Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
love

সম্পাদক সমীপেষু: ভালবাসা কারে কয়

মাটির মানুষ প্রেমকে, ভালবাসাকে স্পর্শ করতে চায়, আঁকড়ে ধরে আপন করতে চায়। কিন্তু সে বোঝে না ভালবাসার আসল রূপ।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৫৮
Share: Save:

“‘ভাল তো গো বাসিলাম’” (১২-২) শীর্ষক প্রবন্ধে ঈশানী দত্ত রায় সাংবাদিকতার মোড়কে সাহিত্যিক ঢঙে ভালবাসা-সংক্রান্ত কিছু অমোঘ সত্যের কথা লিখেছেন। শুরু করেছেন এই ভাবে: “ভাল আমরা কেন বাসি?” প্রশ্নটা সহজ মনে হলেও আদৌ তা নয়। রবিঠাকুর লিখেছেন: “...জীবের মধ্যে অনন্তকে অনুভব করার অন্য নামই ভালবাসা।” আবার স্বামীজি বলে গিয়েছেন: “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” এই দুই ভাবনা আসলে প্রেমের অন্তহীনতাকেই বোঝায়। প্রকৃত ভালবাসার মধ্যে দিয়ে আমাদের পার্থিব মন অপার্থিব আনন্দের ভাগীদার হতে চায়। প্রকৃত ভালবাসা হবে নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ। আর যে ভালবাসায় নেই যাতনা, সে ভালবাসা ভালবাসাই নয়।

কিন্তু এ সব তো উচ্চমার্গের কথা। মাটির মানুষ প্রেমকে, ভালবাসাকে স্পর্শ করতে চায়, আঁকড়ে ধরে আপন করতে চায়। কিন্তু সে বোঝে না ভালবাসার আসল রূপ। আর তার থেকেই যাবতীয় দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ভালবাসার দুয়ারে যখন স্বার্থ এসে দাঁড়ায়, তখন তাকে আমরা ভালবাসার পরম আত্মীয় মনে করে অবাধ প্রবেশের অনুমতি দিই। আধুনিক যুগে মানুষ যেমন বাহ্যিক জ্ঞানের ভান্ডার বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট, সেই অনুপাতে অন্তরের মণিমাণিক্য আজও তার কাছে অচেনা, অদেখা রয়ে গেল। তাই প্রকৃত ভালবাসা হারিয়ে যাচ্ছে। দেশপ্রেমের সঙ্গে মানবপ্রেমের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু আমরা তা ভুলে গিয়ে দেশকে ভালবাসার নামে মানুষের প্রতি হিংস্র আচরণ করি। রাজনীতিতেও একই জিনিস ঘটে চলেছে। আমরা নকল ভালবাসার ফাঁদে পড়ে আসলে প্রেমহীন, ভালবাসাহীন জীবন যাপন করছি। ভুলে গেছি প্রকৃত ভালবাসা মানে মোহগ্রস্ত থাকা নয়, মোহমুক্ত হওয়া। ভালবাসায় কাঁটার অস্তিত্ব জেনেই আমাদের ভালবাসতে হবে, ক্ষতবিক্ষত হয়েও এগিয়ে যেতে হবে। এ এক অনন্তপথে যাত্রা, অসীমের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কঠোর সঙ্কল্প। প্রবন্ধকারও নানা উদাহরণ দিয়ে এই কথাটাই বোঝাতে চেয়েছেন।

অশোক বসু

বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ভোলার উপায়

ঈশানী দত্ত রায়ের প্রবন্ধটি পড়ে ভারী ভাল লাগল। এই পত্রলেখক সত্তরের দশকে নিয়মিত কলকাতার ঘেরা মাঠে যেত, তাই লেখক বর্ণিত আবেগ তার বিলক্ষণ চেনা। ওই সময় কলকাতার একটি প্রধান দলের ডাকনাম ছিল জার্মান। তাদের লাল-হলুদ জার্সি ও কালো হাফপ্যান্ট তদানীন্তন দুই জার্মানির জাতীয় পতাকার রঙের সঙ্গে মিলে যাওয়ার কারণে। বিপরীতের প্রধান দলটির ডাকনাম, কেন জানি না, ছিল ছারপোকা। ছারপোকা দলের হয়ে জার্মান দলের সমর্থকদের সঙ্গে বিস্তর ঝগড়া বিবাদ তর্ক মারামারি করেছি, ঢিলও ছুড়েছি— এখন ভাবলে হাসি পায়। প্রবন্ধকার প্রশ্ন তুলেছেন, “এই ‘ভার্চুয়াল’ ভালবাসায় প্রাপ্তি কী?” উত্তরটি সবার জানা, কিচ্ছুটি নয়। তবু মানুষ না-দেখা দেশের ফুটবল দলের হয়ে গলা ফাটায় কেন, কেন তার সঙ্গে জড়িয়ে নেয় নিজের জীবন, আবেগ, অস্তিত্ব?

মাঝে মাঝে মনে হয়, অতলস্পর্শী হতাশাই বোধ হয় এর কারণ। এই মানুষগুলির জীবনে গর্বিত হওয়ার উপাদানের বড় অভাব। নিত্য অভাব, বাড়িতে খিটিমিটি, কর্মক্ষেত্রে উপরওয়ালার খিঁচুনি, অবাধ্য সন্তান— এই সব কিছু ভুলে থাকার, জয় করার একমাত্র পথ ভাস্বর কোনও কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া, যাতে তার আলোকে আমি ক্ষণকালের জন্য হলেও আলোকিত হয়ে উঠতে পারি।

এই মানসিকতা থেকেই বোধ হয় প্রিয় দল জিতলে সমর্থক আনন্দে আত্মহারা হন। দুঃখও পেতে হয়। দাদার ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব গেলে দাদা সুস্থ ছিলেন, কিন্তু দাদাভক্ত আমার এক একদা সহকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হন।

তপন পাল

কলকাতা-১৪০

দ্বেষহীন প্রেম

“‘ভাল তো গো বাসিলাম’” পড়ে এক স্নিগ্ধ, বিষণ্ণ ভাললাগার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল মনে। অঙ্কের রাশভারী মাস্টারমশাই আমার বাবা বিকেলে রেডিয়োতে ফুটবলের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে উত্তেজিত হয়ে উঠতেন। ভালবাসা কি উত্তরাধিকারে সঞ্চারিত হয়? নইলে উজ্জ্বল লাল-হলুদ রং দেখলেই কেন নিজের প্রিয় ক্লাবের কথা মনে পড়ে, তা সে যতই হারুক, যতই হৃদয় রক্তাক্ত হোক? ভালবাসা ছিল ক্রিকেটে, স্কুলবেলায় রেডিয়োতে কান পেতে অজয় বসুর সেই বর্ণনা, “রৌদ্রোজ্জ্বল ইডেন গার্ডেন্সে আশি হাজার দর্শক কানায় কানায় পূর্ণ”— ঠিক যেন ছবি।

তিরাশি সালে সরকারি চাকরি পেয়ে বড়দা কিনে আনল শাটার দেওয়া সাদাকালো বাক্স টিভি। প্রুডেনশিয়াল কাপে ভারতের বিশ্বকাপ জয়। আমাদের সে কী উচ্ছ্বাস! আজ যখন উগ্র জাতীয়তাবাদে অলিম্পিক্সে মহিলা হকি দল হেরে গেলে দলিত খেলোয়াড় বন্দনা কাটারিয়ার বাড়ি আক্রান্ত হয়, তখন মনে পড়ে ২০১১ সালে বেড়াতে গিয়ে আলমোড়ায় ভারতের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ের দিনের স্মৃতি। নীচের রাস্তায় ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ চিৎকার। জানলা দিয়ে দেখি দামি গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজন খন্তা কাঁধে ধুলোমাখা শ্রমিকের সঙ্গে কোলাকুলি করছে। দেশকে ভালবাসার এই অমলিন দৃশ্য দেখে সুখে চোখে জল এল। বাংলাকে ভালবাসি বলেই বোধ হয় যখন বাংলাদেশ গায়, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...”, দু’চোখ দিয়ে ধারা নামে।

বিয়ের আগে প্রথম পরিচয়ে স্বামী জানিয়েছিলেন, “আমি কিন্তু মোহনবাগান।” অনুরাগের ছোঁয়ায় তখন সব দলাদলি ভেসে যায়। ছেলে বড় হওয়ার পর থেকেই কট্টর মোহনবাগানি। সে দিন ডার্বি ম্যাচে ৩-১’এ জেতায় বাবা-ছেলের কী আনন্দ! আমার কিন্তু বিষণ্ণ ভালবাসায় মন ভরে গেল। এই ভালবাসার ঋতুতে দ্বেষহীন ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ুক সব জায়গায়।

শিখা সেনগুপ্ত

কলকাতা-৫১

যশোর রোড

১৮৪০ সালে যশোরের তৎকালীন জমিদার কালী পোদ্দার যশোর থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি করেছিলেন, সেই রাস্তাই এখন যশোর রোড নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই যশোর রোডের। কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ভারতে এসে শরণার্থীদের চোখের জল দেখে রচনা করেছিলেন ১৫২ লাইনের এক হৃদয়স্পর্শী কবিতা— ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। এই রাস্তার বাঁকে বাঁকে কতই না ইতিহাস লুকিয়ে আছে! তাই তো শিল্পী, সাহিত্যিক থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব— সকলেই নানা সময় বার বার ছুটে এসেছেন এই পথে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, যশোর রোডের বিশেষ শ্রীবৃদ্ধি হয়নি। লোকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রাস্তায় বেড়েছে যানবাহনের চাপও। যানজটে নিত্য তার নিশ্চল অবস্থা। প্রায় প্রতি দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। যশোর রোড চওড়া করার জন্য দু’পাশের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বৃক্ষগুলিকে কেটে সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ করেছিল সরকার। আন্দোলন এবং আদালতের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়। কিন্তু মানুষের মৃত্যুমিছিল তাতে বন্ধ করা যায়নি। তাই এই রাস্তার উপযুক্ত সংস্কার প্রয়োজন। গাছ কেটে নয়, গাছকে বাঁচিয়ে রেখেই সেই সংস্কার করতে হবে। রাস্তার শ্রীবৃদ্ধি হলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। কিন্তু স্থানীয়দের সেই স্বপ্ন আজ বিশ বাঁও জলে। উপরন্তু ফুটপাত না থাকায় রীতিমতো জীবন হাতে নিয়েই কাজে বার হতে হচ্ছে সবাইকে। এখন শুনছি, যশোর রোড নাকি প্রশস্ত হবে। কিন্তু আর কত দিন তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে, কেউ জানে না।

প্রদ্যুৎ সিংহ

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

love
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy