Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

সম্পাদক সমীপেষু: যন্ত্রনির্ভর ও যান্ত্রিক

এ বারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের একশোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

স্মার্টফোন না থাকায় অন্তত ছ’জন গরিব ছাত্রছাত্রী আত্মঘাতী হল। এ দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ছাত্রছাত্রীর অনুপাত মাত্র ২৫ শতাংশ। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ আছে ৮ শতাংশের। অথচ সরকার অনলাইন-শিক্ষা চালু করার কথা ভাবছে বহু আগে থেকে। জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১৯-এ অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে— ক্লাসরুমে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে নিয়মিত ভাব-বিনিময়ের বিকল্প হিসেবে অনলাইন শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ বারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশের একশোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সঙ্গে সঙ্গে আইটি সেক্টরের শিক্ষাপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি বাজার ধরার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ থেকে তিনটি বিষয় স্পষ্ট— এক, সরকার শিক্ষায় তার ব্যয় কমাতে চাইছে। দুই, শিক্ষাক্ষেত্রের একটা বড় অংশের বেসরকারিকরণ চাইছে। তিন, প্রথাগত শিক্ষার পরিকাঠামো গড়ে তোলার দায় ঝেড়ে ফেলে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে ‘গ্রোস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো’কে বাড়িয়ে দেখাতে চাইছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক, সর্বজনীন শিক্ষাকে যেমন মেরে ফেলা হবে, তেমনই প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষক-ছাত্রের চিন্তার আদান-প্রদানের সুযোগ বন্ধ করে এক যন্ত্রনির্ভর মূল্যবোধহীন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হবে।

তপন চক্রবর্তী

কলকাতা-১

বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এক বিস্ময়কর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাতে ‘ক’ অংশে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকি থাকা পরীক্ষাগুলি বাতিল করা হয়েছে। ‘খ’ অংশে বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে যে সব পরীক্ষা দিতে পেরেছে, তার মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরটিকে বাতিল-হওয়া পরীক্ষাগুলোর লিখিত পরীক্ষার নম্বর হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে সাধারণ মানের ছাত্রছাত্রীদের হয়তো ‘সুবিধে’ হবে। কিন্তু যে ছাত্রছাত্রীর বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর জন্য ভাল রকমের প্রস্তুতি ছিল, তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

সবচেয়ে বিতর্কিত জায়গা এই বিজ্ঞপ্তির ‘ঘ’ অংশটি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘যে পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নম্বরে যদি কোনও পরীক্ষার্থী অসন্তুষ্ট হয়, তা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুধুমাত্র ওই পরীক্ষার্থীদের জন্য বাকি বিষয়গুলির লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। ওই পরীক্ষাটিতে যে নম্বর সে পাবে, সেটি চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়।’’ ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করা নেই। করোনা পরিস্থিতি যদি আরও ছয়-সাত মাস স্থায়ী হয়, তবে পরীক্ষা কবে হবে? কলেজে ভর্তির শিক্ষাবর্ষ‌ও তো পার হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা না দিয়ে গড় নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হলে ভবিষ্যতে কাজের জায়গায় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

শঙ্খ অধিকারী

সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

বিকল্প প্রস্তাব

অনেক টানাপড়েনের পর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত থাকা উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি তিন দিনের পরীক্ষা আর হবে না। আগে হয়ে যাওয়া পেপারগুলির মধ্যে যেটিতে প্রাপ্ত নম্বর সর্বোচ্চ, সেটাই না-হওয়া পেপারগুলোর নম্বর হিসেবে গণ্য করা হবে। সুতরাং এক, এই পদ্ধতিতে কেউ ফেল করবে না। যেমন, বিজ্ঞানে ফেল করতে পারে অঙ্ক, ফিজ়িক্স বা কেমিস্ট্রিতে। অঙ্ক আগেই হয়ে গিয়েছে। বাকি দু’টির পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে দুর্বল পরীক্ষার্থীরা সহজেই পাশ। দুই, সায়েন্সের পড়ুয়ারা তাদের মুখ্য দুটো বিষয়ে (ফিজ়িক্স ও কেমিস্ট্রি) পরীক্ষা না দিয়েই উত্তীর্ণ! তিন, ধরা যাক একটি ছাত্র সায়েন্স গ্রুপে বরাবর টেনেটুনে পাশ করে। এ বার বাংলায় সে ৯৩ পেল ও অঙ্কে ৪২। তা হলে ফিজ়িক্স ও কেমিস্ট্রিতেও ৯৩ পেয়ে গেল। অন্য এক জন ফিজ়িক্স-কেমিস্ট্রিতে খুব ভাল, কিন্তু বাংলা-ইংরেজিতে অতটা ভাল নম্বর পায়নি এবং অঙ্কে ৯০ পেল। তা হলে দ্বিতীয় ছাত্রটি প্রথম জনের তুলনায় সায়েন্সে ভাল হওয়া সত্ত্বেও প্রথম জনই কি ফিজ়িক্স/কেমিস্ট্রিতে অনার্স পড়ায় অগ্রাধিকার পাবে? সাহিত্যের নম্বর দিয়ে কি ফিজ়িক্স-কেমিস্ট্রির নম্বর ঠিক হতে পারে?

চার, এ ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন টেস্টে যাচাইয়ের কথা উঠবে। কিন্তু পরীক্ষা নিতে গেলেও সেই ভিড়ের ব্যাপারটাই চলে আসবে। কেউ কেউ বলবেন, অ্যাডমিশন টেস্ট করোনা-পরবর্তী সময়ে নিলেই তো হল। তা হলে সেই সময় তো উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলোও নেওয়া যেত। পাঁচ, যারা পরে বাকি পরীক্ষাগুলো দেবে তাদের রেজ়াল্ট বেরোবে আরও দেরিতে। তত দিনে অনার্সে ভর্তি শেষ। পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বাড়লেও ভর্তির মেধা তালিকায় বিবেচিত হওয়ার সুযোগ থাকল না। ছয়, যারা গত বছর ফিজ়িক্স-কেমিস্ট্রিতে ফেল করে এ বছর পরীক্ষাগুলো দেবে ভেবেছিল, তাদের কী হবে?

এ ক্ষেত্রে আগে হয়ে-যাওয়া পরীক্ষাগুলোর মধ্যে পাওয়া সর্বোচ্চ নম্বরটির পরিবর্তে বাকি পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে পুরো নম্বর দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। ভুল প্রশ্ন চেষ্টা করলে যেমন পুরো নম্বর দেওয়া হয়। আরও একটা বিষয় বিবেচনা করা যায়। সরকার ঘোষিত নিয়মে বলা হয়েছে, যারা পরে পরীক্ষায় বসবে তাদের পরীক্ষাপ্রাপ্ত নম্বরই ধার্য হবে। প্রস্তাব হল, পরীক্ষা না দিয়ে পাওয়া নম্বর এবং পরে পরীক্ষা দিয়ে পাওয়া নম্বর, দু’টির মধ্যে যেটি বেশি সেটাই ধার্য হোক।

সব শেষে বলব, পরীক্ষা কেন্দ্র ও ইনভিজিলেটরের সংখ্যা বাড়িয়ে, পরীক্ষা শুরুর আগে ও পরে এক ঘণ্টা যান নিয়ন্ত্রণ করে সরকার কিন্তু বাকি পরীক্ষাগুলো নিতেই পারত।

কল্যাণ বসু

শিক্ষক, আগরপাড়া নেতাজি শিক্ষায়তন (উ.মা.)

স্কুল শুরু হোক

১৬ মার্চ থেকে একটানা গৃহবন্দি ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থার দিকে এ বার একটু নজর দিন। তাদের আর অবসাদ, ভীতি, আশঙ্কা, উদ্বেগে না রেখে মুক্ত করুন। চার দিকের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি, জানি। সুরক্ষিত থাকাই এখন প্রধান কাজ। কিন্তু কোভিড কি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেই হবে? অফিস-কাছারি খোলা হয়েছে। এখন যে বাচ্চাটিকে স্কুলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, তার মা-বাবা আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে তার কি কোভিড হতে পারে না?

আমার মনে হয়, সপ্তাহে এক দিন করে হলেও বিধিনিষেধ মেনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হোক। ক্লাসরুম, শিক্ষক, তাঁদের কথা, পড়ানো, ভালবাসাই পারে ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে দিতে।

সন্তানের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে মা-বাবা ভাবছেন ছেলেমেয়ে পড়ছে। অথচ অনলাইন গেম, ও নেট-দুনিয়ার নানা রঙিন ফাঁদে পড়ে নষ্ট হচ্ছে তাদের পড়াশোনা। অবসাদের শিকার হচ্ছে তারা। তাই ধীরে হলেও সচল করুন শিক্ষার গাড়ি।

মৌমিতা দাস

চুঁচুড়া, হুগলি

দূরত্বও দেখুন

প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজের জেলায় বদলির ঘোষণা এ বার বাস্তবায়িত হবে। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা খুবই উপকৃত হবেন। কিন্তু জেলা না দেখে যদি দূরত্ব দেখা হত তা হলে তাঁরা বেশি উপকৃত হতেন। কোনও এক শিক্ষক হয়তো পাশের জেলার প্রান্তিক স্কুলে চাকরি করেন, বাড়ি থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার। তিনি নতুন নিয়মের ফলে বদলি হতে পারবেন নিজের জেলার নিকটস্থ স্কুলে। কিন্তু একই জেলার অন্তর্গত হওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করা এক জন শিক্ষিকা বদলি হতে পারবেন না। তাই জেলা থেকে জেলায় বদলির পাশাপাশি দূরত্ব অনুযায়ী বদলি চালুর মানবিক আবেদন জানাচ্ছি।

আগমনী দাস

সাঁইতাড়া, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Online Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy