অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্য়াট থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা।
দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘বাইশ কোটির প্রতিক্রিয়া’ (২৮-৭) শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে যে লক্ষ লক্ষ টাকায় শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হচ্ছে, এ কথা সর্বজনবিদিত। সরকার পক্ষের ছোট থেকে বড় নেতা-মন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, সংবাদমাধ্যম, সমাজমাধ্যম, এমনকি সাধারণ মানুষ— সকলের কাছে এ খবর ছিল। শুধু প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাব ছিল। যে সব শিক্ষিত বেকার যুবক- যুবতী কোনও রকমে খেয়ে-পরে ভদ্র ভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে পৈতৃক জমি বাড়ি বিক্রি করে কিংবা চড়া সুদে ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করে চাকরির দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তাঁরা আজ মাথা চাপড়াচ্ছেন। চরম মানসিক অবসাদে ভুগছেন।
আর, যাঁরা চাকরি পেয়েও চাকরি হারিয়েছেন, অথবা চাকরি চলে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আতঙ্কিত, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ, অবর্ণনীয়। আমাদের গ্রামে দশ জনকে জানি, যাঁরা এই রকম টাকা দিয়ে চরম দুর্দশায় দিনাতিপাত করছেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে যা চলছে তা অকল্পনীয়, পড়া বা দেখার অযোগ্য। তবু সেটা পৌঁছে যাচ্ছে আবালবৃদ্ধবনিতার দরবারে।
২০০৯ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বানচাল হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের তীব্র বিরোধিতায়। সেই পরীক্ষা হয়েছিল ২০১২ সালে, তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে। সেই সময় থেকেই সম্ভবত নিয়োগ দুর্নীতির শুরু। এই টাকা তোলার কাজে বহু লোক জড়িত। ঠগ বাছতে ‘পার্টি’ উজাড় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এ অবস্থায় পার্থ মুখ খুললে বিপদ। হয়তো সেই জন্যই তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে নিজেদের সততা প্রকাশের যে চেষ্টা চলছে, তা শেষপর্যন্ত ধোপে টিকছে না। কারণ, জনগণ সবটা ধরে ফেলেছে। রাজ্যে সরকারি ও সরকার অনুমোদিত স্কুলে শিক্ষার পরিকাঠামো প্রতিনিয়ত নিম্নমুখী। পড়াশোনার মানও নিম্নগামী। ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা কম। শিক্ষকের অভাবে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ছুটি পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। রাজ্যের ৭০-৮০ শতাংশ ছেলেমেয়ে এই সব স্কুলে পড়ে। তাদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আগত। এ সব দিকে নজর ছিল না প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। গোটা বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করলে আরও টাকা উদ্ধার হতে পারে, এবং রাঘববোয়ালদের ধরা সম্ভব হবে।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
দুঃখজনক
টিভির খবরে দেখলাম, ইডি-র হাতে গ্রেফতার অর্পিতা মুখোপাধ্যায় জোকায় ইএসআই হাসপাতালে পৌঁছনোর পর গাড়ি থেকে নামতে রাজি হচ্ছিলেন না। খুব কান্নাকাটি শুরু করেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা অফিসাররা তাঁকে গাড়ি থেকে নামাতে গেলে ধস্তাধস্তির ফলে তিনি গাড়ি থেকে মাটিতে পড়ে যান এবং প্রায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। যখন তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখনও দেখা যাচ্ছিল যে সাংবাদিকরা তাঁর নাম ধরে ডেকে তাঁর মন্তব্য পেতে চেষ্টা করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের তাঁর মুখ থেকে কিছু বলানোর চেষ্টা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোনও অপরাধীই প্রথমে মানুষ। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিরপরাধ।
অমিত কুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫
দুর্নীতি সৈকতেও
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং সদ্যপ্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাটগুলি থেকে উদ্ধার হওয়া বেআইনি সম্পত্তির দলিল দস্তাবেজ-সহ কোটি কোটি টাকার বান্ডিল দেখে বাস্তবিকই ঘোর লেগে যায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অবিশ্বাস বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গল্প আসে কী করে? আজ নয় কাল তো এই সত্য প্রকাশ হওয়ারই ছিল। রাশি রাশি কাঁচা নগদ টাকা এক জনের সৎ উপায়ে রোজগার করা, এমনটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। যদি সেটা হয়ও, তবে তার একটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা থাকতে হবে তো!
খবরে প্রকাশ যে, তদন্তকারী দল অভিযোগ তুলেছে, কোনও একটি ওয়ার্ডরোবে ‘সবং’ লেখা চিরকুটও পাওয়া গিয়েছে। তা হলে কি বিভিন্ন জেলা অভিযুক্ত মন্ত্রীর টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল? দুর্নীতির অনেক দৃষ্টান্তই শোনা যাচ্ছে। যেমন, নিউ দিঘার পশ্চিম দিকের উপকূলবর্তী ঝাউবন কেটে বন দফতরের জমি প্লট করে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রতট ও উপকূলবর্তী অঞ্চলের সুরক্ষার জন্য যে ঝাউগাছ বসানো নতুন করে শুরু হয়েছিল বিগত শতকের সত্তরের দশকে, সেগুলো কেটে প্লট করে বিক্রি করার প্রয়োজন পড়ল কেন, যখন জলোচ্ছ্বাসে উপকূল অঞ্চল ক্রমাগত ভাঙছিল? স্থানীয় জনগণ এর কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। এই ধরনের সরকারি পদক্ষেপকে ‘উন্নয়নের ধারা’ হিসেবে মেনে নিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে এ সব প্রশাসনের অগোচরে হয়েছে বলে মনে হয় না! সব টাকা ঠিকঠাক রাজকোষে জমা পড়ত তো? কেন যেন সেই প্রশ্নটি এখন মনে উঁকি দিচ্ছে!
রাজকোষে নাকি টাকা নেই, অথচ মন্ত্রীর ঘরে কোটি কোটি টাকা এল কোথা থেকে? আর এলই যদি, তা শিক্ষামন্ত্রীর দফতরের ছাপানো খামে করে নানা বাড়িতে, ফ্ল্যাটে জমা হতে থাকল আর কেউ জানল না, এ-ও কি সম্ভব? কোন মন্ত্রে প্রশাসনের এক জন হেভিওয়েট মন্ত্রী তথা একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের মহাসচিব-সহ শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এতটা অকুতোভয় হতে পেরেছিলেন? প্রশাসন, রাজ্য পুলিশ, রাজ্যের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, সিআইডি, আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখা কেউ-ই কাজ করেনি, ভাবতে হবে! আর এ-ও ধরে নিতে হবে যে, তাদের সামনেই শহর-শহরতলিতে কোটি কোটি বেআইনি টাকা জমা হলেও, পুলিশ বা গোয়েন্দা দফতর এ সব কিছুর আঁচ পায়নি। তা-ই যদি হয়, আদালতে যে বা যার বিচার চলছে চলুক, কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষে থাকা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পুলিশমন্ত্রীও, তিনি ব্যর্থ দফতরের অধিকর্তাদের প্রশাসনিক বিচারে ডেকে ব্যবস্থা করলে অন্তত তাঁর নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকত।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, বোড়াল, কলকাতা
ওষুধের দাম
জাতীয় ওষুধ নীতির ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলো অত্যাবশ্যক ওষুধের দামও অনেক গুণ বাড়িয়ে অত্যধিক মুনাফা লুটছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি প্রায় আটশোটি অত্যাবশ্যক ও জীবনদায়ী ওষুধের দাম প্রায় এগারো শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলিকে দেশের বাজারে দরজা খুলে দেওয়ায় দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোয় লালবাতি জ্বলছে। কম দামের ওষুধ বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে আগে বিনামূল্যে যে সব ওষুধ পাওয়া যেত, সেই সব ওষুধের সংখ্যায় অনেক কাটছাঁট করে দেওয়া হয়েছে। ২৮৩টি ওষুধ রাজ্য সরকার সম্প্রতি ছাঁটাই করে দিয়েছে। চিকিৎসা খরচের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থই শুধু ওষুধের জন্য খরচ হয়। ফলে ‘বিনা পয়সায় চিকিৎসা’ আর কি বলা চলে?
ডাক্তারি পড়ার জন্য খরচ প্রচুর। অথচ, মেডিক্যাল শিক্ষার মানের অবনমন ঘটছে, এমবিবিএস পরীক্ষাগুলিকেও গুরুত্বহীন করে দিয়ে চালু করা হয়েছে এমসিকিউ-নির্ভর ন্যাশনাল এগজ়িট টেস্ট। তার ফলে কোচিং সেন্টারের রমরমা, আর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ বাড়ছে ডাক্তারি পড়ুয়াদের। অন্য দিকে, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সুইপার— কাউকেই আর স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হচ্ছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের বেড নেই। এই রাজ্যে যেখানে তিন লক্ষ বেডের দরকার, সেখানে আছে মাত্র সত্তর হাজার বেড। তার উপর চিকিৎসা এখন আর বিনামূল্যে না থেকে হয়ে গেল কার্ড-নির্ভর। অর্থাৎ, বিমা নির্ভর। এমন পদক্ষেপ মেনে নেওয়া কঠিন।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy