজাবাগান, বর্ধমান
ভবানন্দ এবং
‘ছড়ার ছন্দে বাংলার ইতিহাস’ (রবিবাসরীয়, ১৫-১২) শীর্ষক নিবন্ধে অর্পিতা চন্দ ‘ইকিড় মিকিড় চামচিকির’ ছড়াটির ব্যাখ্যায়, ভবানন্দ মজুমদারকে ‘কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা’ বলেছেন। তথ্যটি ঠিক নয়। ভবানন্দের পূর্বনাম ছিল দুর্গাদাস সমাদ্দার। তাঁর বাবা রামচন্দ্র রায়, বাগোয়ান পরগনা (এখন বাংলাদেশে)-র জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্দারের আশ্রিত ছিলেন এবং নিঃসন্তান জমিদারের মৃত্যুর পর তাঁর ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হন। অল্প বয়স থেকেই উদ্যমী দুর্গাদাস তথা ভবানন্দ জমিদার হয়ে চতুর বুদ্ধিবলে ঢাকার নবাবের কাছ থেকে হুগলির কানুনগো পদ ও মজুমদার উপাধি লাভ করেন। ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীশ্বর জাহাঙ্গিরকে তুষ্ট করে ১৪টি পরগনার সনদ-সহ রাজা উপাধি পান। রাজা হয়ে ভবানন্দ রাজধানী বাগোয়ান থেকে মাটিয়ারিতে স্থানান্তরিত করেন এবং সেখানেই প্রাসাদ, মন্দির ইত্যাদি বানিয়ে বসবাস করেছেন। ভবানন্দের পৌত্র রাজা রাঘব, মাটিয়ারি থেকে আবার রাজধানী সরিয়ে জলঙ্গি নদীতীরে রেউই গ্রামে নিয়ে আসেন। এই গ্রামে অনেক গোয়ালা জাতির বাস ছিল এবং তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের উপাসক ছিলেন। রাঘবের ছেলে রুদ্র রাজা হয়ে শ্রীকৃষ্ণের নামে এই গ্রামের নতুন নামকরণ করেন কৃষ্ণনগর। বস্তুত, ভবানন্দের সময়ে কৃষ্ণনগরের উৎপত্তিই হয়নি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাবা দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের ‘ক্ষিতীশবংশাবলীচরিত’ বইয়ে এ-বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ আছে।
ভবানন্দ প্রসঙ্গেই লেখক লিখেছেন, ‘‘তবে প্রতাপাদিত্য, ভবানন্দ আর মানসিংহের এই সংঘাতের ঐতিহাসিক ভিত্তি নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’ এ বিষয়ে তিনি প্রচলিত কাহিনিটির (ভবানন্দ মুঘল সেনাপতি মানসিংহকে বারো ভুঁইয়ার অন্যতম প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত ও বধ করতে নানা ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন) পুনরাবৃত্তি করেছেন, যার উৎস রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য। এই বিষয়ে সংশয় আছে। মোহিত রায় সম্পাদিত কুমুদনাথ মল্লিকের ‘নদীয়া কাহিনী’-তে লেখা হয়েছে, ‘‘মানসিংহ-প্রতাপাদিত্য যুদ্ধ-কাহিনী ইতিহাস-আশ্রিত নয়।’’ ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার দেখিয়েছেন, মানসিংহ ১৬০৫-এ আকবরের মৃত্যু পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন। জাহাঙ্গির সম্রাট হয়ে, কয়েক মাসের মধ্যে মানসিংহকে সরিয়ে সেখানে কুতবউদ্দিন খাঁ-কে বহাল করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বর্ধমানের শের আফগানের বেগম নুরজহানকে করায়ত্ত করা। মানসিংহ এর পর আর বাংলায় ফিরে আসেননি। ১৬০৯ নাগাদ প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে তৎকালীন বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁর বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজিত ও বন্দি হন।
সুব্রত পাল
মালঞ্চপাড়া, নবদ্বীপ
কথা কম
পশ্চিমবঙ্গে তিনটি উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয় অপ্রত্যাশিত ছিল না। এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কম কথা বলার পুরস্কার। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে, রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেসের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ নিনাদে আকাশ-বাতাস মথিত ছিল। ক্রমে এই স্লোগান উচ্চগ্রামে পৌঁছল ও সব সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করল। এর পরিণাম আমরা দেখতে পেলাম নির্বাচনের ফলাফলে। পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূল নেতৃত্ব ‘কান ধরে ওঠবোস’, ‘কাঁকর ভরা রসগোল্লা’, ‘কোমরে দড়ি পরানো’ ও এই ধরনের আরও বাছাই শব্দবন্ধ উপহার পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির উদ্দেশে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের সমালোচনার উত্তরে ছিলেন বিনয়ী ও সংযতবাক্। তার পুরস্কার পেল বিজেপি।
আবার, এই জয়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টির বড় মেজো সেজো কর্তারা মনে করলেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাট তাঁরা পেয়েই গিয়েছেন। কেউ কেউ বললেন, ২০১৯-এ হাফ, ২০২১-এ সাফ। এর পর তাঁরা এনআরসি নিয়ে বিরাট হইহই করতে লাগলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ভরসা দিলেন। আরও একটি অসম্ভব ব্যাপার তিনি রপ্ত করলেন, যেটি তাঁর স্বভাবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর আগে দেখা যায়নি, তা হল বাক্সংযম। এটি প্রশান্ত কিশোরের টোটকা হলেও হতে পারে। এবং এই টোটকা যে অসামান্য ফলদায়ী, তা উপনির্বাচনের ফলেই বোঝা যাচ্ছে।
কাজেই ঘটনাক্রম থেকে পরিষ্কার, যে নেতা যত কম কথা বলবেন ও শুধু নিজের আচরণের দ্বারা জনগণের মনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, তিনিই হবেন জনতার মনের মানুষ।
পার্ব্বতী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
আউশগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy