জল উপর থেকে নীচের দিকে আসে, এই সাধারণ সত্যিটা যেন জানেন না ভারত ও বাংলাদেশের কিছু নেতা-নেত্রী ও তাঁদের অনুগামীরা। হিমালয় থেকে জল গড়িয়ে নামবে, সেই জল ভারতের বিভিন্ন নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে দিয়ে মিশে যাবে বঙ্গোপসাগরে। এর কোনও ব্যতিক্রম হওয়ার উপায়ই নেই। তবু, যেই বাংলাদেশের কিছু অংশে বন্যা হল, অমনি সেখানকার এক শ্রেণির মানুষ বলতে লাগলেন, ফরাক্কা ও ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত ইচ্ছে করে বন্যা করেছে।
একই কাণ্ড ভারতেও। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ডিভিসি বাঁধের জল ইচ্ছে করে ছেড়ে বন্যা সৃষ্টি করেছে। এ বার নেপালের কোশি নদীর বাঁধ থেকে জল ছাড়াতেও একই সমস্যা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থেকে তাঁর দলীয় ভক্তজন ও মিডিয়া চেঁচাচ্ছে, নেপাল কেন এত জল ছাড়ল? বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার দায় যেন কারও নেই। যা খুশি বলে দিলেই হল।
হিমালয় আমাদের এই উপমহাদেশের জলের অন্যতম উৎস। হিমালয় থেকে জল তিন ভাগে সাগরে গিয়ে মেশে। এক অংশ ভারতের কাশ্মীর, পঞ্জাব ও পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে গিয়ে আরব সাগরে মেশে। এখানেও উভয় দেশের মধ্যে বাঁধ নিয়ে সমস্যা আছে। আর একটি অংশ নেপাল-ভুটানের মধ্যে দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাগুলোর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মেশে। আর একটি অংশ চিন থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। ফলে হিমালয়ের জলের অধিকাংশটাই বাহিত হয় ভারতের অসম, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মধ্য দিয়ে। আর বাংলাদেশের একটা বড় অংশ দিয়ে।
এ দেশ, ও দেশ, এ রাজ্য, ও রাজ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অতিবৃষ্টি হলে বেশি জল হবে। সেই জল যেন উজান থেকে ভাটি এলাকা দিয়ে সাগরে মিশতে পারে, সেটা সবাইকে দেখতে হবে। ইচ্ছেমতো বাঁধ দিয়ে জল আটকালে, ছোট নদী, খাল বিল, বুজিয়ে দিলে বন্যা হবেই। কেউ আটকাতে পারবে না।
দীপক রায়, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
দায়বদ্ধ
৭ জুলাই, ১৯৪৮ একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল আজকের ডিভিসি। বরাকর নদীর উপর তিলাইয়া ও মাইথন, দামোদরের উপর পাঞ্চেত, এবং কোনার নদীর উপর কোনার বাঁধ নিয়ে গঠিত হল ডিভিসি। তবে প্রকল্প তৈরি হলেই তো হয় না। তার সুফল পেতে হলে কিছু দায়ও থাকে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ বলতে বোঝায় তার জলধারণ ক্ষমতাকে রক্ষা, যা এখন অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। শুখা মরসুমের সময়ে নিয়মিত ড্রেজিং-এর অভাবে এই অবস্থা। তবে জল ছাড়ার পর যে সকল নদী বা খাল দিয়ে জল প্রবাহিত হয়, সেগুলিরও গভীরতা রক্ষা করা প্রয়োজন। নদীর তীরবর্তী জনবসতিকে রক্ষার স্বার্থে বাঁধ দেওয়াও আবশ্যক। এই ক্ষেত্রে ডিভিসি এবং ভারত সরকারের মতো রাজ্য সরকারেরও দায় রয়েছে, তা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। সংশ্লিষ্ট রাজ্য এই দায়িত্ব পালন না করলে বিপর্যয় অনিবার্য।
এ রাজ্যে আর একটি বড় সমস্যা দুর্নীতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অর্থ থাকলেও নানা জটিলতার কারণে তা খরচ হচ্ছে না। আবার হলেও তা যথাযথ কারণে খরচ হচ্ছে না। খাতায়-কলমে বাঁধ সারানোর জন্য বিপুল খরচ দেখানোর পরেও, বন্যায় গরিব মানুষের বাড়িঘর ভাসছে। মানুষ ত্রাণের জন্য হাপিত্যেশ করছে। প্রশাসন, নেতানেত্রী তার মধ্যেও আত্মশ্লাঘার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দফতরের ব্যর্থতা ঢাকতে জাতীয় সড়ক বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন, ডিভিসি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এগুলি অপরিণামদর্শিতার লক্ষণ। অন্য কোনও রাজ্য যদি এই রাজ্যের ক্ষেত্রে একই পথ বেছে নেয়, তবে তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পক্ষে শুভ হবে বলে মনে হয় না। কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়েরই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে একটা গর্বের প্রকল্প যে এই ভাবে অভিশাপের কারণ হয়ে দেখা দিল, তা ভাবতে সত্যি কষ্ট হয়।
নিখিলরঞ্জন গুহ, শিলিগুড়ি
বাঁধের সংস্কার
নদীতে শুধু বাঁধ নির্মাণ নয়, নিয়মিত বাঁধ ও নদীর সুসংস্কারও প্রয়োজন। নদীতে বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ও বর্ষার জল ধরে রেখে শুখা মরসুমে কৃষিকাজে জল সরবরাহ করা, এই চিন্তার উপরেই ভারতের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যত গোল বাঁধছে এই বাঁধ ও নদীগুলির সংস্কার নিয়ে। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে শুখা মরসুমে জল বণ্টন ও বর্ষাকালে বাঁধ থেকে জল ছাড়া নিয়ে রাজ্যে-রাজ্যে ও কেন্দ্র-রাজ্যে কম ঝগড়া, বিতর্ক ও রেষারেষি হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য বাঁধের সুবিধা নিয়ে যতটা তৎপর হয়েছে, ঠিক ততটাই অনীহা দেখিয়েছে বাঁধ ও নদীর সংস্কার নিয়ে। বার বার কয়েকটি বিষয় প্রশ্ন হিসাবে উঠে এসেছে— নদী ড্রেজিং-এর আগে নদীর বিপুল জল সেচে অন্যত্র রাখা, ড্রেজিং-এর ফলে উঠে-আসা বিপুল পলি রাখার সংস্থান করা এবং বাঁধগুলির খোলনলচে বদলে আধুনিকীকরণ হবে কী করে? এ সবের জন্য বড় মাপের বাজেট বরাদ্দ করা, এবং তা যথাযথ কার্যকর করা হবে কতটুকু?
এ ব্যাপারে সদর্থক পরিকল্পনার মাধ্যমে সমস্যার আশু সুরাহার পরিবর্তে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি হয়েছে বিস্তর। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই তার ফয়দা তুলতে চেয়েছে। আর চরম মূল্য চোকাতে হয়েছে আমজনতাকে। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টির ফলে পলিতে মজে-যাওয়া অগভীর নদীগুলি বেশি জল ধরে রাখতে পারে না। ফলে সংস্কারহীন নড়বড়ে বাঁধগুলি থেকে প্রচুর জল ছাড়তে হয়। এই জল ও বর্ষণের জল বিস্তীর্ণ নিচু বসতি অঞ্চল ভাসিয়ে দেয়। রাজনীতির নেতারা তা বিলক্ষণ জানেন। তবুও তাঁরা নেমে পড়েন অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলতে। আর ভয়াবহ বন্যায় প্রত্যেক বছর আবাদ-ফসল, ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু ও মানুষের মৃত্যু হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন রাজ্যে। এখন বন্যা গ্ৰাম-গঞ্জ, শহরতলি, শহর ও মহানগরেও পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ রাজনীতি চায় না, চায় সুস্থ জীবন-জীবিকা ও বসবাসের নিরাপত্তা।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
টাকা নেই
‘সদিচ্ছার খরা’ (২৮-৯) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলি, গত বছর আর এ বছরে ডিভিসি বাঁধ ও বাংলায় বন্যা সংক্রান্ত খবরে খুব ফারাক নেই: ড্রেজিং হয়নি, বাঁধের জল না ছাড়লে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনা ইত্যাদি। অর্থাৎ অসংখ্য মানুষকে যে বন্যার কষ্ট পেতে হবে, সেটা পূর্ব নির্ধারিত এবং এই পরিস্থিতি মেনে নিতে মানুষকে বাধ্য করা হয়েছে। তবে এ বারের বন্যার বিপদে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়েছে, বাঁধে ড্রেজিং করা সম্ভব নয় আর্থিক কারণে (প্রযুক্তিগত কারণের সঙ্গে)— এই মন্তব্য। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরাট মূর্তি গড়ার টাকা আছে একতার নামে, রাষ্ট্রীয় অনুপ্রেরণায় ধর্মস্থল বানানোর টাকা আছে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আর বন্যা রোখার জন্য টাকা নেই! কী বিচিত্র কথা!
কৌশিক দাস,বেঙ্গালুরু
অপরিষ্কার
শিয়ালদহ স্টেশনের পর বিধাননগরই একমাত্র স্টেশন, যেখানে প্রচুর যাত্রী ওঠানামা করেন। ৩ এবং ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একমাত্র ইউরিনালটি নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে ভীষণ অস্বাস্থ্যকর হয়ে রয়েছে। রেলের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এ দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
তাপস বসু, দোগাছিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy