Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: পাহাড় ভাঙার গান

তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা যা বললেন, তা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষের-ই হাড় হিম করে দিল।

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার মিছিল যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে স্লোগান উঠবেই, ‘‘এনআরসি তফাত যাও।’’ সত্য সংবাদ পরিবেশনের অপরাধে কালবুর্গি-গৌরী লঙ্কেশদের হত্যার মিছিল যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে স্লোগান উঠবেই, ‘‘কালবুর্গির হত্যাকারীরা ফিরে যাও।’’ ধর্মের নামে পেহলু খানদের হত্যার মিছিল যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে স্লোগান উঠবেই, ‘‘পেহলু খানের হত্যাকারীরা চলে যাও।’’ জাতের নামে রোহিত ভেমুলাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার সংস্কৃতি যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে স্লোগান উঠবেই, ‘‘রোহিতের হত্যাকারীরা সাবধান!’’ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক একটি দেশে সংবিধানের শপথ নিয়ে মন্ত্রী হওয়ার পরও প্রকাশ্যে একটি সম্প্রদায়ের মানুষকে দেশ থেকে তাড়ানোর হুমকি যদি মন্ত্রীদের মুখে অব্যাহত থাকে তা হলে স্লোগান উঠবেই, ‘‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গো ব্যাক।’’

সবাই আমাদের মতো, দেশের ভাগ্য আর দেশের জনগণের ভাগ্য এক জন মানুষের হাতে কিংবা একটি রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতে পারবে না। কেউ জেগে থাকবে রাজপথে, কেউ বা কোনও অজ গ্রামে। কেউ জেগে থাকবে ফুটপাতে, কেউ বা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিরোধিতার মশাল নিয়ে। হাতে হাতে ব্যারিকেড করে। মুখে থাকবে দৃপ্ত স্লোগান। পাহাড় ভাঙার সেই গান।

শাসকের চোখে তা মনে হতে পারে অপরাধ। ভিন্ন মতাদর্শীদের তা মনে হতে পারে বাড়াবাড়ি। অভিভাবকরা তাদের করতে পারেন মৃদু ভর্ৎসনা। বুদ্ধিজীবীরা তাদের দেখাতে পারেন অন্য কোনও পথ।

তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা যা বললেন, তা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষের-ই হাড় হিম করে দিল। এক জন শুধু সেই আন্দোলনের বিরোধিতাই করলেন না, ছাত্রীদের শ্লীলতা সম্পর্কে মন্তব্য করে বললেন, ‘‘ওরা কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কি না জানতে চাইছি।’’

তার পর তিনি ছাত্রছাত্রীদের দেশদ্রোহীর আসনে বসিয়ে বললেন, ‘‘কাউকে ছাড়া হবে না। ওরা যে ভাষা বোঝে, সে ভাষাতেই ওদের শিক্ষা দেওয়া হবে। হাত ভেঙে দেওয়া হবে। পাকিস্তানে গিয়ে যে ভাবে সার্জিকাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল, যাদবপুরে ঢুকে দেশদ্রোহী ছাত্রদের ঘাঁটিও সে ভাবেই ধ্বংস করা হবে।’’

পিন্টু পোহান

কলকাতা-৮

পিতার পরামর্শ

2 সম্প্রতি এক বেনজির অস্থিরতার সাক্ষী থাকল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ধ্বংসাত্মক ছাত্র আন্দোলন, তার সঙ্গে যাঁকে ঘিরে আন্দোলন তাঁর অতিরিক্ত স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা, তার পর ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্য এক সাংবিধানিক প্রতিনিধির মাঠে নামা, একদল ‘ছাত্র’ নামধারীর নিজস্ব স্টাইলে ভাঙচুর, আগুন ধরানো পুরো ব্যাপারটিকে হাতের বাইরে নিয়ে যায়। তবুও এর মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেখে সুষ্ঠু ভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন উপাচার্য। তাঁর বিবেচনা ও ছাত্রদরদি প্রচেষ্টাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

বহু ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী বাংলা। কিছু দিন আগেও নীলরতন সরকার হাসপাতালের ইন্টার্নদের শুরু করা আন্দোলন যে ভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তার পর অভিভাবকসুলভ মনোভাব নিয়ে তাকে প্রশমিত করা হয়, শ্রীযুক্ত বাবুল সুপ্রিয় ও মাননীয় রাজ্যপাল মহাশয় সেটা মাথায় রাখলে ভাল করতেন। ছাত্রদের সঙ্গে পাল্টা তর্কবিতর্ক, তাদের প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং উপাচার্যকে নিখাদ এক জন অধস্তন কর্মচারীর অতিরিক্ত অন্য কিছু না ভাবতে পারা মোটেই সুরুচির পরিচয় প্রদান করে বলে মনে হয় না।

লেনিন, সুকান্ত, বিদ্যাসাগরের মূর্তির পরে আজ মার্ক্স, রবীন্দ্রনাথের প্রতিমূর্তি আক্রান্ত। স্টাইল এক— ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও। এই ক্ষেত্রে যারা অন্তত সাদা চোখে দোষী, তারাও ছাত্র। তাদের প্রতি এক কলেজ ছাত্রের পিতার পরামর্শ: কারও মূর্তি ভাঙা যায়, কিন্তু তার শিক্ষা, আদর্শ, ইমেজ হাজার চেষ্টা করলেও মোছা যায় না। বরং যারা মুছতে যায়, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

পার্থ নন্দী

শেওড়াফুলি, হুগলি

যাদবপুর পর্ব

2 একটি ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে যে ভাবে হেনস্থা হতে হল তা একান্তই অনভিপ্রেত। মন্ত্রিমশাই যে ভাবে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন তাও কাঙ্ক্ষিত নয়। আর স্বয়ং আচার্য যে ভাবে অকুস্থলে উপস্থিত হলেন তা-ও নজিরবিহীন।

সে দিন যাদবপুরে যে কাণ্ড ঘটল তার প্রাথমিক দায় ছাত্রছাত্রীদের। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী বিক্ষোভ দেখালেন, কালো পতাকা কি গো-ব্যাক ধ্বনি দিলেন, এ আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। ঠিক একই ভাবে বাবুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, কথা বলা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার— এই চেতনাটুকু না থাকলে কিসের আন্দোলন! অপর পক্ষের কথা শোনার ধৈর্য না দেখালে কিসের ব্যক্তিস্বাধীনতা! আপনাদের উচিত ছিল অনুষ্ঠানে তাঁর কথা মন দিয়ে শোনা। তার পর যুক্তি দিয়ে উপযুক্ত জায়গায় তার জবাব দেওয়া। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে আপনারা ভুল করেছেন। আপনাদের মেধা ও যুক্তির উপর আমাদের ভরসা আছে, শুধু একটু আত্মবিশ্লেষণ জরুরি।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে বাবুল আপনার কাছ থেকে আমরা সংযম আশা করব। যে ভাবে কথা বললেন তা সবটাই শোভন সুন্দর? উপাচার্যের সঙ্গে আপনার কথোপকথন ‘‘আমি নির্বাচিত সাংসদ। আপনারই উচিত ছিল আমায় অভ্যর্থনা জানানো।’’ এখানে দুটো কথা বলতে ইচ্ছে করছে— কোনও সাংসদ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গেলে উপাচার্যদের দৌড়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর রীতি আছে বলে জানা নেই, আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বড়জোর নিরাপত্তা আধিকারিকদের জানার কথা নিরাপত্তার স্বার্থে। উপাচার্যের জানার কথা নয় যে হেতু তিনি নিজেই সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন না।

সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পাসে আচার্যের উপস্থিতিতে একদল ছাত্র যে ভাবে ছাত্র সংসদের ঘরে ভাঙচুর চালাল তা-ও ছাত্রসুলভ নয়। মুখে গণতন্ত্র স্বাধীনতার কথা বলব অথচ তার অনুশীলন করব না, তা হয় কখনও?

শুভঙ্কর সাহা

সিন্দ্রানী, উত্তর ২৪ পরগনা

প্রশাসনের পঙ্গুত্ব

2 যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয় এবং অগ্নিমিত্রা পালের হেনস্থা এবং তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ প্রমাণ করে দিয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নেই আর প্রশাসন বিচারবোধ বা সঙ্কল্প পঙ্গুত্বে ভুগছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময়ে বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে অত লোকজন ছিল না যে তাদের পক্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কোনও গন্ডগোল পাকানো সম্ভব ছিল। এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চড়, থাপ্পড়, চুল টানা, জামা ছিঁড়ে দেওয়া এবং আর এক জন সম্মানিত মহিলাকে হেনস্থা করা, প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে আটকে রাখা এবং অবশেষে রাজ্যপালকে গিয়ে সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা এবং উপাচার্যের পুলিশ ডাকতে অস্বীকার করা প্রমাণ করে উপাচার্য শাসকের দলদাস আর পুলিশ অবশ্যই নিষ্ক্রিয় বা অপারগ।

এই ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটলে ওই ‘মাওবাদী’ বলা ছেলেটিকে পুলিশ ওখানেই গ্রেফতার করত। বাবুলের ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা কেন? অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য বলে?

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ছাত্রের এত সাহস হয় কী করে যে, সে বুক ঠুকে বলে যে সে মাওবাদী। আর এই অসভ্যতার পিছনে ক’জন সত্যিকারের মাওবাদী আর ক’জন মাওবাদী অভিনেতা ছিল, সেটা পুলিশের উন্মোচনের দায়। দেখা যাক, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কী পদক্ষেপ করে।

এবিভিপি যে কাণ্ড ঘটিয়েছে সেটা যথেষ্ট নিন্দনীয়। এই প্রতিক্রিয়া তারা এই ভাবে ব্যক্ত না করলে তাদের দল রাজনৈতিক ভাবে উপকৃত হত।

সৈকত মাধব গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা- ৪২

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur JU Jadavpur University Babul Supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy