Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: বাল্মীকির রামও দয়ালু

সম্পূর্ণ রামায়ণে এ রকম ঘটনা প্রায় বিরল, যেখানে রাম নিজে অথবা তাঁর কোনও প্রিয়জন, আশ্রিতজন আক্রান্ত না হলেও, অথবা বিনা প্ররোচনায়, অকারণে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

বিশ্বজিৎ রায় তাঁর ‘মারমুখীরা কি শুনবেন?’ (৭-৭) প্রবন্ধটিতে বলেছেন, এ দেশের ভক্তিবাদী ঘরানায় রাম একেবারেই মারকুটে নন। ভক্তিবাদী ঘরানার রামায়ণ-কথা বলতে মূলত তুলসীদাস-কৃত্তিবাস-কম্বনের রামায়ণ, আধ্যাত্মিক রামায়ণ-সহ বহুতর আঞ্চলিক ভাষ্যের কথা মনে আসে। এই সব রামায়ণে কোথাও রাম অতি কোমলচিত্ত, ঘরোয়া, কোথাও বা ভক্তের ভগবান রূপে চিত্রিত। কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণ নামে যা প্রচারিত, সেখানেও কি রাম খুব একটা মারমুখী চেহারায় দেখা দিয়েছেন? কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্রোধ, অসূয়া, সংশয় তিনি প্রকাশ করেছেন ঠিকই, কিন্তু এগুলি তাঁর পক্ষে ‘স্বাভাবিক’ নয়— স্বভাববিরুদ্ধ।

সম্পূর্ণ রামায়ণে এ রকম ঘটনা প্রায় বিরল, যেখানে রাম নিজে অথবা তাঁর কোনও প্রিয়জন, আশ্রিতজন আক্রান্ত না হলেও, অথবা বিনা প্ররোচনায়, অকারণে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। বরং অন্যায়কারী, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও বার বার বলছেন, ‘‘ন হি…উৎস্যহে হন্তুম্’’— মারতে ইচ্ছে করছে না (১.২৬.১৩)। আর তাঁর এই মারতে না চাওয়ার ‘সার্টিফিকেট’ সবচেয়ে বেশি করে পাওয়া যায় তাঁর বিরোধী পক্ষের মুখ থেকে। মারীচকে রাবণ যখন সোনার হরিণের রূপ ধরে ছলনা করতে বলেন, মারীচের বক্তব্য ছিল, রাম তাঁকে এক বার প্রাণে না মেরে ছেড়ে দিয়েছেন (৩.৩৮.২০), আরও এক বার রামের কাছে অপরাধী হতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না। লঙ্কায় যুদ্ধের আগে শুক-সারণ নামে রাবণের দুই মন্ত্রী ছদ্মবেশে রামের সেনাদলে ঢুকে ধরা পড়লে, রাম তাঁদের বিনা বাধায় সব কিছু দেখেশুনে, চলে যাওয়ার অনুমতি দেন। ফিরে এসে তারাই রামের ক্ষমাশীলতার কথা জানায় তাদের প্রভুকে।

অরণ্যকাণ্ডে সীতা যখন তাঁকে যুদ্ধ-হত্যা এ সব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, রাম তাঁকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাচ্ছেন এমন ভাবনার জন্য। কিন্তু ঋষিদের বিপদে-আপদে রক্ষা করবেন বলে কথা দিয়েছেন, তাই প্রয়োজনে তাঁকে অস্ত্রধারণ করতেই হবে (৩.১০.১৬-১৮)। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে যুদ্ধ রামের কাছে কর্তব্যের তাড়নামাত্র। যুদ্ধকাণ্ডের শুরুতেও রাম বার্তা পাঠাচ্ছেন রাবণের কাছে: যদি সীতাকে তাঁর কাছে সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তিনি যুদ্ধ না করেই চলে যাবেন। বোঝা যায়, উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি তিনি চান না, লঙ্কার সাধারণ প্রজাদের বিনা দোষে শাস্তি দিতেও তাঁর ইচ্ছা নেই।

যে সব ঘটনার জন্য রাম সবচেয়ে বেশি সমালোচিত, সে সব ক্ষেত্রেও তিনি আগ্রাসনের বশে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন, এমন কথা বলা যায় না। বরং বলা চলে, পরিস্থিতি তাঁকে ‘নিষ্ঠুর’ আচরণে বাধ্য করেছে। বালীবধের বর্ণনায় বাল্মীকি রামায়ণেই দু’তিন রকম ভাষ্য পাওয়া যায়। আদিকাণ্ডে, যেখানে নারদ মুনি মহর্ষি বাল্মীকির কাছে সূত্রাকারে রামায়ণের মূল কাহিনি বর্ণনা করছেন, সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, সুগ্রীব রামকে নিয়ে কিষ্কিন্ধ্যায় গেলেন। আহ্বান শুনে বালী বেরিয়ে এসে তাঁদের আক্রমণ করলেন। তখন রাম একটিমাত্র শর মোচন করে তাঁকে বধ করলেন (১.১.৬৮-৬৯)। এই ভাষ্য অনুযায়ী, রাম যে আদৌ আড়ালে ছিলেন, তাও তো মনে হয় না।

আবার বালীপত্নী তারার কাছে বালীর অনুচরেরাই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানাচ্ছেন, যুদ্ধে বালী-নিক্ষিপ্ত বহু বৃক্ষ-প্রস্তর ভেদ করে রাম তাঁকে নিহত করেছেন (৪.১৯.১১)। অর্থাৎ বালীর দিক থেকে সরাসরি রামের সঙ্গে শত্রুতা না থাকলেও, প্ররোচনা যথেষ্টই ছিল, এবং সুগ্রীবের বন্ধু হিসেবে তাঁকে রক্ষা করার দায়ও তাঁর ছিল। উপরন্তু সুগ্রীব রামকে জানিয়ে রেখেছিলেন, বালী তাঁকে বিতাড়িত করে তাঁর পত্নী রুমাকে ভোগ করছেন (তিনি নিজেও যে বালীর অবর্তমানে তারাকে গ্রহণ করেছিলেন, সে কথা বলেননি)। এই কথা সীতাহারা রামের মনে বালীর প্রতি বিরাগ সৃষ্টি করলে তা অস্বাভাবিক নয়।

রামের যে কাজটি এ-কালের দৃষ্টিতে তাঁর সবচেয়ে বড় দোষ, তার পিছনেও কিন্তু রয়েছে, সমালোচকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না করে, তাঁদের মতকে মান্যতা দিয়ে, তাঁদের কাছে সুশাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা। তাঁর নামে জয়ধ্বনি না দিলে মারমুখী হয়ে ওঠা নয়, বরং যে কারণে লোকে তাঁর দোষকীর্তন করছে— তার প্রতিকার করার তাগিদেই তিনি চরম অন্যায় করে ফেলেছেন নিজের সবচেয়ে প্রিয়জনের প্রতি, আর যন্ত্রণা দিয়েছেন নিজেকেও। এই রাম মানুষ হোন বা দেবতা, তাঁর দোষ আর যা-ই থাক, অন্যকে পীড়ন করার চেয়ে নিজেকে এবং আত্মজনকে কষ্ট দেওয়া যিনি শ্রেয় মনে করেন, তার নাম নিয়ে হানাহানি সত্যি বড় পীড়াদায়ক।

পৃথা কুণ্ডু

কলকাতা-৩৫

রাজা, মহারাজা

‘বারাণসীর রাজা কুয়ো খুঁড়ে দিলেন লন্ডনে’ (‘লন্ডন ডায়েরি’, ৭-৭) খবরটির শিরোনামে বলা হল বারাণসীর ‘রাজা’। অন্তর্বর্তী অংশে একাধিক বার লেখা হয়েছে ‘মহারাজা’। এগুলি নিছক ঔপনিবেশিক উপাধি মাত্র, কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল না, কিন্তু উপাধিগুলির বিভিন্নতা কিছু প্রতীকী পার্থক্য নির্দেশ করে বইকি।

দ্বিতীয়ত, সারা লেখা জুড়ে ‘রাজা’ বা ‘মহারাজা’র নাম উল্লেখ করা হল না কেন? তাঁর নামটি ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও নয় কি? বারাণসীর ইতিহাসে একটু চোখ বুলিয়ে নিলেই দেখা যেত, ‘নারায়ণ’ রাজবংশের উত্তরাধিকারীদের সাধারণ উপাধি, এই কুয়ো প্রতিষ্ঠার কালে অর্থাৎ ১৮৬৪ সালেও ছিল ‘রাজা’। ওই সময় বারাণসীর রাজা ছিলেন ঈশ্বরী প্রসাদ নারায়ণ সিংহ। তাঁকে ‘মহারাজা’ উপাধি দেওয়া হয় ১৮৭৭ সালে। তিনি সিংহাসনে আসীন ছিলেন ১৮৩৫-১৮৮৯। তাঁর উত্তরাধিকারী প্রভু নারায়ণ সিংহ ‘রাজা’ উপাধি নিয়েই সিংহাসনে বসেন ১৮৮৯-তে। ১৯১১ থেকে বারাণসীর ‘রাজা’র সাধারণ উপাধি হয় ‘মহারাজা’।

শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া

বরদা, সুতাহাটা

সংরক্ষণ

‘বাবুদের সমস্যা’ (৬-৭) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে এই চিঠি। জাতিভেদ প্রথা বা জাতের নামে বজ্জাতি যেমন অমানবিক ও অসমর্থনীয়, তেমন জাতপাতের ভিত্তিতে অনির্দিষ্ট কাল সংরক্ষণও অসমর্থনীয়। এত বছর ধরে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনও জাতিগোষ্ঠীকে উন্নত হয়েছে বলে ঘোষণা করে সংরক্ষণের আওতা থেকে বার করে আনা হয়নি, বরং নতুন নতুন জাতকে সংরক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। সংরক্ষণের বিরোধিতার অর্থ এই নয় যে সমস্ত উচ্চপদ ও চাকরি বাবুদের জন্য সংরক্ষিত করা। এর অর্থ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত আসন, চাকরি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, যেখানে প্রবেশের জন্য মেধাই হবে একমাত্র মাপকাঠি। কোনও জাত, ধর্ম, বংশপরিচয় নয়। যাঁরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বংশপরম্পরায় সংরক্ষণ চান, তাঁরা আসলে জাতিভেদ প্রথাকেও টিকিয়ে রাখতে চান, কারণ জাতপাত ছাড়া তো সংরক্ষণ হয় না। এর ফলে বঞ্চিত মেধাবী জেনারেল প্রার্থীদের ক্ষোভ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সুজয় চন্দ

রায়পুর, উত্তর দিনাজপুর

বাকি কেন?

‘রোগ নির্ণয়ে জ্যোতিষী’ (৮-৭) পড়ে মনে হল, এ বার শুরু হোক গুনিনবিদ্যা, তন্ত্র, বশীকরণের সঙ্গে বিজ্ঞানের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা। ওঝাবিদ্যা, থালা-চালান বাকি থাকে কেন? জন্ডিসের মালা পরীক্ষা করে দেখা হোক, রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে কি না। এখন এই সবই তো চলবে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাগ্যবিচার, মন্ত্রপূত মাদুলি, লকেটের বিজ্ঞাপনের রমরমা। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দিনকে দিন আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ অবিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখছেন। আর কে না জানে, বেশির ভাগ মানুষ যেমন চাইবেন, জনপ্রিয় সরকারও সেই পথে এগোবে। আইনকানুন, বিজ্ঞানের পাঠ, সচেতনতা— এ সব নয় হাতির ‘দিখানে কে লিয়ে’ দাঁত হয়েই থাকুক।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Ramayana Rama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy