অতিমারির জন্য আজ প্রায় সাত মাসের উপর ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ। অন্য দিকে, সরকার শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন বাদে আর সমস্ত গণপরিবহণ চালু করেছে। সম্প্রতি লোকাল ট্রেন চালানো নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। অতি ব্যস্ত কিছু শাখায় ৪০-৫০ শতাংশ আর কম ব্যস্ত শাখায় ১৫-২০ শতাংশ থাকতে পারে। বাস, মেট্রো বা শপিং মলে যে ভিড় দেখা যাচ্ছে, তাতে কি করোনার ভয় নেই? কলকাতার একটি জুতোর দোকানে ভিড়ের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তার পরেও যদি সেই সমস্ত দোকান, শপিং মল, রেস্তরাঁ খোলা থাকে, তা হলে লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে এই বঞ্চনা কেন? এত দিন ট্রেন বন্ধ থাকায় শহরতলি ও গ্রাম থেকে যে বাসগুলি বড় শহরে যায়, তাতে যে ভিড় হয়, তা কি যথেষ্ট ভয়ের নয়? অন্য পরিবহণের যা ভাড়া, তা দিয়ে যাতায়াত করা গরিব মানুষের কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছতে লোকাল ট্রেনই একমাত্র ভরসা।
করোনা অতিমারিই যদি লোকাল ট্রেন বন্ধ করার একমাত্র কারণ হয়ে থাকে, তা হলে সরকার এ বছর পুজো এবং বিসর্জনের অনুমতি দিল কী ভাবে? শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সামলানো গিয়েছে। আবার এই আদালতের রায়ের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী, খাবার বিক্রেতাদের কথা, যাঁদের উপার্জনের রাস্তা বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে ছোট ছোট স্টল দেওয়া। তা হলে তো এটাও ভাবা উচিত ছিল, যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করতেন লোকাল ট্রেনে ফিরি করে, তাঁদের অবস্থা এখন কেমন? সরকার এঁদের নিয়ে কী ভাবছে? লোকাল ট্রেন বন্ধ মানে শুধু একটি গণপরিবহণ বন্ধ নয়, অজস্র মানুষের রোজগারও বন্ধ।
শুভজিত দাস
হাসনাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা
ছন্দে ফেরা
আনলক পর্বে যখন টোটো থেকে উড়ান সবই চলছে, তখন লোকাল ট্রেন এত দিন চলল না কেন? ইচ্ছে করে কেউ ভিড় করে না। ভিড় কমাতে হলে ট্রেন এবং কোচের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে অফিস টাইমে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনগুলিকে থামানো দরকার। কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম আয়ের স্টেশন বলে চিহ্নিত করা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উচিত নয়। ছোট স্টেশনের স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা কি তবে ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে?
লোকাল ট্রেন না চলার জন্য অসহায় মানুষের কষ্টে আমরা সমব্যথী। বিশেষ করে রিকশা চালক, হকার, বেসরকারি কর্মচারী, ছোট দোকানদার, যাঁরা ব্যয়বহুল যাতায়াত করে কাজ টিকিয়ে রাখতে পারেননি, তাঁদের কথা মানবিক দৃষ্টিতে বিচার করে অবিলম্বে ট্রেন চালানো হোক। মানুষের জীবনে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসুক। ট্রেনে উঠতে মরিয়া মানুষকে পিটিয়ে নয়, তাঁদের পেট চালানোর ব্যবস্থা করে শান্তি ফিরুক।
তাপস কুমার ভট্টাচার্য
সম্পাদক, হালিশহর রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন
কিছু প্রস্তাব
লোকাল ট্রেনে ভিড় কমাতে কয়েকটি প্রস্তাব রইল। ১) লোকাল ট্রেন প্রতিটি স্টেশনে না থেমে তিন-চারটি স্টেশন অন্তর দাঁড়াক। পরের ট্রেনটি অন্য স্টেশনগুলিতে দাঁড়াক। এ ভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ট্রেন চলুক। লক্ষ রাখতে হবে পর পর ট্রেনগুলি একই স্টেশনে না দাঁড়িয়ে যেন তিন-চারটে স্টেশন অন্তর দাঁড়ায়। প্রতিটি স্টেশনেই যেন দু’তিনটে ট্রেন পেরিয়ে যাওয়ার পর একটি করে ট্রেন দাঁড়ায়।
২) নিত্যযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে লোকাল ট্রেন চালু হোক। সেই সমস্ত ট্রেনের যাত্রীদের মান্থলি টিকিট ছাড়া অন্যদের স্টেশনে প্রবেশ নিষেধ করুক রেল প্রশাসন।
৩) ট্রেনের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক হকার প্রয়োজনীয় কোভিড বিধি মেনে উঠানামা করুন। ৪) যাঁরা নিত্যযাত্রী নন, তাঁদের জন্য অন্য সময়ে ট্রেন চলুক। সেই ট্রেনে যেন নিত্যযাত্রীদের প্রবেশাধিকার না থাকে। ৫) এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণবিধি চালু করে লোকাল ট্রেনের ভিড় অনেকখানি কমানো যাবে।
কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
পাঁচ ঘণ্টা
আমি এক জন বেসরকারি সংস্থার কর্মী। যাতায়াতের জন্য নির্ভর করি লোকাল ট্রেনের উপরে। গত জুন মাসে যখন আমার অফিস শুরু হল, প্রথমটা ভেবেছিলাম অনেকেই তো সড়কপথের উপর নির্ভর করেই যাতায়াত করছে, আমিও পারব। প্রথম ১৫ দিন গেলামও অফিস। দত্তপুকুর থেকে গিরীশ পার্ক বাসে যেতেই সময় লাগল ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। অতএব যাওয়া-আসা মিলিয়ে লাগল ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। উপরন্তু বাস-অটো মিলিয়ে প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা খরচও হল।
কিন্তু বাসের সেই ছবি আজও চোখে ভাসে। কোথায় পারস্পরিক দূরত্ব? এক জন আর এক জনের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আর অটোওয়ালাদের দাদাগিরি তো আছেই। সন্ধ্যা ৮টার পর বারাসত থেকে দত্তপুকুরের ভাড়া চায় ৫০ টাকা। এই রকম ভাবে নাজেহাল হওয়ার কি কোনও মানে আছে? শুধুমাত্র সরকারি কর্মীদের জন্য না করে সর্বসাধারণের জন্য লোকাল ট্রেন চালু হলে সবাই উপকৃত হবেন।
পরাশর চট্টোপাধ্যায়
দত্তপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা
স্টেশনে দরজা
সরকারি বাস, পাবলিক বাস এবং অন্য যাত্রিবাহী গাড়িগুলিতে যে ভাবে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহণ হয়, তাতে যদি করোনার ভয় না থাকে, তা হলে কি শুধু লোকাল ট্রেন চালালে করোনা বাড়বে? এই জুজু দেখিয়ে কত দিন দেশের লাইফলাইন বন্ধ থাকবে? কেন মানুষ এই ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন? উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি ট্রেন চলে, তা হলে কোনও সমস্যা হয় না। প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে আসা-যাওয়ার চারটি করে গেট থাকবে, এবং প্রত্যেকটি দরজার সঙ্গে স্যানিটাইজ় করার মেশিন লাগানো থাকবে। কঠোর ভাবে ওই দরজাই ব্যবহার করা বিধেয়। সরকার ইগোর লড়াইয়ে না নেমে সাহসী পদক্ষেপ করুক।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
পালা করে থামুক
শিয়ালদহ ডিভিশনের মেন এবং নর্থ সেকশনের প্রবল যাত্রীর চাপ নিয়ন্ত্রণে গ্যালপিং ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি শোনা যাচ্ছে। আপ ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে শিয়ালদহ থেকে যে ট্রেন ছাড়ছে, তার একটি বিধান নগর এবং পরেরটি দমদম স্টেশনে, এ ভাবে পালা করে থামানো যেতে পারে। উদ্দেশ্য, শিয়ালদহের ভিড় যে ট্রেন পেল, তা বিধান নগর বা দমদম— এই দুই স্টেশনের মধ্যে শুধুমাত্র একটির ভিড়ই বহন করবে। মেন বা বনগাঁ শাখায় শহরতলির স্টেশনে গ্যালপিং-এর থেকেও বেশি প্রয়োজন বিধান নগর বা দমদমের ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করা। অত্যধিক গ্যালপিং করলে বরং সেই সব স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। এ ছাড়াও বিধান নগরকে প্রান্তিক স্টেশন করে অফিস টাইমে কিছু আপ ট্রেনও চালানো যেতে পারে।
আপ ট্রেনের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা চললেও ডাউন ট্রেনের ক্ষেত্রে ভিড় নিয়ন্ত্রণে অন্য উপায় নেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে মেন এবং বনগাঁ শাখায় স্বল্প দূরত্বের যে সব লোকাল চলে, সেগুলির সংখ্যা বাড়ানো উচিত। অর্থাৎ, ব্যারাকপুর-শিয়ালদহ এবং বারাসত-শিয়ালদহ সকালের ব্যস্ত সময়ে যতটা সম্ভব চালাতে পারলে, বিরাট সংখ্যক মানুষ সহজেই শহরে চলে আসবেন এবং দূরবর্তী স্টেশনের যাত্রীরাও পরোক্ষ ভাবে এর সুবিধা পাবেন। কারণ সেই সব ট্রেনেও ভিড় অপেক্ষাকৃত কম থাকবে। ডাউনের ক্ষেত্রে বিধান নগর এবং দমদমে সমস্ত ট্রেনকেই দাঁড় করানো উচিত।
রতন কুমার দে
কলকাতা-১০৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy