‘আওয়াম মানে ঊনমানব’ শীর্ষক প্রবন্ধে সত্যি কথাগুলি মনোগ্রাহীরূপে উপস্থাপনা করেছেন কুমার রাণা (৬-৮)। ‘আওয়াম’ উর্দু শব্দ, যার অর্থ হল সাধারণ মানুষ, কোনও নির্দিষ্ট এক জন মানুষ নয়। লেখাটিতে একটি সত্যি কথা লেখক তুলে ধরেছেন যে, আওয়াম কখনও আলাদা বা পৃথক হয়ে থাকতে চায় না। আওয়ামের স্বভাবই হল ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা। সব কিছুতেই সুবিধাটুকু কুড়িয়ে নেওয়া, ঝামেলাটি এড়িয়ে। তাই সে সহ্য করতে পারে অসীম। মনে ভয়, এই যদি ঝামেলা বাধে। সবার থেকে আলাদা হয়ে ঝামেলা করতে চায় না। তাই আওয়াম কোনও বিতর্ক-বিতণ্ডাতে নেই। শুধু নিজেরটুকু হলেই তার হল। এই ভাবেই অপমান সইতে সইতে, সে তার থেকে কম শক্তিশালী মানুষটিকে শোষণ করে। ধরা যাক, এক বেসরকারি কর্মী অফিসে তাঁর ঊর্ধ্বতনের কাছে কটুকথা শুনেছেন। তাঁর সাধারণ প্রবৃত্তি হবে বাড়ি ফেরার পথে অটোওয়ালা বা রিকশাওয়ালার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা। না হলে বাড়ি ফিরে পরিবারের লোকজন তো আছেনই। লেখক সুন্দর লিখেছেন, অপমান চঞ্চলা, তাকে চালান করে দিতে হয়।
আওয়ামের প্রশ্ন করা, প্রশ্ন শোনা বা ভাবার অভ্যেস নেই। সে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। তাই সে আরও বেশি করে মানুষে-মানুষে বিভেদের পিছনে দৌড়ে বেড়ায়। টাকা, জাত, শিক্ষা আরও কত রকম বিভেদের প্রতি তার আকর্ষণ। তাই অফিসের বড়বাবুর কাছে যে বাথরুম পরিষ্কার করে, সে ‘ছোটলোক’। যে যত বেশি করে মানুষ ঠকায়, তত বেশি সে আওয়ামের কাছে দামি মানুষ হয়ে ওঠে। আওয়াম পথ দেখাতে চায় না, বরং অনুসরণ করতে পছন্দ করে, ভিড়ের মধ্যে এক জন হয়ে।
সুমন চক্রবর্তী
বেঙ্গালুরু
এই কি সংস্কার?
‘খিড়কি কেন’ (৭-৮) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “দেশের মানুষ বুঝিয়াছেন, আর্থিক সংস্কারের খোলা হাওয়ায় যাহা ভাসিয়া আসে তাহার নাম কুশলতা; তাহার নাম উৎপাদনশীলতা; তাহার নাম উন্নতি।” বক্তব্যের সমর্থনে কিছু তথ্য দিলে ভাল হত। বিশেষ করে উন্নতির। যেমন, ৩০ বৎসর আগে ভারতে কতগুলো শিল্প ছিল, বর্তমানে কতগুলো আছে, মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে না কমেছে, আগের তুলনায় বেকার সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে, ইত্যাদি। আর এক জায়গায় বলা হয়েছে, অর্থব্যবস্থায় অতিমারি থাবা বসানোর পরে সরকারের সংস্কারমুখী সিদ্ধান্তগুলি থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাভবান হচ্ছে কিছু বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এ রকম সংস্কারের কোনও প্রয়োজন ছিল কি?
কোনও মুক্ত অর্থনীতির দেশের সরকার রেল চালায় না। ভারত সরকার এখন রেল চালায়। বিশেষ লাভজনক রেল রুটগুলো শিল্পপতিদের দেওয়া হয়েছিল, সামান্য ভাড়ার বিনিময়ে। সুবিধাও অনেক রকম ছিল। যেমন— প্রত্যেক যাত্রীকে নগদ টিকিট কেটে যেতে হবে, কোনও ছাড় চলবে না। তবু ট্রেন চলেনি। উপযুক্ত সংখ্যক যাত্রী হয়নি। সব দেশে সব কিছু হয় না।
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
নীরবতার রহস্য
পেগাসাস কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরব থাকার রহস্যটি বুঝে নিতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। গত সাত বছরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে তিনি দেশবাসীকে নিজের ‘মন কি বাত’ শুনতে বাধ্য করে চলেছেন। কখনও-সখনও বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাক্ষাৎকার না দেওয়ার দুর্নাম ঘুচিয়েছেন, কখনও বা বিদেশের মাটিতে তাঁর দেওয়া ভাষণ অনুবাদকের কণ্ঠে দাঁড়ি-কমা ছাড়িয়ে বহু দূর এগিয়ে গিয়েছে। পেগাসাস কাণ্ডে শাসক দল আপাতত বেকায়দায়। এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়টি ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে হলে মোদীর অস্ত্র সেই নীরবতা।
সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। লকডাউন পরিস্থিতিতে বিলগ্নিকরণ করে দেখানোর স্পর্ধা দেখান, পেগাসাস নিয়ে সংসদ উত্তাল হলে বিনা আলোচনায় তড়িঘড়ি ১২টি বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে বিমাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে ধর্মঘট আটকাতে ‘এসেনশিয়াল ডিফেন্স সার্ভিসেস’ বিল, পাচার রোধ সংক্রান্ত বিল, এবং ট্রাইবুনাল সার্ভিসেস বিল। পাশ করাতে সময় লেগেছে গড়ে মাত্র সাত মিনিট!
আড়াই দশক আগেই টেলিফোনে আড়িপাতাকে মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি কুলদীপ সিংহ ও বিচারপতি এস সাগির আহমেদের ডিভিশন বেঞ্চ। তখন অবশ্য মোবাইল ফোন ছিল না। সে সময় শীর্ষ আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার তাঁর জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত, সংবিধানে সুরক্ষিত। কোনও ব্যক্তি যখন টেলিফোনে কথা বলেন, তখন তা তাঁর মত প্রকাশের অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবু রাষ্ট্র নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন বিধিনিয়ম মেনে টেলিফোনে আড়িপাতে। সব শাসক দলের কাছেই এ অনেকটা স্বতঃসিদ্ধ। হরিয়ানা পুলিশ তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সীতারাম কেশরীর বাড়িতে নজর রেখেছিল এই অজুহাতে যে, চন্দ্রশেখর সরকারের উপর থেকে কংগ্রেস দল সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে দেশকে অকাল-নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেয়। ইজ়রায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে সম্ভাব্য নজরদারির যে তালিকা আপাতত সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সাংবাদিক, বিরোধী নেতা, বিচারপতি, ভোটকুশলী পরামর্শদাতা, বিক্ষোভ দেখানো ছাত্র, কে নেই? আশ্চর্যজনক ভাবে রয়েছেন শাসক দলের একাধিক নেতা। এ যেন অনেকটা নানা পটেকর চিত্রায়িত পরিন্দা ছবির কাহিনি, যেখানে গুপ্তচরের পিছনে গুপ্তচর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিকরা সংবাদ সূত্র জানাতে বাধ্য নন। সংবাদমাধ্যমের কাজকর্মে সরকার বা তার পরিচালিত কোনও সংস্থা হস্তক্ষেপ করবে না, মোটামুটি এই ধারণার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে শাসক দল তথা সরকার ও সংবাদমাধ্যম। পেগাসাস কাণ্ডে সেই সাংবাদিককুলের উপর আড়িপাতার অভিযোগ সামনে এসেছে। ইজ়রায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে সম্ভাব্য নজরদারির তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এডিটর্স গিল্ড ও প্রবীণ সাংবাদিক মৃণাল পান্ডে।
আজ না হোক কাল, মোদীজিকে উত্তর দিতেই হবে। কেন না এই অভিযোগের অভিমুখ কেবলমাত্র ইজ়রায়েলি সংস্থা বা তার ভারতীয় মক্কেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তদন্তের বিস্তার বহুজাতিক। তাই নীরব মন্ত্রে তাকে সামলানো এক প্রকার অসম্ভব, যত ক্ষণ না যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হাজির হয়।
পশ্চিমবঙ্গে হাওয়া মোরগে বিভ্রান্ত হয়ে যাঁরা দল পাল্টেছিলেন, পেগাসাস কাণ্ডে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে মোটেও দোষ দেওয়া চলে না।
সরিৎশেখর দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
আইনি ইলিশ
ছোট মাছ ধরা নিয়ে আরও কড়া আইনের ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে (‘আইন নেই, ফাঁসে ইলিশের দফারফা’, ৮-৮)। জানা গেল, বাংলাদেশ ইলিশ বাঁচাতে কড়া আইন করলেও পশ্চিমবঙ্গ করেনি, যার ফলে গত তিন বছরে এ রাজ্যে ইলিশ উৎপাদন প্রায় ৬৬ শতাংশ কমেছে। অতএব খালি ধরা নয়, ছোট ইলিশ বিক্রি করা, কেনা এবং কাছে রাখাও দণ্ডনীয় অপরাধ— এটা না করলে এই ব্যামো সারবে না। যে আড়তদার এই প্রকার মাছ রাখেন, যে সব ট্রাক এইগুলি বাজারে নিয়ে আসে, গড়িয়াহাট কিংবা মানিকতলার বাজারে যাঁরা বিক্রি করেন, এবং যে বাবুরা হাজার টাকা কিলোগ্রাম বা তারও বেশি দামে কিনে থলিতে পুরে বিশ্বজয়ের ভঙ্গিমায় বাড়ির পথে হাঁটা দেন, প্রত্যেককে আইনের চোখে দায়ী করতে হবে।
দীপঙ্কর বসু
কলকাতা-৬৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy