সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে! ফি বছরের মতো এ বারও ইলিশের মরসুম শুরু হতেই মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের একাংশ যাবতীয় সরকারি নিষেধাজ্ঞা, আইন, আপত্তিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সমানে খোকা বা জাটকা ইলিশ শিকার ও বিক্রি করে চলেছেন। এমনিতেই ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ন, মেরু প্রদেশীয় হিমবাহ গলন, বল্গাহীন দূষণ, সাইক্লোন, প্রভৃতির প্রভাবে বাঙালির রসনাতৃপ্তির এই ‘লেজেন্ডারি আহ্লাদ’ হয়েছে বড়ই অভিমানী, হয়তো খানিক ক্ষুব্ধও। ফলে তার দেখা মেলাই ভার। তার উপর এই অসতর্ক মৎস্যজীবী ও ভাবলেশহীন ব্যবসায়ীদের সার্বিক অসচেতনতা পরিবেশপ্রেমী, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে ভোজনরসিক আমবাঙালি— যাঁরা সর্ষে বাটা, কাঁচালঙ্কা নিয়ে ডাঁটো ইলিশের জন্য অপেক্ষমাণ— সকলের কপালে ভাঁজ ফেলে বইকি।
ইলিশ নিয়ে এই নিরলস চর্চার মধ্যে যে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি ধামাচাপা পড়ে যায় তা হল, গ্রাম-বাংলার জলাশয়, নদীগুলি থেকে অসংখ্য ছোট বা চুনো দেশি মাছের পোনা বা জাটকা নিধন রুখতে সরকারি উদাসীনতা। শুধু গত দেড় দশকেই বাংলার খালবিল, নদী থেকে বহু প্রজাতির দেশি মাছের অবলুপ্তি বা প্রায় অবলুপ্তি ঘটেছে। তালিকায় সরপুঁটি, মৌরলা, পাঁকাল, খলসে, নয়না, ঢালু, কাঠ পাঁকাল, ভাতুয়া, দেঁড়ে, বাবুই ট্যাংরা, চ্যাং, জলখাই প্রভৃতির মতো অতি উপাদেয়, পুষ্টিকর মাছেরা আছে। খালবিল বুজিয়ে অপরিকল্পিত নগরায়ন, কৃষি কাজে অবৈজ্ঞানিক ভাবে যথেচ্ছ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, ফল ও আনাজ চাষের জমি বৃদ্ধি, ভেড়ির রমরমা, মাছ শিকারে ব্যবহৃত ছোট ফাঁসের জাল ও সার্বিক দূষণ দেশি মাছেদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্ষাকাল মানেই মৎস্য প্রজননের মরসুম। বাংলার খালবিলে অসম লড়াই করে এখনও বেঁচে আছে হাতেগোনা যে দেশি চুনোমাছ, তাদের পেটেও ডিম আসে নিয়ম মেনেই। আর এই ডিমওয়ালা মাছের লোভে ‘বর্গিহানা’ হানেন মৎস্য শিকারিরাও। ভবিষ্যতের কথা না ভেবে চলে অবৈজ্ঞানিক মৎস্যনিধন।
তার মধ্যে দৈবাৎ দু’-একটি বেঁচে-যাওয়া মাছের ডিম ফুটলে, সেই পোনাদেরও নেই নিস্তার। তাদের জন্য থাকে ছোট ফাঁসের জাল, ঘুনি, মুগরির সাবেক অস্ত্র। তাৎক্ষণিক লাভের তত্ত্বে চূড়ান্ত অবহেলিত হয় বৃহত্তর লাভের ধারণা। এখনই সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সদর্থক পদক্ষেপ না করলে বাজারের ব্যাগে দেশি চুনোমাছ আর থাকবে না।
পলাশ মান্না
সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
দাদুর ইলিশ
শুভাশিস চক্রবর্তীর ‘নাটক শেষে দর্শকদের হাতে আস্ত ইলিশ’ (রবিবাসরীয়, ১১-৭) নিবন্ধটি পড়তে পড়তেই মনে পড়ে গেল আমার দাদুর কথা। দাদু ছিলেন কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কার্ডও ছিল, আর তিনি নিয়মিত ইস্টবেঙ্গল মাঠে এবং যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর প্রিয় দলের খেলা দেখতে যেতেন। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহ বা বর্ষাকালের প্রবল বৃষ্টি, কোনও কিছুই দাদুকে আটকাতে পারত না। ইস্টবেঙ্গল কোনও ম্যাচে মোহনবাগানকে হারালে, বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জিতলে, দাদু বাড়িতে একটি ইলিশ কিনে আনতেন। সে যেখান থেকেই হোক না কেন, আর তার যত দামই হোক না কেন। তার পর সেটিকে জমিয়ে রান্না করে বাড়িতে হত আনন্দ উদ্যাপন। শুনেছি, এক বার নাকি ইস্টবেঙ্গল কোনও একটা ট্রফি জেতার পর বাড়ির কাছের বড় মাছের বাজারগুলোয় ইলিশ না পেয়ে দাদু সোজা ডায়মন্ড হারবার গিয়ে কিনে এনেছিলেন জোড়া ইলিশ!
সৌরীশ মিশ্র
কলকাতা-৯১
প্রতিযোগী
পেট্রল, ডিজ়েলের দাম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে উত্তেজনা স্বাভাবিক, কারণ, এটা আমাদের জীবনযাত্রায় খুব বড় ধাক্কা। কিন্তু, ষাট, সত্তর বছরের তেলের দামের যে তুলনা টানা হচ্ছে, তার সঙ্গে ওই সময়ের মাছ, মাংসের দাম দেখলে দেখা যাবে, সেগুলোর দাম এখন অন্তত দু’শো, আড়াইশো গুণ বেশি হয়ে গিয়েছে। যদিও বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ মাছ উৎপাদনে দেশে একেবারে সামনের সারিতে, কিন্তু যে মাছ ষাটের দশকে দুই বা তিন টাকা কিলো দরে পাওয়া যেত, সেই ‘সাধারণ’ রুই, কাতলার কিলোপ্রতি দাম এখন অন্তত দেড়শো বা দু’শো গুণ। মাছভাত খাওয়া বাঙালি কী খাবে? ইলিশ মাছের দাম আর উল্লেখ করলাম না।
সুশান্ত ঘোষ
কলকাতা-৬৫
নিয়মরক্ষা
মাহেশের রথের মেলার জন্য সারা বছর অগণিত মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন। অতিমারির জন্য রথযাত্রা স্থগিত রইল, অথচ শোভাযাত্রা করে জগন্নাথ মন্দির থেকে নারায়ণ শিলা নিয়ে যাওয়া হল মাসির বাড়ি পর্যন্ত (‘মাহেশে ভিড়, নিয়মরক্ষায় রথে টান কিছু এলাকায়,’ ১৩-৭)। এই সংবাদ, বিশেষ করে ছবি দেখে কী বুঝলাম? বুঝলাম, শালগ্রাম শিলা কোনও সেবায়েত নয়, সাংসদকেই নিয়ে যেতে হবে। আরও বুঝলাম, সাংসদ যখন পথে, তখন নিয়ম মানার কোনও দরকার নেই, মাস্ক থুতনির তলায়ও রাখা যায়, না-ও পরা যায়। সে শোভাযাত্রায় ভিড়ও হতে পারে, যেখানে দূরত্ববিধির কোনও বালাই নেই।
প্রশ্ন একটাই, যে উদ্দেশ্যে রথযাত্রায় রথের দড়ি ছুঁতে দেওয়া হল না সাধারণ মানুষকে, তা কি সাধিত হল? না কি সাংসদের উপস্থিতির জন্য প্রশাসনই ঢিলেঢালা আচরণ করল?
দেবাশিস চক্রবর্তী
মাহেশ, হুগলি
প্রতিবেশী
দেবজিৎ সরকারের ‘পথকুকুর’ চিঠিটির (১২-৭) প্রসঙ্গে বলি, পথকুকুররা যে সমাজের একটা অংশ, তা অনেকে মানতেই চান না। কী ভাবে এদের সরিয়ে দেওয়া যায়, তার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। প্রথম চেষ্টা খাবার না দেওয়া। এর ফলে ওরা রাস্তায় যেতে বাধ্য হয়, আর কয়েক দিনের মধ্যেই গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। যারা কোনও ভাবে বেঁচে যায়, তারাও নিয়মিত খাবার পায় না। এদের সম্পর্কে আর একটা বড় অভিযোগ, এদের চিৎকারে রাতে ঘুমের অসুবিধা হয়, পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়। কিন্তু কেন এরা চিৎকার করে, কেউ ভাবতে রাজি নন। যাঁরা এদের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদেরও বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। সুখের কথা, আজকাল প্রশাসন এঁদের কিছুটা সাহায্য করে, যাতে তাঁরা কুকুরদের সুরক্ষা ও পরিচর্যার কাজটি ঠিকমতো করতে পারেন। পথকুকুরদের শুধুমাত্র খাবার দিলেই হবে না, ওষুধপত্রও দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃমির ওষুধ ও টিকা। সবাই ইতিবাচক ভাবনা করলে সমাধান হবেই।
মোহর দাশগুপ্ত
কলকাতা-৯৯
ওঝারা সাবধান
‘ঝাড়ফুঁক করলে জেল-জরিমানা...’ (১৪-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখলাম, থানায় ডেকে এনে সাবধান করা হয়েছে ওঝা, গুনিনদের। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সাপে-কাটা রোগী তাঁদের কাছে গেলে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। অন্যথায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেল-জরিমানাও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ওঝা ও গুনিনরা মুচলেকাও দেন বলে খবরে প্রকাশ। এই কাজের জন্য দেগঙ্গা থানার আইসিকে সাধুবাদ জানাই। অন্যরাও এই পদক্ষেপ করলে ওঝার কবলে পড়ে আর সাপের কামড়ে বেঘোরে প্রাণ চলে যাবে না। সম্প্রতি এক দিনের ব্যবধানে বেড়াচাঁপার সমীর পাড়ুই ও কুমরুলির রিয়াজুল ইসলামকে সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ ঝাড়ফুঁকে অমূল্য সময় নষ্ট করার ফলে তাঁদের মৃত্যু হয়।
মঙ্গল কুমার দাস
রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy