আবাসন শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের ছোট-বড় জলাশয়গুলি নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে। ফাইল চিত্র।
অদিতি মুখোপাধ্যায়ের ‘বাসযোগ্য পৃথিবীর অঙ্গীকার’ (১৫-৫) শীর্ষক রচনাটিতে যে সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে, তা বর্তমানে বার বার শোনা যাচ্ছে পরিবেশবিজ্ঞানীদের চর্চা, লেখা এবং আলোচনাকক্ষে। কিন্তু বর্তমানের সুসভ্য নাগরিক জীবনে তা কতখানি ঢেউ তুলতে পারছে, চিন্তার বিষয়। আমাদের সন্তানদের জন্য এক সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়ার চিন্তার থেকে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কতখানি মোটা ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, কতগুলো ফ্ল্যাট, ক’খানা গাড়ি এবং কী পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের ব্যবস্থা তাদের জন্য করে যেতে পারা যায়— সেই ব্যাকুলতা। তাই পাশের জলাশয়টি যখন ধীরে ধীরে বুজিয়ে বহুতলের পরিকল্পনা করা হয়, তখন অনায়াসে চোখ বন্ধ করে আমরা হিসাব কষি কী ভাবে একটা ফ্ল্যাট সেখানে বাগানো যায়। আবাসন শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের ছোট-বড় জলাশয়গুলি নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে। আড়িয়াদহ অঞ্চলে বেশ কিছু বছর আগে বড় একটি পুকুর বুজিয়ে তৈরি হয়েছিল বাস স্ট্যান্ড (রুট নং ৪৩/১)। এখন আর কোনও বাসই ছাড়ে না সেখান থেকে। মাঝখান থেকে সেই বড় জলাশয় এবং তার সঙ্গে জড়িত বাস্তুতন্ত্র বেবাক হাওয়া। এমন উদাহরণ অজস্র।
আসলে, এক দিকে যেমন রাষ্ট্রের সদিচ্ছার অভাব, তেমনই অন্য দিকে গণচেতনার অনুপস্থিতি এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। তীব্র দহনে নিদারুণ জলকষ্টে মানুষ যখন শুকিয়ে মরছে, তখন ‘আমার আন্ডারগ্রাউন্ড রিজ়ার্ভার’ তো ভরাই আছে— এই সন্তুষ্টি নিয়ে আমরা অকারণে দশ বালতি জল খরচ করি। ঠিক একই রকম সচেতনার অভাব দেখতে পাওয়া যায় সবুজায়নের ক্ষেত্রে। জলের অভাবে ধুঁকতে থাকা ফুটপাতের গাছটার তলায় রাশি করে ফেলে দিই ঠান্ডা পানীয়ের বোতল, চিপস আর গুটখার প্যাকেট, যেগুলি থেকে দূষণ ছড়ায় মারাত্মক। ডানলপ ব্রিজ থেকে ব্যারাকপুর যাবার পথে বিটি রোডের দুই ধারে ঘন সবুজ শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে একদা যে বিশাল গাছগুলি দাঁড়িয়ে ছিল, তারা আজ উধাও। ওই পথের নিত্যযাত্রীদের এখন অস্বাভাবিক বায়ুদূষণ এবং অসহ্য দৃশ্যদূষণ সহ্য করে রোজ যাতায়াত করতে হয়।
পরিবেশ সম্পর্কে জনজীবনে পর্বতপ্রমাণ উদাসীনতা রয়ে গেছে বলেই না আমাদের চারপাশটা এমন ঊষর, ধূসর হয়ে উঠছে। একের পর এক নির্বাচন আসে যায়। পরিবেশ উন্নয়নের কোনও প্রতিশ্রুতি, কোনও প্রচেষ্টা আমরা দাবি করি না কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। ধীরে ধীরে সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে, আবহাওয়ায় দেখা দিচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। কিন্তু কোথায় সেই সচেতন প্রচেষ্টা? রাজস্থানে ব্যাপক সবুজায়নের প্রয়াস এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রকল্প (যেমন— সৌরবিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবহার, বায়ুশক্তির উপর নির্ভরতা) ধীরে ধীরে মরুভূমির সদম্ভ বিস্তারকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পেরেছে। অথচ, সেই একই সময়ে আমাদের একদা সুজলা-সুফলা পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশকে আমরা এক মহাবিপর্যয়কর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।
গোধূলি চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
দুরবস্থা
মুড়াগাছার সাধনপাড়ার মৃৎশিল্পীদের হাতের কাজ অনেকের ড্রইংরুমের শোভাবর্ধন করে। কাচের শো-কেসের মধ্যে ছোট্ট একচালার দুর্গাপ্রতিমা যতখানি আলো ছড়ায়, ততখানি অন্ধকার এই সব শিল্পীর ঘরে। প্রায় একশো বছরের পুরনো এই কুমোর পাড়ার ৫০-৬০টি মৃৎশিল্পী পরিবার শত অসুবিধার মধ্যেও কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তাঁদের কাজ সে রকম দাম পায় না। এখানকার ছেলেরা কুমোরটুলিতে, দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে কিংবা বেঙ্গালুরুতে কাজ করছেন। মাটি, দড়ি, আটা, খড় সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রতিমার দাম সে ভাবে বাড়েনি আর বিক্রিও বাড়েনি। কারণ বোধ হয় বিপণনের অভাব আর সরকারের উদাসীনতা। প্রতিমা বিক্রির কফিনে শেষ পেরেকটি মেরেছে অতিমারি।
এঁদের স্টুডিয়ো বলতে বাড়ির উঠোন, না হলে বাড়ির সামনের রাস্তা। সমাজমাধ্যম বা টিভি ক্যামেরা এখানে এখনও ঢোকেনি, তাই এঁরা প্রচারের আলোয় আসতে পারেননি। কেন্দ্রীয় সরকার ক’বছর আগে ওঁদের জন্যে শিল্পী-কার্ডের ব্যবস্থা করেছিল। অবশ্য এ জন্য ওঁদের বর্ধমানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। সেই শিল্পী-কার্ড দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকা ঋণ অনেকে পেয়েছিলেন। রাজ্য সরকার বাউল শিল্পীদের ১০০০ টাকা করে ভাতা দেয়। কিন্তু এই প্রতিমা শিল্পীদের জন্য সে রকম কোনও ভাতার ব্যবস্থা রাখেনি।
তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, এঁদের দিকে নজর দেওয়া হোক, যাতে এঁদের পরের প্রজন্মকে ভিনরাজ্যে না যেতে হয়।
রণজিৎ মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া
যত্রতত্র মূর্তি
ইদানীং একটি রেওয়াজ হয়েছে, যেখানে-সেখানে বাংলার প্রণম্য মনীষীদের মূর্তি বসিয়ে দেওয়া। কারা সে সব মূর্তি তৈরির বরাত পেয়ে থাকেন, জানা নেই। তবে পাড়ায়-পাড়ায় বা প্রধান রাস্তার মোড়ে বসানো সেই সব মূর্তি অধিকাংশই বিকৃত দর্শন।
সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে, এমন একটি পুকুরসংলগ্ন প্রমোদ উদ্যানের পাশেই বাস করি। সেখানে বাঁধানো স্তম্ভে ভারত এবং বাংলার মনীষী-সহ কয়েক জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি লাগানো রয়েছে। সঙ্গে আছে কিছু ঠাকুর-দেবতার ছবিও। কতখানি ভক্তি বা শ্রদ্ধা এ ভাবে জানানো যায়, আমার জানা নেই। তবে ওই ছবিগুলির সামনে দাঁড়িয়ে নানা অশালীন এবং অপ্রিয় আচরণের ঘটনা প্রতি দিন দেখতে হয়। আমার মনে হয় এ ভাবে তাঁদের অসম্মানিত করা হচ্ছে। এর আশু প্রতিকার প্রয়োজন।
মানসকুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৭৪
জলের অপচয়
এই নিদারুণ গ্রীষ্মে চার দিকে জলের হাহাকার। পানীয় জলের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন বহু মানুষ। অথচ, বহু দিন ধরে হাওড়া পুরসভা এলাকার শিবপুর বাজার অঞ্চলের রাস্তার কলগুলিতে কোনও স্টপকক লাগানো হয় না। প্রতি দিন তিন-চার বার জল আসে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল নালা দিয়ে বয়ে যায়। পুরসভার নানা কর্মী ভোটার কার্ডের ব্যাপারে বা টিকাকরণের জন্য নিত্য এই সব গলিপথ দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁরা এ সব বিষয়ে উদাসীন। স্থানীয় লোকদেরও কোনও হেলদোল নেই। আগে শুনতাম কলের মুখে স্টপকক লাগালে নাকি চুরি হয়ে যায়। যদিও স্থানীয়দের বক্তব্য, অনেক দিন ধরেই কলে স্টপকক লাগানো হয় না। অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই, যাতে মূল্যবান পানীয় জল নষ্ট না হয়।
শিবপ্রসাদ রায়চৌধুরী, শিবপুর, হাওড়া
ট্রেনে দেরি
আমি গত এক বছর ধরে মুম্বই মেল-এর মান্থলি প্যাসেঞ্জার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী আমাকে ওখানে যেতে হয়। আমি সাধারণত মুম্বই মেল-এই যাতায়াত করি। গত ছ’মাসের মধ্যে এক দিন বোধ হয় মুম্বই মেল সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছে। কিছু দিন আগে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে জানতে পারলাম, ট্রেন তিন ঘণ্টা লেটে ছাড়বে। আটটার ট্রেন ছাড়ল রাত সাড়ে ১১টায়। যখন মুম্বই পৌঁছলাম, তখন ট্রেন প্রায় আট ঘণ্টা লেট। চিকিৎসককে সে দিন দেখাতে পারলাম না।
প্রতি দিন একটা করে বন্দে-ভারত ট্রেনের উদ্বোধন হচ্ছে। বুলেট ট্রেনের কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আমজনতার কাছে বাস্তব চিত্রটা অন্য রকম। এটাই হল বাস্তব ভারত।
মহুয়া বিশ্বাস (খাঁ), বাদকুল্লা, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy